ঘাটালের লজ থেকে বেরোচ্ছেন খড়ারের কাউন্সিলরেরা। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
ভিন্ রাজ্যের ‘রিসর্ট রাজনীতি’র ছায়া এ বার ঘাটালেও।
মহকুমার ক্ষুদ্রতম পুরসভা খড়ারে ওয়ার্ড মাত্র ১০টি। তার মধ্যে ৮টিতেই জিতেছে তৃণমূল। বিরোধীরা শক্তিহীন। সংগখ্যা গরিষ্ঠতাও এসেছে সহজে। তাও যে সাবধানের মার নেই, দলের অন্দরের বিদ্রোহে তা একদফা টের পেয়েছে শাসকদল। এ বার তাই ৭ জন কাউন্সিলরকেই বোর্ড গঠনের আগের রাত থেকে এনে রাখা হল ঘাটাল শহরের এক গেস্ট হাউসে। কেউ যাতে হাইজ্যাক না হয়ে যায়, কাউন্সিলরদের কাউকে যাতে কেউ ভাঙিয়ে নিতে না পারে, সে জন্যই নাকি এই সাবধানতা। সাবধানতা ছিল এতটাই যে গেস্ট হাউসে কাউন্সিলরদের রাখা হয়েছিল, সেখানেই ঘাটাল মহকুমা পুলিশ অফিসারের কার্যালয় ও আবাসন। মঙ্গলবার দিনের শেষে সুষ্ঠুভাবেই মিটেছে পুরপ্রধান ও উপ-পুর প্রধান নির্বাচন-পর্ব।
এ দিন সকাল থেকেই তৃণমূল কর্মীরা ভিড় করেন খড়ার পুরসভার ভবনের সামনে দলের সংবর্ধনা মঞ্চে। বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের তরফে ওই আয়োজন করা হয়েছিল। পুরকর্মীরাও সকাল সকাল চলে এসেছিলেন। বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছিল গোটা পুরসভা চত্বর। বেলা বারোটায় পুরসভায় আসেন ঘাটালের মহকুমাশাসক সুমন বিশ্বাস। সঙ্গে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট সুলক প্রামানিক। গত ১৬ মার্চ ১০ জন কাউন্সিলরের শপথ গ্রহণ হয়ে গিয়েছিল। এ দিন শুধু পুরপ্রধান নির্বাচন হয়েছে। আগেই তৃণমূলের তরফে ঘোষিত সন্ন্যাসী দোলইকে পুরপ্রধানের শপথবাক্য পাঠ করান মহকুমাশাসকই। উপ-পুরপ্রধান পদে শপথ নেন পূর্বা ভুঁইয়া। পুরপ্রধান নির্বাচনে এ দিন তৃণমূলের ৭ জন কাউন্সিলর উপস্থিত ছিলেন। আসেননি শুধু তৃণমূলের শহর সভাপতির পদ থেকে সাসপেন্ড হওয়া সেই অদ্যুৎ মণ্ডল, যিনি পাশা পাল্টে দিয়েছিলেন। বিরোধী দুই বিজেপি কাউন্সিলরও এ দিন পুরসভায় আসেননি। অদ্যুৎ এ দিন বাড়িতেই ছিলেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কিন্তু আমি গেলে অশান্তির আশঙ্কা থাকত। দলের কেউ কেউ আমাকে যেতে নিষেধও করেন। তাই আর যাইনি।’’
গত ১৬ মার্চ পুরবোর্ড গঠনের দিন তুলকালাম হয়েছিল খড়ারে। সে দিন সন্ন্যাসী দোলইকে মেনে নেননি দলের কাউন্সিলরদের একাংশ। তার জেরেই বিজেপির দুই কাউন্সিলর-সহ দলের তিন কাউন্সিলরের সমর্থনে পুরপ্রধান নির্বাচিত হয়েছিলেন অদ্যুৎ। তার দু’ঘন্টার মধ্যেই দল থেকে সাসপেন্ড হন তিনি। পরদিন পুরপ্রধানের পদে ইস্তফাও দেন। আর তাঁকে সমর্থন করা তৃণমূলের তিন কাউন্সিলর ভুল স্বীকার করে দলের কাছে আত্মসমর্পণ করেন।
সেই ঘটনা যে রীতিমতো নাড়িয়ে দিয়েছে শাসক শিবিরকে, এ বার পুরপ্রধান নির্বাচনের আগে সতর্কতার বহরেই তা স্পষ্ট। সোমবার রাত থেকেই ৭ জন তৃণমূল কাউন্সিলরকে ঘাটাল শহরের ওই ‘নিরাপদ’ লজে নিয়ে গিয়ে রাখার ব্যবস্থা হয়। মঙ্গলবার সকাল দশটার সময় গাড়িতে তাঁদের নিয়ে আসা হয় খড়ারে। গোটা বিষয়টি পরিচালনা করেছেন জেলা নেতৃত্বই।
এ দিন সংবর্ধনা সভায় মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘‘পুরপ্রধান, উপ-পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছিল খড়ারে। সেখানে রাজনৈতিক ডাক্তারবাবুরা রোগ চিহ্নিত করে দিয়েছেন। সেলাই-প্লাস্টার করে দিয়েছেন। লাঠি না নিয়েই খড়ারে মাথা উঁচু করে সন্ন্যাসী দোলই চেয়ারম্যান হয়েছেন। পূর্বা ভুঁইয়া উপ-পুরপ্রধান হয়েছেন। আজ আমরা খুশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘাটালের পাঁচটি পুরসভাই সসম্মানে উপহার দিতে পেরেছি।” একই সঙ্গে দলের একাংশের প্রতি তাঁর বার্তা, ‘‘দুর্ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, যাঁরা জড়িত সবার প্রতি দলের নজর রয়েছে। দল উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রয়োজনে আরও নেবে।” তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতিরও হুঁশিয়ারি, “দলের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ গদ্দারি করলে দল ছেড়ে কথা বলবে না। এটা সবার আগে আমাদের বুঝতে হবে।’’