Chandrakona Road

গেরুয়া মিছিলের মুখ তৃণমূলের নেতারাও

চন্দ্রকোনা রোডের বাসস্ট্যান্ড, চৌরাস্তা মোড় হয়ে পঞ্চায়েত অফিস রাস্তা ঘুরে বিদ্যাসাগর মঞ্চের সামনে এসেই শেষ হয় ওই মিছিল।

Advertisement

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য

চন্দ্রকোনা রোড শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০২৪ ০৯:২৭
Share:

মিছিলে তৃণমূল ও বিজেপির নেতা-কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র ।

বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপরে নির্যাতন নিয়ে সরব হয়েছে কেন্দ্র সরকার। এই নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, স্পর্শকাতর এই বিষয়ে কেন্দ্র সরকারের বিদেশ নীতিকেই সমর্থন করবেন তাঁরা। এই নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চলছে প্রতিবাদ কর্মসূচি। পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডে তেমনই এক প্রতিবাদ কর্মসূচিতে একসঙ্গে হাঁটতে দেখা গেল বিজেপি ও তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।

Advertisement

রবিবার বিকেলে চন্দ্রকোনা রোডে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার ও সনাতনী নেতা চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারির প্রতিবাদে আরএসএস ঘনিষ্ঠ হিন্দু সেবা সমিতির ডাকা মিছিলে দেখা গিয়েছে ওই ব্যতিক্রমী ছবি। সেই অনেকের হাতে ছিল জাতীয় পতাকা। 'জয় শ্রীরাম' লেখা পতাকাও দেখা গিয়েছে।

মিছিল শুরু হয় স্থানীয় বিদ্যাসাগর মঞ্চ সংলগ্ন বজরংবলী মন্দিরের সামনে থেকে। আয়োজক সংগঠনের ব্যানার সামনে রেখে মিছিল এগোয়। ছিলেন আরএসএসের শাখা সংগঠন হিন্দু জাগরণ মঞ্চের নেতা পারিজাত চক্রবর্তী, বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিশ্র, বিজেপির এসসি মোর্চার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক মদন রুইদাস, জেলা নেতা আকাশদীপ সিংহ, গৌতম কৌড়ি-সহ গেরুয়া শিবিরের অনেক পরিচিত মুখ। তাঁদের সঙ্গে পা মেলান তৃণমূলের জেলা সম্পাদক রাজীব ঘোষ, ব্লক নেতা তথা শঙ্করকাটা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জ্ঞানাঞ্জন মণ্ডল, সাতবাঁকুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান মণিকাঞ্চন রায়, যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি মানস নায়েক, পঞ্চায়েত সমিতির শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ দোলন হাজরা কর, শিক্ষক নেতা স্মৃতিরঞ্জন দত্ত, প্রসেনজিৎ ভুঁইয়া প্রমুখ।

Advertisement

চন্দ্রকোনা রোডের বাসস্ট্যান্ড, চৌরাস্তা মোড় হয়ে পঞ্চায়েত অফিস রাস্তা ঘুরে বিদ্যাসাগর মঞ্চের সামনে এসেই শেষ হয় ওই মিছিল। বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদ জানিয়ে ও সেই দেশে ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার প্রতিবাদ জানিয়ে স্লোগান ওঠে। গলা মেলান দুই দলের নেতা-কর্মীরাই। বাংলাদেশের ঘটনায় ভারত সরকারের পদক্ষেপের করারও দাবি জানানো হয়। হিন্দু সেবা সমিতির চন্দ্রকোনা রোড শাখার সভাপতি মিথিলেশ মিশ্র বলেন, "বাংলাদেশের সনাতনী হিন্দুদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে ও চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আমরা মিছিলের ডাক দিয়েছিলাম। এলাকার সনাতনী হিন্দুদের আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। ফোনে ও সমাজমাধ্যমে আবেদন করেছিলাম। সাড়াও পেয়েছি। দলমত নির্বিশেষে অনেকেই উপস্থিত হন। নির্বিঘ্নেই মিছিল হয়েছে।"

হিন্দু সেবা সমিতি ওই এলাকার একটি পুরনো সংগঠন, যার প্রভাব রয়েছে। তাদের কর্মসূচিতে একাধিক তৃণমূল নেতার যোগদানের রাজনৈতিক গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে নানা মহলে। অনেকে মনে করাচ্ছেন, এই প্রথম হিন্দু সেবা সমিতির কোনও কর্মসূচিতে গেরুয়া ছাড়া অন্য কোনও রং লাগল। যা ওই সংগঠনের ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ভরকেন্দ্রে বদলের সূচকও হতে পারে। তবে মিছিলে যোগদানকারী তৃণমূল ও বিজেপি নেতৃত্ব অবশ্য তা মানতে নারাজ। তৃণমূল নেতা রাজীব ঘোষ, জ্ঞানাঞ্জন মণ্ডলরা বলছেন, "প্রতিবেশী দেশে সনাতনীদের উপর অত্যাচারের প্রতিবাদে হিন্দু সেবা সমিতির ডাকে মিছিলে আমরা অনেকেই ছিলাম। এটা কোনও রাজনৈতিক মিছিল ছিল না।" এ দিনের মিছিলে না থাকলেও তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা মেদিনীপুরের বিধায়ক সুজয় হাজরাও বলছেন, "এটা সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল। এর সঙ্গে ধর্মীয় রাজনীতি ঢুকিয়ে বিতর্ক তোলা ঠিক নয়।" বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিশ্রের কথায়, "হিন্দু সেবা সমিতি সবাইকে ডেকেছিল, তাই সবাই গিয়েছেন। এতে রাজনীতি কিছু নেই। চন্দ্রকোনা রোডে এদিন হিন্দু ঐক্যের ছবি ফুটে উঠেছে।"

সেই ঐক্যের মূল সুর কী, তা শুনতে কান পাতছেন অনেকেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement