ক্ষোভে ইন্ধন বিজেপি’র, রাজ-মূর্তিতে রাজনীতি

গত রবিবার বিজেপি-র দলীয় অফিসে গিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পদ্ম-পতাকা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন বিক্রম। তারপরই তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর প্রপিতামহ ঝাড়গ্রামের রূপকার রাজা নরসিংহ মল্লদেবকে যথার্থ সম্মান দেয়নি বর্তমান রাজ্য সরকার।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:২১
Share:

রাজা নরসিংহ মল্লদেবের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

আধুনিক ঝাড়গ্রামের রূপকার তথা ঝাড়গ্রামের প্রথম সাংসদ রাজা নরসিংহ মল্লদেবকে মর্যাদা দিতে ব্যর্থ তৃণমূলের রাজ্য সরকার! রাজার পুতি (প্রপৌত্র) বিক্রমাদিত্যকে দলে নেওয়ার পরে এমন অভিযোগে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির।

Advertisement

গত রবিবার বিজেপি-র দলীয় অফিসে গিয়ে রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে পদ্ম-পতাকা নিয়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দেন বিক্রম। তারপরই তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর প্রপিতামহ ঝাড়গ্রামের রূপকার রাজা নরসিংহ মল্লদেবকে যথার্থ সম্মান দেয়নি বর্তমান রাজ্য সরকার। মূর্তি বসাতে না দিয়ে নরসিংহকে কার্যত অপমান করা হয়েছে বলে অভিযোগ বিক্রমাদিত্যের (ওরফে বিক্রম)।

বিজেপি-র জেলা সভাপতি সুখময় শতপথীরও অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল রাজ পরিবারকে ব্যবহার করেছে। ঝাড়গ্রামের রূপকার রাজা নরসিংহ মল্লদেবের মূর্তি অরণ্যশহরে নেই। রাজার মূর্তি তৈরি করেও চেয়ারম্যান থাকাকালীন‌ বিক্রমের বাবা দুর্গেশ শহরে সেই মূর্তি বসাতে পারেননি। এটা অত্যন্ত লজ্জার।’’ মূর্তি বসানোর জন্য আন্দোলনে নামার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।

Advertisement

ঝাড়গ্রামের মল্লদেব রাজবংশের শেষ রাজা ছিলেন নরসিংহ। তিরিশের দশকে ঝাড়গ্রাম এস্টেটের সিংহাসনে বসে প্রথমেই শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করেন তিনি। ঝাড়গ্রামে ১২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি হাসপাতালের জন্য জমি ও অর্থ দিয়ে সাহায্য করেন নরসিংহ। তাঁর শাসনকালকে ঝাড়গ্রামের ‘সুবর্ণ যুগ’ বলা হয়। স্বাধীন ভারতে তিনি ছিলেন ঝাড়গ্রামের প্রথম সাংসদ। জাতীয় কংগ্রেস থেকে নির্বাচিত হন। নরসিংহের সময় থেকে ঝাড়গ্রাম রাজ পরিবারটি জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থক ছিল। নরসিংহের নাতি দুর্গেশ অবশ্য রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে তৃণমূলে যোগ দেন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তৃণমূল পরিচালিত ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান ছিলেন দুর্গেশ মল্লদেব।

২০১৩ সালে দুর্গেশ পুরপ্রধান হওয়ার পরে বিভিন্ন মহল থেকে অরণ্যশহরে রাজা নরসিংহের মূর্তি বসানোর দাবি করা হয়। কৃষ্ণনগরের ভাস্কর সুবীর পাল নরসিংহের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি তৈরি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাঁচ মাথার মোড়ে আর ব্রোঞ্জের নরসিংহের মূর্তি বসেনি। আপাতত তা বন্দি রাজবাড়ির একটি ঘরে। গত বছর ডিসেম্বরে তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। রাজ্য সরকার পুরসভায় প্রশাসক নিয়োগ করেছে। প্রাক্তন পুরপ্রধান দুর্গেশ এখন পুরপ্রশাসনিক বোর্ডের সরকার মনোনীত সদস্য হিসেবে রয়েছেন।

কিন্তু পাঁচ বছর নরসিংহের নাতি দুর্গেশ মল্লদেব তৃণমূলের ক্ষমতাসীন ঝাড়গ্রাম পুরসভার পুরপ্রধান পদে থেকেও নরসিংহের মূর্তি বসাতে না পারায় রাজ পরিবারের অন্দরেই ক্ষোভ রয়েছে। দুর্গেশের ভাই জয়দীপ মল্লদেব বলেন, ‘‘রাজার মূর্তি বসলে আদিবাসী ভাবাবেগে আঘাত লাগবে এমন কারণ দেখিয়ে মূর্তিটি বসানোর কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুনেছি নবান্নের শীর্ষ মহলে এ ব্যাপারে কেউ নালিশ করায় মূর্তি বসানোর বিষয়টি স্থগিত করে দেওয়া হয়।’’ জয়দীপ জানান, রাজ পরিবার বরাবরই স্থানীয় আদিবাসী-মূলবাসীদের স্বার্থেই কাজ করে এসেছে। তাই আদিবাসীদের কেউ এমন আপত্তি করেছেন, এ কথা তাঁরা বিশ্বাস করেন না।

তৃণমূলের জেলা সভানেত্রী বিরবাহা সরেন বলেন, ‘‘বিজেপি রাজার মূর্তি নিয়ে রাজনীতি করছে। নরসিংহ প্রাতঃস্মরণীয় ব্যক্তিত্ব। কেন রাজার মূর্তি বসেনি সেটা তো দুর্গেশবাবু বলতে পারবেন।’’ দুর্গেশ অবশ্য বিতর্ক এড়িয়ে বলছেন, ‘‘নরসিংহের মূর্তি বসবে। সময়ের অপেক্ষা করুন।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement