কালীপদ সোরেন। —ফাইল চিত্র।
লক্ষ্য কি এ বার রেল নিয়ে জঙ্গলমহলে বিজেপিকে বেলাইন করার কৌশল! লোকসভায় প্রথম বক্তব্যেই ঝাড়গ্রামের সাংসদ কালীপদ সরেন রেল সংক্রান্ত কৌশলী দাবি তোলার পরে এমনই আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে।
তৃণমূলের একাংশের মতে, প্রথম দিনই ‘ছক্কা’ হাঁকিয়েছেন সাংসদ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদেরও অনুমান, বিধানসভা ভোটের আগে জঙ্গলমহলে বিজেপিকে কোণঠাসা করতেই প্রথম দিনে রেলের দাবি সামনে এনেছেন কালীপদ। বৃহস্পতিবার লোকসভায় ঝাড়গ্রাম-বারিপদা রেলপথের দাবিতে সওয়াল করে কালীপদ জানান, তাঁর সংসদীয় এলাকার বহু প্রতীক্ষিত দাবি পূরণ হয়নি। এরপরই সাংসদ ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের প্রচারে সর্বভারতীয় দলের (নাম না-করে বিজেপির কথা বলতে চেয়েছেন সাংসদ) নেতাদের প্রতিশ্রুতি মনে করিয়ে দেন। বান্দোয়ান-ঝাড়গ্রাম-গোপীবল্লভপুর-বারিপদা রেল সংযুক্তির দাবিও তোলেন।
বান্দোয়ান থেকে ঝাড়গ্রাম এবং গোপীবল্লভপুর-বারিপদা রেলপথের দাবি করেছেন কালীপদ। ঝাড়গ্রাম-বান্দোয়ান রেলপথের দাবি বহুদিনের। আবার গোপীবল্লভপুর, নয়াগ্রাম হয়ে ওড়িশার বারিপদা পর্যন্ত রেলপথের দাবিতে রেল ও প্রশাসনিক মহলে স্থানীয়স্তর থেকে বহুবার গণ-স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের প্রচারে তৎকালীন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন গোপীবল্লভপুর-বারিপদা রেলপথের প্রতিশ্রুতি দেন, যা বাস্তবায়িত হয়নি। ওই রেলপথের সমীক্ষার জন্য বাজেটে টাকাও বরাদ্দ হয়নি। ওই রেলপথের দাবিতে ‘সুবর্ণরৈখিক রেলপথ সংগ্রাম কমিটি’ নামে একটি অরাজনৈতিক গণ সংগঠনে আন্দোলন চলছে।শুক্রবার দিল্লি থেকে ফোনে কালীপদ বলেন, ‘‘রেল সংক্রান্ত আরও অনেক দাবি রয়েছে। সেগুলিও লোকসভায় উত্থাপন করব।’’ কালীপদ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, লালগড়ে রেলপথের স্বপ্ন ছিল তাঁর নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সে বিষয়েও লোকসভায় দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান সাংসদ।
মনে করা হচ্ছে, আগামী দিনে জঙ্গলমহলে রেলের দাবিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা নিচ্ছে তৃণমূল। তারই সূচনা করেছেন সাংসদ। ঝাড়গ্রাম জেলা তৃণমূলের সহ-সভাপতি প্রসূন ষড়ঙ্গী মানছেন, ‘‘আগামী দিনে দল এই দাবিতে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে যাবে।’’ ঝাড়গ্রামের প্রাক্তন সাংসদ কুনার হেমব্রম লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছেন। কুনার বলছেন, ‘‘কেন্দ্রের সদিচ্ছা থাকলে অলাভজনক রেলপথও করতে পারে। সাংসদ থাকাকালীন ঝাড়গ্রাম-পুরুলিয়া রেলপথ সমীক্ষায় টাকা বরাদ্দ হয়েছিল। ফান্ড রিলিজ় হয়নি। সমীক্ষাও হয়নি।’’
জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘আমাদের সাংসদও লোকসভায় রেলপথের এই দাবি তুলেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের অসহযোগিতায় জমিজটে প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়। এখন তৃণমূল বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করতে চাইছে।’’ দেবাশিস মনে করাচ্ছেন, ২০১৯-২৪ পর্বে বিজেপির সাংসদের আমলে ঝাড়গ্রামে রেলের তৃতীয় লাইন হয়েছে। ঝাড়গ্রাম স্টেশনকে অমৃত ভারত স্টেশনের আওতায় আনা হয়েছে। দূরপাল্লার একাধিক ট্রেনের স্টপ হয়েছে। ঝাড়গ্রাম-টাটা শাখায় প্রতিটি স্টেশনের নাম সাঁওতালি ভাষায় অলচিকি লিপিতে
লেখাও হয়েছে।