—প্রতীকী চিত্র।
বিজেপি-র দুই কর্মাধ্যক্ষকে নিয়ে চলছে তৃণমূলের পঞ্চায়েত সমিতি!
ঝাড়গ্রাম জেলার বেলিয়াবেড়া ব্লক তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণে এমন পরিস্থিতি। গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দিন-দিন প্রকট হলেও তা থামাতে গিয়ে কার্যত হিমসিম খাচ্ছেন তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে বেলিয়াবেড়া পঞ্চায়েত সমিতির ১৭টি আসনের ১১ টিতে জয়ী হয় তৃণমূল। বাকি ছ’টি আসন পায় বিজেপি। কিন্তু নির্বাচিত সদস্যদের মধ্যে ৯ জন কর্মাধ্যক্ষ নির্বাচনের সময়ে দেখা যায় উলটপুরাণ। তৃণমূলের সাত জন কর্মাধ্যক্ষ হলেও বিজেপি-র দুই নির্বাচিত সদস্য সঞ্জিত মুর্মু বন-ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এবং গৌতম সিংহ বিদ্যুৎ কর্মাধ্যক্ষ হয়ে যান। এর কারণ ব্লক তৃণমূলের গোষ্ঠী-কোন্দল। যদিও ওই সময় পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কালীপদ সুর দাবি করেছিলেন, সঞ্জিত ও গৌতম তৃণমূলে যোগ দেবেন। ব্লক তৃণমূলের সভাপতি টিঙ্কু পালের দাবি, বিজেপির দুই নির্বাচিত সদস্য তৃণমূলে যোগ দেননি। বিজেপিকে সঙ্গে নিয়েই মিলিজুলি পঞ্চায়েত সমিতি চলছে।
কোন্দল শুরু হয়েছিল ২০১৪ সালে। তখন বেলিয়াবেড়া ব্লক তৃণমূলের সভাপতি ছিলেন স্বপন পাত্র। স্বপন এখন জেলা পরিষদের সদস্য। ২০১৪ সালে স্বপনকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে কালীপদ সুরকে সেই দায়িত্ব দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৎকালীন ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের রোষে পড়ে স্বপন জেলা সভাপতির পদ হারিয়েছিলেন বলে দলের অন্দরেই গুঞ্জন ওঠে। ২০১৮-র পঞ্চায়েত ভোটে বেলিয়াবেড়া পঞ্চায়েত সমিতি দ্বিতীয় বারের জন্য দখল করে তৃণমূল। শাসকদলের নির্বাচিত ১১ জন সদস্যের মধ্যে ৯ জন কালীপদ সুর গোষ্ঠীর এবং দু’জন স্বপন পাত্রের অনুগামী। সেই কারণে স্বপন-গোষ্ঠীর শর্বরী অধিকারী ও শক্তিপদ বারিককে কর্মাধ্যক্ষ করা হয়নি বলে অভিযোগ। এর কারণ অবশ্য, বেলিয়াবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি সদস্যদের সমর্থন নিয়ে স্বপনের অনুগামী নির্দল সদস্য তপন শীট প্রধান নির্বাচিত হয়ে যান।
স্বপন-কালীপদ গোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের জেরে বারে বারেই অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব। লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কালীপদকে ব্লক সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দিয়ে স্বপনের অনুগামী টিঙ্কু পালকে ব্লক সভাপতির দায়িত্ব দেন। কিন্তু তার পরে গোষ্ঠীকোন্দল আরও তীব্র হয়েছে। কালীপদ ও টিঙ্কু ব্লকে সমান্তরাল ভাবে দল চালাচ্ছেন বলে নিচুতলার কর্মীরা অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগ করছেন। প্রায়ই দুই গোষ্ঠীর কর্মীদের মধ্যে গোলমাল, বোমাবাজি, রক্তারক্তি কাণ্ড ঘটছে। একই দিনে দুই গোষ্ঠীর পৃথক দলীয় কর্মসূচিও হচ্ছে। কয়েকদিন আগে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঝাড়গ্রামে দলীয় বৈঠকে এসে কালীপদকে ব্লকের চারটি অঞ্চলের সাংগঠনিক দায়িত্ব দিয়েছেন। বাকি তিনটি অঞ্চলের দায়িত্ব সামলাবেন টিঙ্কু। কিন্তু তার পরেই পঞ্চায়েত সমিতির বিরুদ্ধে বেলিয়াবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বিডিওকে স্মারকলিপি দিয়েছে টিঙ্কু গোষ্ঠীর অঞ্চল কমিটির নেতা-কর্মীরা।
ব্লক সভাপতি টিঙ্কু পালের অভিযোগ, ‘‘বিজেপিকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চায়েত সমিতি চলছে। বার বার এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।’’ অন্যদিকে, পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি কালীপদ বলেন, ‘‘বেলিয়াবেড়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বিজেপি-র সমর্থন নিয়ে বোর্ড হয়েছে। ওখানে বিজেপি-র সদস্যরা তো তৃণমূলে যোগ দেননি। তাই আমরাও পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি-র দুই সদস্যকে কর্মাধ্যক্ষ করেছি।’’
জেলা তৃণমূলের সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘বিষয়টি মহাসচিবের নজরে রয়েছে। বেলিয়াবেড়া ব্লকে দলের সবাইকে একযোগে কাজ করতে বলা হয়েছে।’