ধাদিকায় প্রচারে তৃণমূলের জেলাপরিষদের প্রার্থী শিক্ষক নেতা শান্তনু দে। নিজস্ব চিত্র
পঞ্চায়েত ভোটে প্রচারে নেমে নিয়োগ দুর্নীতির খোঁচায় নাজেহাল শাসকদলের শিক্ষক প্রার্থী। পরিস্থিতি সামলাতে বাম-আমলের চিরকুটে চাকরির কথা সাধারণ মানুষকে মনে করাচ্ছেন প্রার্থী।
গড়বেতা ১ ব্লকে জেলাপরিষদের ৫০ নম্বর আসনে তৃণমূলের প্রার্থী শান্তনু দে। তিনি গড়বেতার একটি স্কুলের প্রাথমিক শিক্ষক। আবার তিনি তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা কমিটির চেয়ারম্যানও বটে। প্রচারে রীতিমতো ঝড় তুলে তিনি তৃণমূল সরকারের সাফল্যের কথা তথ্য দিয়ে বলছেন ভোটারদের সামনে। শিক্ষক নেতার প্রচারে অবধারিত ভাবে আসছে শিক্ষা প্রসঙ্গ। এখানেই খোঁচা খেতে হচ্ছে শাসকদলের প্রার্থীকে। কেউ বলছেন শিক্ষায় এ রকম বেহাল অবস্থা আগে দেখিনি, কারও মুখে আবার শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বেলাগাম দুর্নীতির কথা।
সোমবার সকালে ধাদিকার নাচনজাম গ্রামে বাড়ি বাড়ি প্রচার করেন শান্তনু। সঙ্গে ছিলেন এলাকার একঝাঁক প্রাথমিক শিক্ষক। গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা শাসকদলের শিক্ষক নেতাকে সামনে পেয়ে শিক্ষা ব্যবস্থার হাল জানতে চান। কয়েকজন নিয়োগ দুর্নীতির প্রসঙ্গ তুলে প্যানেলভুক্ত চাকরি প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন করেন। কয়েকদিন ধরেই ধাদিকা-সহ আগরা, শ্যামনগর, বেনাচাপড়া অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামে প্রচার করছেন জেলাপরিষদের এই প্রার্থী। বেশিরভাগ প্রচারেই দলীয় কর্মীদের সঙ্গে তাঁর সঙ্গী সে সব এলাকার বহু শিক্ষক। গোপালপুর, নরহরিপুর, বেড়াচাঁপা প্রভৃতি গ্রামে গিয়ে শান্তনুকে শুনতে হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে রাজ্য রাজনীতিতে ঝড় তোলা শিক্ষা ক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির কথা। গড়বেতা এলাকায় আদালতের নির্দেশে কতজনের চাকরি গিয়েছে, তার হিসেবও শুনিয়েছেন কয়েকজন। তার জবাবে তৃণমূলের শিক্ষক নেতা প্রার্থীকে বলতে হচ্ছে বাম-আমলে চিরকুটে চাকরির উদাহরণ।
গড়বেতা ও তার আশেপাশের এলাকায় এ রকম কত চাকরি হয়েছে, তার বিবরণ দিয়ে মানুষকে বোঝাচ্ছেন আগের চেয়ে এখন অনেক স্বচ্ছতার সঙ্গে চাকরি হয়। শান্তনু মানছেন, ‘‘প্রচারে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগের প্রসঙ্গ আসছে, বাম আমলে কী ভাবে চিরকুট দিয়ে চাকরি হত তার কথা বললে, গ্রামের মানুষও মানছেন সে কথা।’’ গড়বেতার বাসিন্দা বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএ’র নেত্রী সোনালি সিংহ বলেন, ‘‘নিজেদের দুর্নীতি ঢাকতে বাম আমলের কথা তুলে ধরেও লাভ হবে না তৃণমূলের। বাম আমলে চাকরিতে নিয়োগ হত মেধার ভিত্তিতে স্বচ্ছতার সঙ্গে, এটা গ্রামের মানুষও জানেন।’’
দলের শিক্ষক নেতাকে জেতাতে তাঁর ভোট প্রচারে শামিল হচ্ছেন তৃণমূল সমর্থক প্রাথমিক শিক্ষকেরাও। এমনিতেই তাঁর প্রার্থিপদের প্রস্তাবক থেকে দু’জন সাক্ষী, নির্বাচনী এজেন্ট প্রত্যেকেই প্রাথমিক শিক্ষক। যেই এলাকায় শিক্ষক নেতা প্রচার করছেন, সেই এলাকার বেশিরভাগ প্রাথমিক শিক্ষক-শিক্ষিকাই প্রচারে অংশ নিচ্ছেন তাঁর সমর্থনে। জেলা ও রাজ্যের শিক্ষক নেতারাও আসবেন তাঁর প্রচারে। শান্তনু বলছেন, ‘‘এটা আমার প্লাস পয়েন্ট। শিক্ষক-শিক্ষিকারা আমার সমর্থনে নামায় গ্রামের মানুষ আমাকে সাদরে গ্রহণ করছেন। প্রচারে রাজ্য সরকারের জনমুখী প্রকল্পের কথা বলছি। জয়ের ব্যাপারে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত।’’