নান্টুর বি এড কলেজ। নিজস্ব চিত্র।
পাত কুঁয়োর মিস্ত্রি থেকে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা হয়ে উঠেছিলেন। ভগবানপুরের মহম্মদপুরে এক সময় বাঘে-গরুতেও না কি এক ঘাটে জল খেত। তৃণমূলের সেই নেতা নান্টু প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও ছিল বিস্তর। শেষে ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত ভোটের আগে জনরোষে খুন হয়েছিলেন এই নান্টু। বর্তমানে না কি একটু একটু বিক্রি হয়েছে নান্টুর সেই ‘সাম্রাজ্য’। অন্তত তেমনই জানা যাচ্ছে স্থানীয় এবং পরিবার সূত্রের।
নান্টুর বিরুদ্ধে সে সময় তৃণমূলের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় ক্ষমতা দখলের রাজনীতি শুরু করার অভিযোগ ছিল। অনিচ্ছুক কৃষকদের জমিতে জোর করে নোনাজল ঢুকিয়ে কয়েকশো বিঘা চাষ জমিকে ভেড়ি তৈর করত সে। এছাড়া, কেলেঘাই নদীর বাঁধে দেড়েদিঘিতে সরকারি জমির পাশাপাশি, অন্যের পাট্টার জমি দখলের মতো গুরুতর অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। স্থানীয়দের দাবি ছিল, বিরোধীরা এলাকায় প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ পেতেন না। কেউ বিরোধী প্রার্থী হলে নান্টুর বাহিনী আক্রমণের শিকার হতে হত তাঁদের। বাড়ি ভাঙচুর থেকে ব্লক অফিসেও হামলা চালাতে দ্বিধা করেনি নান্টুর বাহিনী। এই সবের মাঝে গরিব পরিবার থেকে উঠে আসা নান্টুর আর্থিক সম্পত্তি তখন বেড়েছিল চোখে পড়ার মতো। বাগান বাড়ি, একাধিক গাড়ি, লরি, জেসিবি মেশিন— কী ছিল না তাঁর কাছে। কেলেঘাই নদী তীরে প্রায় ৪০ বিঘা জমির উপর নান্টু বানিয়েছিল প্রাসাদোপম বেসরকারি বি এড কলেজ।
নান্টু খুনের পরে কেলেঘাই নদীতে গত পাঁচ বছরে জল গড়িয়েছে বহুদূর। পেরিয়েছে আরও একটা পঞ্চায়েত নির্বাচন। তাতে মহম্মদপুর পঞ্চায়েত এলাকা তৃণমূলের দখলে থাকলেও, লোকে কার্যত তার কথা ভুলতে বসেছে। আর এই সময়ে পরিবারকে আর্থিক ভাবে সক্ষম রাখতে নান্টুর স্ত্রী নিজের সম্পত্তি বিক্রি করছেন বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নান্টু-ঘনিষ্ঠরাই জানাচ্ছেন, বিএড কলেজ আগের মতো চলে না। ভেড়ি ব্যবসা বন্ধ হয়েছে। বিক্রি হয়েছে নান্টুর বিলাসবহুল সব গাড়ি। দুটি জেসিবি এবং দুটি লরিও বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি, নান্টুর দখলে থাকা অন্যের পাট্টা জমিগুলিও মালিকেরা ফেরত নিতে শুরু করেছেন। নান্টুর এক ঘনিষ্ঠ বলছন, ‘‘দাদার জনপ্রিয়তা আর নেই। সব গাড়ি ও লরি বিক্রি হয়ে গিয়েছে।’’
নান্টুর বিরুদ্ধে চাকরির প্রলোভনে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগও ছিল। নান্টুর মৃত্যুর পরে তাঁর বাবা চাঁদহরি প্রধানকে মহম্মদপুর-১ অঞ্চল তৃণমূলের সভাপতি করা হয়েছিল। তিনি সে সময় জানিয়েছিলেন, জিনিসপত্র বিক্রি করে সেই টাকা মিটিয়েছেন তাঁরা। এখন চাঁদহরি দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। নান্টুর কলেজের দেখভাল করেন তাঁর স্ত্রী অপর্ণা প্রধান। তিনি বলছেন, ‘‘শাসকদলের কেউ এখন আমাদের খোঁজ নেন না। আমারও আর রাজনীতি করিনা। এই সব থেকে দূরে থাকি।’’ নান্টুর ভাই পিন্টু প্রধান পঞ্চায়েত সদস্য। তবে অপর্ণাদের দাবি, পিন্টু শ্বশুরবাড়িতে আলাদা ভাবে থাকেন। নান্টুর পরিবারের সঙ্গে আগের মতো তাঁর যোগাযোগ নেই।