তৃণমূলের প্রচারে সেই স্থায়ী পুরবোর্ডের কথা

গত পুরভোটের পর রেলশহরে বোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূলই। অবশ্য তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। দু’বছর পেরনোর পরপরই ক্ষমতাচ্যুত হয় শাসক দল। পুরবোর্ডের দখল যায় কংগ্রেসের হাতে। এ বার তাই পুরভোটে স্থায়ী পুরবোর্ডকেই প্রচারের হাতিয়ার করছে শাসক দল। রীতিমতো প্রচার গাড়ি বের করে এই বিষয়টি মানুষের সামনে তুলে ধরছে তৃণমূল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫৬
Share:

খড়্গপুরের প্রচারে তৃণমূলের মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে। —নিজস্ব চিত্র।

গত পুরভোটের পর রেলশহরে বোর্ড গঠন করেছিল তৃণমূলই। অবশ্য তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড পাঁচ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেনি। দু’বছর পেরনোর পরপরই ক্ষমতাচ্যুত হয় শাসক দল। পুরবোর্ডের দখল যায় কংগ্রেসের হাতে। এ বার তাই পুরভোটে স্থায়ী পুরবোর্ডকেই প্রচারের হাতিয়ার করছে শাসক দল। রীতিমতো প্রচার গাড়ি বের করে এই বিষয়টি মানুষের সামনে তুলে ধরছে তৃণমূল।

Advertisement

শাসক দলের নেতাদের দাবি, গত পুরভোটের পর মানুষের রায়কে মর্যাদা দিয়ে তারাই বোর্ড গঠন করেছিল। তবে পরবর্তী সময় কংগ্রেস, বিজেপি ও বামেরা মিলে সেই পুরবোর্ডকে ক্ষমতাচ্যুত করে। রেলশহরে মানুষ স্থায়ী পুরবোর্ড না পাওয়ার জন্য দায়ী এই তিন দলই। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষ বলছেন, “গত পুরভোটের পর মানুষের রায়ে তৃণমূলই বোর্ড গঠন করেছিল। পরে কংগ্রেস, বিজেপি এবং বামেরা চক্রান্ত করে সেই বোর্ডকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এটা শহরের মানুষও জানেন। আমরা নিশ্চিত, মানুষের সমর্থন নিয়ে তৃণমূলই স্থায়ী পুরবোর্ড গঠন করবে।”

তৃণমূলের এই দাবিকে অবশ্য গুরুত্ব দিতেই নারাজ কংগ্রেস। দলের বিদায়ী পুরপ্রধান রবিশঙ্কর পাণ্ডের কথায়, “এটা অঙ্কের ব্যাপার। সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলর যাদের চাইবে, তারাই বোর্ড গঠন করবে। গত বার অনাস্থা আনা হয়েছিল ব্যাপক দুর্নীতি ও তোলাবাজির বিরুদ্ধে। আমাদের কিছু করতে হয়নি! ওরা (তৃণমূল) নিজেরাই পড়ে গিয়েছে!” বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাবলু বরম বলছেন, “দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ ছিল। আগামী দিনেও থাকবে।”অন্য দিকে, তৃণমূলের দাবি উড়িয়ে সিপিআইয়ের জেলা সহ- সম্পাদক বিপ্লব ভট্ট বলেন, “আমরা কেনাবেচাতে বিশ্বাস করি না। অনাস্থার ভোটাভুটিতে দলের কাউন্সিলররা যোগ দেননি। কংগ্রেস কেনাবেচা করেছিল। তৃণমূল কেনাবেচার চেষ্টা করেছিল। আশা করি, স্থায়ী পুরবোর্ড গড়ার সমর্থন মানুষ আমাদের দেবেন।”

