মাস্ক বিলি বিজেপি (বাঁদিকে) এবং বামেদের। নিজস্ব চিত্র
ভোট মিটেছে প্রায় এক মাস আগে— দ্বিতীয় দফাতেই। তার পরে অবশ্য এবারের বিধানসভা ভোটের ‘হটস্পট’ নন্দীগ্রামে তেমন ভাবে দেখা যায়নি রাজনৈতিক দলগুলির প্রার্থীদের। রাজ্যের অন্য প্রান্তে নিজের দলের ভোট প্রচারে ব্যস্ত হয়েছেন তাঁরা।
সম্প্রতি করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়েছে। এই সময় তৃণমূল-বিজেপি-বামেদের প্রার্থীদের এলাকায় দেখা না গেলেও সব দলের স্থানীয় নেতৃত্বই দাবি করছেন, এই বিপদের সময়ে নন্দীগ্রামবাসীর পাশে রয়েছেন তাঁরা। করোনা সচেতনতায় করছেন প্রচার, মাস্ক বিলি। স্থানীয়েরা অবশ্য বলছেন অন্য কথা। তাঁদের দাবি, তেমন ভাবে কোনও প্রচারই এতদিন হয়নি। সদ্য যেটুকু প্রচার কর্মসূচি শুরু হয়েছে, তাতে বামে এবং বিজেপিকে কিছুটা সক্রিয় হতে দেখা গেলেও স্থানীয় তৃণমূল এ ব্যাপারে এখনও সক্রিয় নয়। এই প্রসঙ্গে নন্দীগ্রামের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দাবি, রাজ্যে তো তৃণমূলের সরকার হয়েছে। আর প্রশাসনিক ভাবেই করোনার সঙ্গে লড়তে মানুষের পাশে দাঁড়ানো হয়েছে।
গত কয়েকদিন ধরে রাজ্যের পাশাপাশি নন্দীগ্রামেও সংক্রমণ বেড়েছে। তাই করোনার হাত থেকে রেহাই পেতে সাধারণ মানুষের কী করনীয়, তা বোঝানোর জন্য মাঠে নেমে পড়েছে বিজেপি এবং বামেরা। মঙ্গলবার থেকে নন্দীগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক শিবির আয়োজন করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। সোনাচূড়া, গোকুলনগরের মত এলাকায় জনবহুল জায়গাগুলিতে মাইক নিয়ে প্রচার করা হচ্ছে তাঁদের তরফে। পথচলতি মানুষদের মাস্ক এবং হাতে স্যানিটাইজ়ার দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি, সচেতনতামূলক একটি প্রচার লিফলেট তুলে দেওয়া হচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে।
নন্দীগ্রামের দুটি ব্লকের ১০ অঞ্চলে ‘রেড ফোর্স’ তৈরি করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। প্রতিটি অঞ্চলে দুজন করে যুবককে নিযুক্ত করা হয়েছে ওই দলে। এলাকায় কোনও মানুষের চিকিৎসার জন্য রক্তের প্রয়োজন বা ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে নন্দীগ্রামের এরিয়া সিপিএমের সম্পাদক মহাদেব ভূঁইয়া বলেন, ‘‘শুধু ভোটের জন্য নয়। সারা বছর ধরে আমরা রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে সাধারণ মানুষের পাশে থাকি। করোনা পরিস্থিতিতে মানুষকে সচেতন করে তোলা একান্ত প্রয়োজন। তাই আমরা এলাকায় এলাকায় গিয়ে মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করছি।’’
দেরি করে হলেও সচেতনতা মূলক প্রচার অভিযানে নেমেছে বিজেপিও। কয়েকদিন ধরে নন্দীগ্রামের সোনাচূড়া, জামবাড়ি গ্রামে শিবির করে হাত ধোওয়ার সাবান, মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ার বিলি করা হচ্ছে। বুধবার নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিরুলিয়া, আমদাবাদ, সুবদিয় একইরকম ভাবে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি কর্মীরা। বিজেপির জেলা (কাঁথি) সভাপতি নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘৪-৫ দিন ধরে করোনা সম্পর্কে নন্দীগ্রাম জুড়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলার পাশাপাশি তাদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করা হচ্ছে। বামেদের আগেও আমরা শুরু করেছি। কিন্তু তা নিয়ে সেভাবে কেউ প্রচার করেনি।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, বাম এবং বিজেপি যখন নন্দীগ্রামে সাধারণ মানুষকে সচেতন করছে, তখন এ ধরনের কর্মসূচিতে কোথাও দেখা যায়নি স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বকে। নন্দীগ্রাম-২ ব্লকের বিরুলিয়া বাজার সংলগ্ন এলাকার এক বাসিন্দা বলছেন, ‘‘দিন কয়েক আগে বিজেপি কর্মীদের এলাকায় এসে সাবান এবং মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার বিলি করতে দেখেছি। প্রশাসনের লোকেরাও এসেছিল। তবে স্থানীয় তৃণমূলের তরফে বাকি কাউকে দেখতে পাইনি।’’
বিরোধীদের আভিযোগ, নন্দীগ্রামের স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব আপাতত ভোটের গণণার কাজেই ব্যস্ত। তাই মানুষের পাশে তাঁরা দাড়াচ্ছেন না। সেই অভিযোগ খারিজ করে তৃণমূল নেতা তথা নন্দীগ্রামের তৃণমূল প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী এজেন্ট শেখ সুফিয়ান বলছেন, ‘‘এলাকায় করোনা সচেতনতায় মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ার বিলি করেছে প্রশাসন। বিজেপি এবং বামেরা যা বলছে সবটাই মিথ্যা। নন্দীগ্রামে মানুষের পাশে বরং তৃণমূল সরকার দাঁড়িয়েছে।’’