কাটা গাছের গুঁড়ি। নিজস্ব চিত্র
একের পর এক। দিন যত গড়াচ্ছে পাঁশকুড়া রঘুনাথবাড়ির তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা হচ্ছে। আমপান ক্ষতিপূরণে দুর্নীতি, বেআইনিভাবে সরকারি গাছ কাটা— কী নেই সেই অভিযোগ তালিকায়!
রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অজিতকুমার সামন্তের বিরুদ্ধে ফের প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত এলাকার কামিনাচকের বাসিন্দারা তাঁর বিরুদ্ধে বন দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। স্থানীয়েরা জানাচ্ছেন, কামিনাচক দক্ষিণ বুথ এলাকায় মোরাম রাস্তার ধারে থাকা সোনাঝুরি গাছ সম্প্রতি এলাকারই এক ব্যক্তি কাটছিলেন। এলাকাবাসী ওই ব্যক্তিকে গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অজিত সামন্ত তাঁকে গাছগুলি কাটার অনুমতি দিয়েছন। পরে ওই ব্যক্তি চারটি অনুদানের রসিদ দেখান। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ১৮ জুলাই রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতকে চারজন আলাদা আলাদা ব্যক্তি ৪১ হাজার টাকা অনুদান দিয়েছেন। রসিদে সই রয়েছে রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের। বুধবার মোট ১৮টি গাছ কাটা হয় বলে অভিযোগ। এলাকাবাসীর দাবি, গাছ কাটার সাথে যুক্ত লোকজন তাঁদের জানান যে, পঞ্চায়েত প্রধান ৫৮টি গাছ কাটার কথা বলেছেন। যেগুলির মূল্য লক্ষাধিক টাকা। এলাকার মানুষজনের বাধা পেয়ে কাটা গাছগুলি ফেলে রেখেই পালিয়ে যায় ওই ব্যক্তি।
এর পরেই এ দিন বন দফতরে অভিযোগ দায়ের করেছেন স্থানীয়েরা। বন দফতরের পাঁশকুড়া রেঞ্জ অফিসের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘কোনও গাছ কাটতে গেলে বন দফতর এবং সংশ্লিষ্ট জায়গা যে দফতরের অধীন সেই দফতরের নির্দিষ্ট অনুমতি প্রয়োজন। তাছাড়া সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বর্ষার কারণে গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হয় না। রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের বিরুদ্ধে গাছ কাটার একটি অভিযোগ করেছেন এলাকার লোকজন। ওই জায়গায় বন দফতর গাছ কাটার কোনও অনুমতি দেয়নি।’’
অজিতের অবশ্য দাবি, সাধারণ সভায় গাছা কাটার সম্মতি নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘ওই গাছগুলি আমপান ঝড়ের সময় ভেঙে গিয়েছিল। ওই এলাকায় রাস্তা সংস্কারের জন্য শুধুমাত্র ভাঙা গাছগুলিই কাটা হচ্ছিল। এই বিষয়ে পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’ যদিও গাছগুলি কাটার ব্যাপারে পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় কোনও রকম সিদ্ধান্ত হয়নি বলে অভিযোগ। রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিআইয়ের পঞ্চায়েত সদস্যা সোনালী অধিকারী আচার্য বলেন, ‘‘দিন কুড়ি আগেও প্রধান কোনও রকম আলোচনা না করেই আটবেড়িয়া এলাকায় গাছ কেটেছিলেন। বুধবারও যে গাছ কাটা হয়েছে, সে বিষয়ে পঞ্চায়েতের সাধারণ সভায় আলোচনা হয়নি।’’
উল্লেখ্য, এর আগেও অজিতের বিরুদ্ধে একাধিকবার অনুমতি ছাড়া গাছ কাটার অভিযোগ উঠেছে। আমপান ক্ষতিপূরণ দুর্নীতিতেও নাম জড়িয়েছে। যেখানে অন্য এলাকায় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে দল পদক্ষপ করছে, শো-কজ় করছে, সেখানে এভাবে বারবার অজিতের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ব্লক নেতৃত্ব কোনও পদক্ষেপ করছে না কেন? তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘যদি অজিত সামন্ত অনুমতি না নিয়ে গাছ কেটে থাকে তাহলে বন দফতর তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। এতে আমাদের কী বলার আছে!’’
উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফল সম্পর্কিত যাবতীয় আপডেট পেতে রেজিস্টার করুন এখানে