Advertisement

রেলশহরে সবমিলিয়ে ৩৫টি আসন। ২০১০ সালের পুরভোটে এরমধ্যে ১৫টি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। ১২টি দখল করেছিল কংগ্রেস। ৩টি সিপিএম, ৩টি সিপিআই, ১টি বিজেপি ও বাকি ১টি বাম- সমর্থিত নির্দল। একক ভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখলে থাকায় গোড়ায় পুরবোর্ড গঠন করে তৃণমূলই। বাইরে থেকে সমর্থন করে কংগ্রেস। পুরপ্রধান হন জহরলাল পাল। উপ-পুরপ্রধান হন তৃণমূলের শহর সভাপতি দেবাশিস চৌধুরীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তুষার চৌধুরী। ২০১১ সালে সিপিএমের দুই কাউন্সিলর দলবদল করে আনুষ্ঠানিক ভাবে কংগ্রেসে যোগ দেন। ২০১২ সালের ২৭ জানুয়ারি পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে সমর্থন প্রত্যাহার করে কংগ্রেস। দুর্নীতির অভিযোগেই তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনে কংগ্রেস। ২০১৩ সালের ৫ অগস্ট পুরপ্রধান নির্বাচনে পরাজিত হল তৃণমূল। নবনির্বাচিত পুরপ্রধান হিসেবে শপথ নেন কংগ্রেসের রবিশঙ্কর পাণ্ডে।

রেলশহরে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল নতুন কিছু নয়। পুরবোর্ড গঠনের পরও কোন্দল প্রকাশ্যে এসেছে। শাসক দলে জহর-শিবির ও দেবাশিস-শিবির আড়াআড়ি ভাগ হয়েছে। অবশ্য তৃণমূল নেতৃত্ব কখনওই এই কোন্দলের কথা মানতে চান না। এক বার কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটি এড়িয়ে গিয়েছিল তৃণমূল। দলের এক সূত্রের দাবি, কৌশলেই ওই ভোটাভুটি এড়ানো হয়েছিল। না- হলে দলের ঐক্যবদ্ধ চেহারাটা তখনই বেআব্রু হয়ে যেত! পরে অনাস্থা ভোট নিয়ে হাইকোর্টে মামলা করে কংগ্রেস। হাইকোর্টের নির্দেশেই পুরবোর্ডের ক্ষমতায় হাতবদল হয়। ততদিনে সিপিএমের দুই কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন। দুর্নীতির প্রশ্নে কংগ্রেসের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের পাশে দাঁড়ান রেলশহরের একমাত্র বিজেপি এবং নির্দল কাউন্সিলর।

তাই ভোটের আগে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে রেলশহরে পুরভোটের প্রচারে স্থায়ী পুরবোর্ড গঠন প্রধান হাতিয়ার হয়ে উঠেছে। বিজেপির জেলা সভাপতি তুষার মুখোপাধ্যায়ের কথায়, “বিগত নির্বাচনগুলোয় শহরের মানুষ কখনও বামফ্রন্ট, কখনও কংগ্রেস, কখনও তৃণমূলকে পুরবোর্ড গঠনে সমর্থন দিয়েছেন। অবশ্য ওই রাজনৈতিক দলগুলো মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া ছাড়া শহরের কোনও উন্নয়ন করতে পারেনি। কথা দিচ্ছি, বিজেপি পুরবোর্ডের ক্ষমতায় এলে স্বচ্ছভাবে, স্বচ্ছতার সঙ্গে মানুষের কাছে পুর-পরিষেবা পৌঁছে দেবে।” রেলশহরের বিদায়ী পুরপ্রধান কংগ্রেসের রবিশঙ্করবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “স্থায়ী দুর্নীতিমুক্ত স্বচ্ছ পুরবোর্ড যে একমাত্র কংগ্রেসই গঠন করতে পারে, তা শহরের মানুষ জানেন। আমরা নিশ্চিত, মানুষের সমর্থন নিয়ে খড়্গপুরে কংগ্রেসই এ বার একক ভাবে পুরবোর্ড গঠন করবে।”

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement