স্লোগান দিচ্ছেন বিধায়ক। নিজস্ব চিত্র
বিজেপি কর্মীদের অনুরোধে গাড়ি থেকে নামলেন তৃণমূলের বিধায়ক। হাতে রাখি পরলেন। জয় শ্রীরাম স্লোগান তুললেন বিজেপি কর্মীরা। কিছুক্ষণ থেমে হাসি মুখে গলা মেলালেন বিধায়কও। বলে উঠলেন, ‘‘আমিও বলছি জয় শ্রীরাম।’’
ঘাটালের তৃণমূল বিধায়ক শঙ্কর দোলইয়ের এমন আচরণের ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। আর তারপরই জল্পনা শুরু হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের রাজনৈতিক মহলে। ঘটনাক্রম বলছে, কয়েক মাস ধরে দলের অন্দরে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন শঙ্কর। ঘাটলের তৃণমূল সাংসদ দেবের অনুগামীদের সঙ্গে শঙ্কর শিবিরের ঠান্ডা লড়াই চলছে বহু দিন ধরেই। সেই প্রেক্ষিতে বহু ক্ষেত্রেই পিছু হটতে হয়েছে শঙ্কর অনুগামীদের। সোমবার ঘাটাল কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের ক্ষমতাও হাতছাড়া হয়েছে শঙ্করের। জয় পেয়েছেন সাংসদ অন অনুগামীরা।
তারপরই সোমবারের এই ঘটনা। আর মঙ্গলবার শঙ্করের মুখে রামনামের ভিডিয়ো ভাইরাল হতেই জল্পনা শুরু হয়েছে। কারও প্রশ্ন, তবে কি বিজেপি-র দিকে পা বাড়াচ্ছেন ঘাসফুলের বিধায়ক! কারও আবার মত, রাম-নাম জপে আদতে দলের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছেন শঙ্কর।
শঙ্কর নিজে অবশ্য এ নিয়ে বিতর্কের কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, “রাম তো ভগবান। ফলে, জয় শ্রী রাম উচ্চারণে অন্যায় কোথায়?” আর বিজেপির ঘাটাল সাংগাঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্যের ব্যাখ্যা, “জয় শ্রীরাম কোনও দলের স্লোগান নয়। দেরিতে হলেও শঙ্করবাবু বিষয়টি বুঝেছেন। ওঁকে ধন্যবাদ।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে এখনই কোনও মন্তব্য করব না। ঠিক কী হয়েছিল জানছি।’’
বস্তুত, গত লোকসভা ভোটের সময় এই জয় শ্রীরাম স্লোগান ঘিরে বারবারই রাজনৈতিক চাপানউতোর তৈরি হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরেরই চন্দ্রকোনার রাধাবল্লভপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কনভয় লক্ষ করে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান বলা নিয়ে হইচই পড়েছিল। গাড়ি থেকে নেমে মুখ্যমন্ত্রী নিজে তার প্রতিবাদ করেছিলেন। ঘটনায় পুলিশ কয়েক জনকে আটকও করেছিল। সেই জেলারই এক তৃণমূল বিধায়কের মুখে আবার জয় শ্রীরাম স্লোগান আলোড়ন ফেলেছে।
শঙ্কর ঘনিষ্ঠদের সূত্রের খবর, সোমবার মূলগ্রামের বাড়ি থেকে শঙ্কর রাখি বন্ধন উপলক্ষে ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। বরদা চৌকান লাগোয়া রানিরবাজার এলাকায় বিজেপি কর্মীরা তাঁর পথ আটকান। শঙ্কর অবশ্য হাসিমুখে গাড়ি থেকে নামেন। বিজেপি কর্মীরা জয় শ্রীরাম স্লোগান দিতে দিতেই বিধায়কের হাতে রাখি পরিয়ে দেন। শঙ্করও তখন প্রকাশ্য রাস্তায় বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিতে থাকেন। বিজেপির এক স্থানীয় নেতা বলছিলেন, “ওঁকে রাখি পরানোর জন্যই গাড়ি থামিয়েছিলাম। তবে তৃণমূল বিধায়কের মুখে জয় শ্রীরাম শুনে আমরাও হবাক হই।”
তৃণমূলের দলীয় সূত্রে খবর,কয়েক মাস ধরে তাঁর নিজের গড়ে পুরোপুরি কোণঠাসা শঙ্কর। ঘাটালে এখন সক্রিয় সাংসদ দেবের অনুগামীরা। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী নিয়োগে বিরোধিতা করেও রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশে পিছু হটতে হয়েছে বিধায়ককে। রাজ্য নেতাদের নির্দেশে কৃষি ও গ্রামোন্নয়ন ব্যাঙ্কের সভাপতির পদ থেকেও তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। ব্যাঙ্কের ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছে সাংসদ গোষ্ঠী। শুধু তাই নয়, ঘাটাল ব্লকে একাধিক পঞ্চায়েত-সহ ব্লক স্তরের বহু নেতা শঙ্করকে ছেড়ে সাংসদ শিবিরে ভিড়েছেন। কয়েকদিনের মধ্যেই সাংসদ দেবের ঘাটালে আসার কথা। ব্যাঙ্কের নতুন কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দেবেন তিনি। এই পরিস্থিতিতে শঙ্করের মুখে রাম-নাম তৃণমূলের অন্দরেই আলোড়ন ফেলে দিয়েছে।