—ফাইল চিত্র।
‘কাটমানি’র বিরুদ্ধে দলের নেতা-কর্মীদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপর জেলায় জেলায় শাসকদলের নেতাদের বিরুদ্ধে আমজনতার ক্ষোভ প্রকাশ্যে এসেছে। কয়েকজন তো টাকা ফেরত পর্যন্ত দিয়েছিলেন।
সেই আবহে এ বার নয়া সংযোজন। সরকারি একাধিক প্রকল্পে সুবিধা পাইয়ে দিতে টাকার বিনিময়ে উপভোক্তাদের জাল নথিপত্র তৈরির অভিযোগ উঠল একশো দিনের কাজের প্রকল্পের সুপারভাইজার এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। ঘটনাস্থল পূর্ব মেদিনীপুরের নন্দকুমার। কুমোরচক গ্রাম পঞ্চায়েতে ওই সুপারভাইজার কালীশঙ্কর করের বিরুদ্ধে এ নিয়ে গত শনিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন খোদ বিডিও। স্থানীয় শিবদত্তপুর গ্রামের বাসিন্দা কালীশঙ্কর তৃণমূলের বুথ সভাপতি। গোটা ঘটনায় তোলপাড় নন্দীগ্রামের জেলা।
নন্দকুমারের বিডিও মহম্মদ আবু তায়েব মানছেন, ‘‘একশো দিনের কাজের প্রকল্পের ওই সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে আবাস যোজনা ও কৃষকবন্ধু প্রকল্পের বেশ কয়েকজন উপভোক্তার জাল নথিপত্র তৈরি করে জমা দেওয়ার অভিযোগ এসেছিল। অভিযোগ খতিয়ে দেখে ওই সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে । নথিপত্র জালিয়াতির কাজে আরও কয়েকজন জড়িত বলে জানা গিয়েছে। পুলিশকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে।’’ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, বাংলা আবাস যোজনায় গরিব মানুষের জন্য চলতি বছরে জেলায় প্রায় ৮৩ হাজার পাকা বাড়ি তৈরি হবে। উপভোক্তার তালিকা ধরে নথিপত্র জমা নেওয়ার কাজ চলছে এখন। নন্দকুমার ব্লক প্রশাসনের কাছে কুমোরচক পঞ্চায়েতের কিছু উপভোক্তা জমির নথিপত্র নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন। বিডিও ওই নথিপত্র খতিয়ে দেখে জানতে পারেন, কয়েকজন উপভোক্তার চাষের জলা জমিকে নথি জালিয়াতি করে বাস্তু জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে। কয়েকজন উপভোক্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিডিও আরও জানতে পারেন, জমির নথি জালিয়াতিতে পঞ্চায়েতের একশো দিনের প্রকল্পের সুপারভাইজার কালীশঙ্কর-সহ কয়েকজন জড়িত। উপভোক্তাদের থেকে টাকার নিয়েই এই ভুয়ো নথি তৈরি করে জমা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
ব্লক প্রশাসনের তদন্তে জানা যায়, বাংলা আবাসের পাশাপাশি ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পেও এমন কয়েকজন চাষের ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন যাদের চাষ জমিই নেই। সে ক্ষেত্রেও জমির ভুয়ো নথি তৈরির অভিযোগ রয়েছে কালীশঙ্কর ও তাঁর সঙ্গীদের বিরুদ্ধে। বিডিও বলেন, ‘‘জমির আসল নথিপত্র পরিবর্তন করে জমা দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার পরেই ওই সুপারভাইজারের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।’’
এর আগে এই কুমোরচক পঞ্চায়েতেই একই নামের সুযোগ নিয়ে বাংলা আবাস যোজনায় পাকা বাড়ি তৈরির জন্য এক ব্যক্তির জন্য বরাদ্দ টাকা অন্যকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। জীবিতকে মৃত দেখিয়ে বার্ধক্য ভাতা বন্ধের অভিযোগও ছিল। এ বার সেই পঞ্চায়েতেই একজন সুপারভাইজার তথা তৃণমূল বুথ সভাপতির বিরুদ্ধে জমির নথিপত্র জালিয়াতির অভিযোগ ওঠায় অস্বস্তিতে পড়েছে শাসকদল।
কালীশঙ্করকে এ দিন ‘রং নম্বর’ বলে ফোন কেটে দেন। আর পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান বাসুদেব মন্ত্রী বলছেন, ‘‘নথিপত্র জালিয়াতির ঘটনায় কালীশঙ্কর জড়িত নয়। বিডিও কয়েকজনকে দিয়ে ওঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ করিয়েছেন।’’