সভায় বক্তৃতা অজিত মাইতির। — নিজস্ব চিত্র।
তফসিলি জনজাতির শংসাপত্রের দাবিতে আন্দোলনকারী কুড়মি নেতাদের সঙ্গে খলিস্তানপন্থীদের তুলনা টেনে বিতর্কে জড়ালেন তৃণমূল বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতি। অজিতের মন্তব্যের কড়া নিন্দা করেছেন কুড়মি নেতারা। কুড়মি আন্দোলনে বিজেপির হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অজিত। এ নিয়ে তৃণমূলকে বিঁধেছেন বিজেপি নেতারা।
তফসিলি জনজাতির শংসাপত্রের দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন কুড়মি নেতারা। সম্প্রতি জঙ্গলমহলের একাধিক এলাকায় কুড়মিরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দেওয়াল লিখন মুছে ‘জয় গরাম’ লেখা হয়েছে। এই আন্দোলনের প্রসঙ্গ টেনে শনিবার একটি সভায় অজিত বলেন, ‘‘কুড়মি ভাইদের নিয়ে একটা নোংরা খেলা চলছে। আমরা দেখতে পাচ্ছি চতুর্দিকে। কারণ কুড়মি ভাইদের উন্নয়ন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই করেছেন। সে দিন শালবনিতে কুড়মি ভাইদের নিয়ে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে এবং অন্যায় দাবি তোলা হয়েছে। আমরা কুড়মি ভাইদের বিপক্ষে নই। কিন্তু কিছু স্বঘোষিত কুড়মি নেতা স্বঘোষিত খালিস্তানি নেতার মতো ভুল বুঝিয়ে তফসিলি শংসাপত্র চাইছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে। কিন্তু সেই শংসাপত্র দেওয়ার মালিক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নন। সিদ্ধান্ত নেবে দিল্লি। আমার ধারণা, বিজেপি বা সিপিএম এতে উস্কানি দিচ্ছে।’’
অজিতের মন্তব্যের কড়া জবাব দিয়েছেন কুড়মি সংগঠনের নেতারা। কুড়মি সমাজের নেতা বিপ্লব মাহাত বলেন, ‘‘কেউ বলছেন খালিস্তানি। কেউ আবার বলছেন পিছনে অন্য কোনও রাজনৈতিক দল রয়েছে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। কুড়মি সমাজ চাইছে তাদের ন্যায্য দাবি পূরণ হোক। তাই নিজের দেওয়াল নিজের অধিকার।’’ পশ্চিমবঙ্গ কুড়মি সমাজের রাজ্য সভাপতি রাজেশ মাহাতোর বক্তব্য, ‘‘হকের দাবিতে লড়াই করলে কেন শাসকের রোষে পড়তে হবে?’’ শাসকদলের নেতাদের বিরূপ মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে বলেছেন রাজেশ।
কুড়মিদের আন্দোলনের পিছনে অজিত বিজেপির হাত থাকার তত্ত্ব তুলে ধরেছেন। এ নিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিজেপি নেতা শঙ্কর গুছাইতের অভিযোগ, ‘‘যে ভাষায় অজিতবাবু কথা বলেছেন তা সভ্য সমাজে মানায় না। কুড়মি সমাজকে অপমান করার অধিকার তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীদের নেই।’’
অজিতের মন্তব্যের সমালোচনা করে রাজ্যের মন্ত্রী তথা শালবনির বিধায়ক শ্রীকান্ত মাহাত বলেন, ‘‘উনি ভুল বলেছেন। এটা ওঁর বলা উচিত হয়নি। রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
এই বিতর্ক নিয়ে অজিতের বক্তব্য, ‘‘আমার বক্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা হচ্ছে। বলতে চেয়েছি, যাঁরা নিজেদের খলিস্তানপন্থীদের মতো স্বঘোষিত নেতা ভাবছেন, তাঁরা সত্যিকারের নেতা নয়। কুড়মি সমাজকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সব সময় ওঁদের পাশে রয়েছে।’’