বিজেপির চিঠি পাচ্ছেন তৃণমূলের কাউন্সিলর

সরাসরি কাটমানির প্রসঙ্গের উল্লেখ নেই ওই চিঠিতে। তবে মানবেন্দ্র তাঁর প্যাডে যে দু’টি সরকারি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছেন সেগুলি হল, ‘সবার জন্য ঘর’ এবং ‘মিশন নির্মল বাংলা’।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঘাটাল শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০১:০৩
Share:

বিজেপির ঘাটাল নগর মণ্ডল কমিটির তরফে পাঠানো হচ্ছে এই চিঠিই। নিজস্ব চিত্র

সরকারি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে চেয়ে কাউন্সিলরদের চিঠি পাঠাচ্ছেন বিজেপি নেতা। চিঠিতে উল্লেখ থাকছে আলোচনার দিনক্ষণও। বিজেপির ঘাটাল নগর কমিটির সভাপতি মানবেন্দ্র জানার ওই চিঠি ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কি এ ভাবে ব্যক্তিগত স্তরে চিঠি পাঠিয়ে ডেকে পাঠাতে পারেন কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা? প্রশ্ন তুলছে শাসক দল।

Advertisement

সরাসরি কাটমানির প্রসঙ্গের উল্লেখ নেই ওই চিঠিতে। তবে মানবেন্দ্র তাঁর প্যাডে যে দু’টি সরকারি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছেন সেগুলি হল, ‘সবার জন্য ঘর’ এবং ‘মিশন নির্মল বাংলা’। প্রসঙ্গত, মূলত ওই দু’টি প্রকল্পেই তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠছে। মানবেন্দ্রের অনুগামীরাই কাউন্সিলরদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিঠি দিয়ে আসছেন। প্রত্যেক চিঠিতে আলোচনার জন্য পৃথক দিনের উল্লেখ থাকছে। ওই চিঠি পেয়েছেন পুরসভার উপ-পুরপ্রধান স্বপন মালিক। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “এটা বিজেপির ঔদ্ধত্য।” মানবেন্দ্র অবশ্য এতে অন্যায়ের কিছু দেখছেন না। তিনি বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা ও শৌচালয় তৈরি নিয়ে আমাদের কিছু দাবি আছে। এই সব নিয়েই আলোচনা করার জন্য বৈঠক করব। এতে অন্যায় কিছু দেখছি না।”

মানবেন্দ্রের এই পত্রালাপে সায় নেই জেলা বিজেপি নেতৃত্বের। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “এইরকম ব্যক্তিগত ভাবে কোনও কাউন্সিলরের সঙ্গে বৈঠক দলের নীতি নয়। এটা করা যায় না। আমি কথা বলব ওই নেতৃত্বদের সঙ্গে।”

Advertisement

কাটমানি-কাণ্ডের পর থেকেই তেতে রয়েছে ঘাটাল। প্রায় প্রতিদিনই ঘাটালের বিভিন্ন গ্রামে কাটমানি সংক্রান্ত পোস্টার পড়ছে। বিক্ষোভ,পথ অবরোধ সবই হয়েছে। তার আঁচ পড়েছে ঘাটাল শহরেও। ক’দিন আগেই ঘাটাল শহরে ‘সবার জন্য ঘর’প্রকল্পে কাটমানির টাকা ফেরতের দাবিতে শহর জুড়ে পোস্টার দিয়েছিল বিজেপি। তা নিয়ে এখনও সরগরম ঘাটাল শহর। এরইমধ্যে চিঠি নিয়ে তৈরি হল বিতর্ক। রাজনৈতিক মহলের একাংশের বক্তব্য, আসলে চিঠি পাঠিয়ে হয়তো শাসক দলের উপর চাপ তৈরি করতে চেয়েছিলেন ওই বিজেপি নেতা। কিন্তু এতে যে এক্তিয়ারের প্রশ্ন উঠবে এবং তা বুমেরাং হয়ে ফেরত আসবে সেটা আন্দাজ করতে পারেননি তিনি। বিজেপির একটি অংশের যুক্তি, পুরসভার বিরুদ্ধে দুর্নীতি অথবা কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ থাকতেই পারে। তারজন্য পুরসভা রয়েছে। পুরপ্রধানের কাছে লিখিত আবেদনও করা যেতে পারে। কিন্তু এ ভাবে চিঠি পাঠিয়ে আসলে তৃণমূলেরই সুবিধা করে দেওয়া হল।

সুযোগ কাজে লাগাতে মরিয়া তৃণমূলও। চিঠি-কাণ্ডের প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার পুরসভার মোড়ে প্রতিবাদ সভা করেছে তারা। তৃণমূলের শহর সভাপতি অরুণ মণ্ডল বলেন, “বিজেপি গঠনমূলক আন্দোলন করুক। কাউন্সিলরের বাড়িতে চিঠি দিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার কেন করবে। সবার জন্য ঘর প্রকল্পে টাকা না আসায় উপভোক্তাদের দেওয়া যায়নি। কিন্তু ওই টাকা আত্মসাত করার কথা বলে প্রচার করছে। এ সবের প্রতিবাদেই বিক্ষোভ।” আর ঘাটালের পুরপ্রধান বিভাস ঘোষ, ‘‘বিরোধীদেরও এক্তিয়ার জানা উচিত। সরকারি প্রকল্পে আলোচনার জন্য এ ভাবে ডাকা যায় না।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement