ভোটের ফলাফলের পর তৃণমূল সমর্থকদের উচ্ছাস।—ছবি পিটিআই।
পড়শি জেলায় ছিল উপ নির্বাচন। সেই নির্বাচনের ফলের আঁচ পড়েছে পূর্ব মেদিনীপুরে।
এক দিকে যেমন নানা কর্মসূচি নিয়ে ‘চাঙ্গা’ হচ্ছে তৃণমূল, তেমনই বৃহস্পতিবার ভোটের ফল সামনে আসার পরেই জেলায় বিজেপি’র উপরে হামলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।
বিজেপি সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবারের মধ্যে জেলার তিন জায়গায় আক্রান্ত হয়েছেন তাদের দলীয় নেতা-কর্মী। বৃহস্পতিবার পটাশপুরের মংলামাড়ো বাজারে বিজয় মিছিলের আয়োজন করেছিল তৃণমূল। অভিযোগ, সেই মিছিল চলাকালীন বিজেপির এক কর্মীকে মারধর করে তৃণমূলের লোকজন। ওই ব্যক্তি বর্তমানে গোনাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এছাড়া, রাতে পটাশপুর উত্তর মণ্ডলের ১৬৬ এবং ১৬৭ নম্বর বুথের আমগেছিয়ায় বিজেপির কার্যালয়ে তৃণমূলের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করে বলে অভিযোগ। ছেঁড়া হয় দলীয় পতাকা এবং ফ্লেক্স।
অভিযোগ অস্বীকার করে পটাশপুর-১ ব্লকে তৃণমূলের সভাপতি তাপস মাজি বলেন, ‘‘বিজেপির কোনও কর্মীকে মারধর বা কার্যালয় ভাঙচুরে আমাদের দলের কেউ যুক্ত নন। মণ্ডল সভাপতি নির্বাচনে অসন্তোষের কারণে ওদের দলের লোকেরাই ওটা করেছে।’’
আবার, ভগবানপুর-২ ব্লকের মুগবেড়িয়ায় বিজেপি নেতাকে মারধর এবং তাঁর বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। প্রশান্ত পণ্ডা নামে ওই বিজেপি নেতার অভিযোগ, বৃহস্পতিবার সকালে রাস্তায় তাঁকে কয়েকজন বিজেপি করার জন্য ধমক দেয়। প্রতিবাদ করলে তাঁকে চড়, লাথি ঘুষি মারা হয় বলে অভিযোগ। প্রশান্তের চিৎকারে তাঁর স্ত্রী আসলে তাঁকেও কটূক্তি করা হয় বলে অভিযোগ। পরে ওই বিজেপি নেতার বাড়িতেও ভাঙচুর চালানো হয়। শাসকদলের লোকেরা ওই কাজ করেছে দাবি করে প্রশান্ত রাতে ভূপতিনগর থানায় অভিযোগ জানান।
যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানব পড়ুয়া বলেন, ‘‘এলাকায় এ ধরনের গণ্ডগোলের কোনও খবর আমার কাছে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখছি।’’
এ দিকে, হলদিয়ায় ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিম পল্লিতে বিজেপির একটি অফিস পোড়ানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বিজেপির হলদিয়া নগর মণ্ডল-১ সভাপতি বিজয় বারিক বলেন, ‘‘আসলে তৃণমূল উপ নির্বাচনে জয়ী হয়ে বিজেপিকে ধ্বংস করতে চাইছে। ওরা আমাদের দলীয় অফিসে আগুন দিয়েছে। কিন্তু এভাবে বিজেপিকে রোখা যাবে না।’’
হলদিয়ার উপ পুরপ্রধান সুধাংশু মণ্ডল বলেন, ‘‘ওটা হোগলা দিয়ে ঘেরা একটা ছোট্ট জায়গা ছিল। স্থানীয়েরা আড্ডা মারতেন। ওখানে বিজেপির দলীয় অফিস রয়েছে বলে শুনিনি। কোন ভাবে আগুন লেগে গিয়েছে। তার জন্য তৃণমূল দায়ী নয়।’’
জেলায় এভাবে বিজেপির আক্রান্ত হওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘থানায় এ রকম কোনও ঘটনা অভিযোগ দায়ের হয়নি। বিজেপি আতঙ্কিত হয়ে নিজেরাই এমন অভিযোগ করছে।’’
বিজেপি’র আক্রান্তের খবর সামনে আসার পাশাপাশি ভোটের পরে পাঁশকুড়ায় ‘চাঙ্গা’ হচ্ছে তৃণমূল। তৃণমূল সূত্রের খবর, আগামী ডিসেম্বরে জেলা নেতৃত্বের উপস্থিতিতে পাঁশকুড়ায় একটি প্রকাশ্য সমাবেশ হবে। এছাড়া, ‘দিদিকে বলো’ এলাকায় নিবিড় জন সংযোগের উপরে জোর, আগামী সপ্তাহ থেকে অঞ্চল স্তরে লাগাতার মিটিং-মিছিলের কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটে যাঁরা দলের সাথে দূরত্ব বাড়িয়েছিলেন, তাঁরা ফিরে এসেছেন। উপ নির্বাচনের ফলাফলে কর্মীরা উজ্জীবিত।’’