সোমবার কেশিয়াড়ি ব্লক তৃণমূল কার্যালয়ে অঞ্চল কমিটির ঘোষণা ব্লক সভাপতি শ্রীনাথের। রবিবার সন্ধ্যায়। নিজস্ব চিত্র
কোচবিহার থেকে সোমবার অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছেন জন সংযোগ যাত্রা। পঞ্চায়েত ভোটে দলের প্রার্থী নির্বাচন থেকে শুরু করে গোষ্ঠী দ্বন্দ্বে রাশ টানাই তাঁর এই কর্মসূচির লক্ষ্য। এরই মধ্যে অস্বস্তি বাড়াল কেশিয়াড়ি। কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে তৃণমূলের দু’পক্ষ ঘোষণা করল কেশিয়াড়ির একাধিক অঞ্চল কমিটির তালিকা। কোন পক্ষের ঘোষিত অঞ্চল কমিটিগুলি বৈধ! ধোঁয়াশা কাটছে না তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে। এই কেশিয়াড়ি থেকেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় জন সংযোগ যাত্রা শুরু করার কথা অভিষেকের।
তৃণমূল সূত্রে খবর, ১০ এপ্রিল রাজ্য তৃণমূল ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ পৌঁছেছিল জেলা ও ব্লক নেতৃত্বের কাছে। সেখানে সাফ জানানো হয়েছিল, ১৭ এপ্রিলের মধ্যে ব্লক কমিটি ও ২৪ এপ্রিলের আগে অঞ্চল কমিটি গঠন করতে হবে। নির্দেশ মতো জেলার প্রতিটি ব্লক কমিটি গঠন করে। তবে কেশিয়াড়ির ৯টি অঞ্চল কমিটির নাম ঘোষণা ঘিরে রীতিমতো নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হল। রবিবার সন্ধ্যায় বিধায়ক পরেশ মুর্মুর মনোনীত একটি অঞ্চল কমিটি অনুমোদন করেন জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা। জেলা দলীয় কার্যালয়ে বসে সেই কমিটি ঘোষণা করেন সুজয় নিজেই। পাশে ছিলেন পরেশ। প্রতিটি অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতির নাম বলার সঙ্গে তাঁদের পরিচয়ও করানো হয়। তবে ব্লকের ন’টি নয়। ঘোষণা করা হয় আটটি অঞ্চল কমিটির নাম (লালুয়া অঞ্চল কমিটির নাম ঘোষণা হয়নি)। নাম ঘোষণার পর সুজয় বলেন," যাঁরা অঞ্চল সভাপতি হলেন এবং যাঁরা নতুন পদাধিকারী হলেন তাঁদের ধন্যবাদ এবং শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আগামী দিনে তাঁরা দলের সিদ্ধান্ত ও কর্মসূচি মেনে কাজ করবেন। বাকি অঞ্চল কমিটি দুদিনের মধ্যে ঘোষণা হবে।" রবিবার সন্ধ্যায় ঘোষিত অঞ্চল কমিটি সিলমোহর পেয়েছে জেলা তৃণমূলের। তারপরেই সোমবার কেশিয়াড়ি ব্লক সভাপতি শ্রীনাথ হেমব্রম ফের পৃথক অঞ্চল তৃণমূলের কমিটিগুলির তালিকা ঘোষণা করেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্য নয়টি অঞ্চল কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
কেন এই বিভাজন ? শ্রীনাথ বলেন," দলের নির্দেশে জেলা কো অর্ডিনেটর অজিত মাইতিকে জানিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ব্লক সভাপতি ব্যতীত কে, কারা কমিটি ঘোষণা করেছে আমি জানি না। সে নিয়ে কিছু বলতে পারব না। অঞ্চল কমিটি তো ব্লক সভাপতি গঠন করবেন।" প্রশ্ন উঠছে সামনেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে দুই তরফে পৃথক অঞ্চল কমিটি ঘোষণা কেন ? কোন কমিটি নির্বাচনে কাজ করবে ? নীচুতলার কর্মীরা নেতৃত্বদের এমন আচরণে হতাশ। কমিটি গঠন নিয়ে বিধায়ক পরেশ বলেন," দলের নির্দেশ মতোই নিয়ম অনুযায়ী কমিটি ঘোষণা হয়েছে। জেলা সভাপতি অনুমোদন করে নিজে ঘোষণা করেছেন। পুরনো কর্মীদের রেখেই কমিটি হয়েছে। জেলা সভাপতিকে না জানিয়ে ও অনুমোদন না নিয়ে যারা অঞ্চল কমিটি ঘোষণা করলেন সেটা অবৈধ।" বিধায়কের দাবি, এর আগে যে ব্লক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে দলের অনুমোদন না থাকায় সেটারও বৈধতা নেই। জানা গেছে, গত ১৭ এপ্রিল জেলার প্রতিটি ব্লক কমিটি ঘোষণা করে। জেলার অন্যান্য ব্লক সভাপতি জেলা কার্যালয়ে গিয়ে কমিটির বৈধতা জেলা সভাপতির কাছ থেকে আদায় করলেও কেশিয়াড়ি ব্লক সভাপতি ছিলেন না। ফলে দিন যত গড়াচ্ছে কেশিয়াড়িতে দ্বন্দ্ব বাড়ছে।
দু’পক্ষ পৃথক ভাবে অঞ্চল কমিটিগুলির নাম ঘোষণা করল কেন? জেলা তৃণমূলের সভাপতি সুজয় হাজরা সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার ফোনটি বেজে গিয়েছে। টেক্সট মেসেজেরও জবাব মেলেনি। অন্যদিকে জেলা তৃণমূলের কো অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন," ঘটনাটা আমি শুনিনি। খোঁজ নিয়ে আমাকে জানতে হবে। বিধায়ক, সভাপতিকে ডেকে কথা বলব।"
বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিজেপি। বিজেপির পশ্চিম মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলার সাধারণ সম্পাদক গৌরীশংকর অধিকারী বলেন, ‘‘তৃণমূল আর বেশিদিন নেই। তাই যতটুকু সময় আছে সকলে মিলে কাটমানি খেতে তৈরি হচ্ছে।’’