নেতাইয়ে শহিদ স্মরণে ছিল তৃণমূলের দলীয় পতাকাও। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
গত বছর নেতাইয়ের পথে পুলিশে তাঁকে আটকেছিল। ফিরে গিয়েছিলেন তিনি। নেতাই-কাণ্ডের ১২তম বর্ষে আর এলেন না রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তবে নেতাই দিবসে শহিদ স্মরণের মুখ্য উদ্যোক্তা তৃণমূল নেতৃত্বের আশঙ্কা ও আক্রমণে শুভেন্দু কিন্তু থেকেই গেলেন। মঞ্চে তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা শুভেন্দুর বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন। সঙ্গে রইল আশঙ্কা, শুভেন্দু এসে পড়বেন না তো!
শনিবার প্রায় আড়াই ঘন্টা শহিদ স্মরণসভা হয়েছে নেতাইয়ে। তদারকিতে ছিলেন প্রতিমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা। মঞ্চে একবারও বসতে দেখা যায়নি তাঁকে। এক পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। কখনও মঞ্চ থেকে নীচে নেমে চারপাশ ঘুরে দেখেছেন। শুক্রবার রাত থেকে শাসকদলের নেতা-নেত্রীরা বার বার খোঁজ নেন, শুভেন্দু আসছেন কি না। এ দিন সভা শুরুর আগে রটে যায়, গোপন পথে বাইকে আসতে পারেন শুভেন্দু। লালগড় ও নেতাই গ্রামে ঢোকার সব রাস্তায় পুলিশে ছয়লাপ করে দেওয়া হয়। বিভিন্ন জায়গায় নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন জেলার দুই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, তিন জন এসডিপিও, চারটি থানার আইসি সহ পাঁচজন ইন্সপেক্টর। রাস্তাতেও ছিল পুলিশের নজরদারি।
বেলা পৌনে এগারোটা নাগাদ সভা শুরু হয়। পরিবহণমন্ত্রী সুশান্ত চক্রবর্তী শহিদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের কম্বল, শাল ও পোশাক বিতরণ করেন। মিনিট পঞ্চাশের বক্তব্যে মন্ত্রীর নিশানায় ছিলেন শুভেন্দুই। সুশান্ত বলেন, ‘‘সন্ত্রাস সৃষ্টিকারী অত্যাচারী সিপিএমের হার্মাদরা এখন বিজেপিতে নাম লিখিয়েছে। বিজেপির নেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে সুকান্ত মজুমদাররা কেবল কুৎসা, মিথ্যাচার আর অপপ্রচার করেন।’’ পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের কো-অর্ডিনেটর অজিত মাইতিও শুভেন্দুকে নিশানা করে বলেন, ‘‘নেতাইয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা হয়েছিল। সেটা রুখে দিয়েছেন নেতাইয়ের প্রকৃত উত্তরাধিকারী তৃণমূলের কর্মীরা। গত বছর একটু ছায়া-ছায়া ছিল। এ বছর আকাশ ফুঁড়ে সূর্য উঠেছে। তাই চড়া রোদে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি আর এ মুখো হওয়ার সাহস পায়নি।’’
দুপুর একটা নাগাদ সভাস্থলে পৌঁছন মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। শহিদ পরিবার ও আহতদের হাতে আর্থিক সহায়তা তুলে দেন তিনি। নেতাইকে আত্মবলিদানের তীর্থক্ষেত্র অ্যাখ্যা দিয়ে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে মানস বলেন, ‘‘নেতাইকে ভোলা যাবে না। এটা রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়। সভাধিপতি, বিধায়করা সরকারের মুখ। নেতাইকে স্মরণীয় স্থান চিহ্নিত করে নেতাইবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’’ এ দিন সভামঞ্চ থেকে মানস নামতেই নেতাই গ্রামের ঊষা ধীবর বলেন, ‘‘বক্তৃতা অনেকক্ষণ শুনলাম। আমি যে সরকারি প্রকল্পে বাড়ি পাইনি। সেটা দেখুন।’’ মানস জবাব দেন, ‘‘এগারো লক্ষ বাড়ি তালিকা থেকে বাদ গিয়েছে।’’
বিজেপিতে যাওয়ার পরেও দু’বছর শুভেন্দু নেতাই দিবসে এসেছিলেন। এ বার এলেন না। বিজেপির তরফেও নেতাই নিয়ে কোনও কর্মসূচি হল না। কেন? বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি দেবাশিস কুণ্ডু বলছেন, ‘‘নেতাইয়ের শহিদদের ও শহিদ পরিবারের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা-সমবেদনা রয়েছে। নেতাই নিয়ে আমরা কোনও দিন দলীয় কর্মসূচি পালন করিনি। শুভেন্দুবাবু কেন আসেননি সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার।’’ সশরীরে না এলেও সমাজমাধ্যমে অবশ্য নেতাইয়ের শহিদদের স্মরণ করেছেন শুভেন্দু।
এ দিন নেতাই গ্রামের আমজনতাকে সে ভাবে সভাস্থলে দেখা যায়নি। সভাস্থলও ফাঁকা ফাঁকা ছিল। নেতাইয়ের বাইরের লোকজনই ছিলেন বেশি। তৃণমূলের পতাকাও ছিল। ভিড় প্রসঙ্গে মানসের ব্যাখ্যা, ‘‘ধাপে ধাপে মানুষ এসেছেন। ঝাড়গ্রাম থেকে নেতাই, সব জায়গা থেকে মানুষ এসেছেন।’’ বিরবাহাও বলছেন, ‘‘শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন অনেকে, শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে গিয়েছেন। আবার অনেকে এসেছেন।’’