চন্দ্রকোনা রোডে সিপিএমের প্রচার। — নিজস্ব চিত্র।
এই প্রথম তাঁর নেতৃত্বে পশ্চিম মেদিনীপুরে পঞ্চায়েত ভোট যুদ্ধে নেমেছে সিপিএম। অথচ তাঁর নিজের সংসদেই গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রার্থী দিতে পারল না দল।
সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষের বাড়ি চন্দ্রকোনা রোডের (গড়বেতা ৩) উড়িয়াসাই অঞ্চলের বেনাচাপড়া গ্রামে। সেই উড়িয়াসাই পঞ্চায়েতের ১৪টি আসনের মধ্যে এবার ৭টি আসনে সিপিএমের প্রার্থীই নেই। তারমধ্যে বেনাচাপড়ার ১৮৬ নম্বর বুথে পঞ্চায়েত আসনে বিনা লড়াইয়েই জিতে গিয়েছেন তৃণমূলের ময়না রায়। ওই বুথটি এবার এসসি মহিলা সংরক্ষিত। সেখানেই ভোট দেন সুশান্ত। বেনাচাপড়ার পাশে পাটাইশোল বুথেও এসটি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী নেই সিপিএমের। তবে ওই বুথের পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে অবশ্য প্রার্থী আছে সিপিএমের।
১৮৭ নম্বর বীরসিংহপুর বুথে গ্রাম পঞ্চায়েত আসনে সিপিএম প্রার্থী করেছে সুশান্তের ভ্রাতৃবধূ অনিমা ঘোষকে। তিনি সুশান্তের জেঠতুতো ভাই নিমাই ঘোষের স্ত্রী। বেনাচাপড়ার পাশের আরও একটি বুথেও সিপিএমের প্রার্থী আছেন। জেলা সম্পাদকের ওই বুথে প্রার্থী দেওয়া গেল না কেন? সিপিএম সূত্রে খবর, ওই বুথের জন্য যে মহিলাকে ভাবা হয়েছিল তিনি শেষ বেলায় বেঁকে বসেন। তখন ওই এলাকায় সমিতির আসনে মনোনয়ন দেওয়া মিতালি দিগারকে তড়িঘড়ি করে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত আসনেও মনোনয়ন করানো হয়। একই প্রার্থী দুই আসনে মনোনয়ন করায় একটি বাতিল হতে পারে। সেই আশঙ্কায় সমিতির আসনে দলীয় কর্মী কাঞ্চন ভুঁইয়াকে প্রার্থী করে নতুন করে মনোনয়ন দেয় সিপিএম। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। কারণ মিতালির গ্রাম পঞ্চায়েত আসনের মনোনয়নটিই বাতিল হয়ে যায়। ফলে সমিতির আসনেই তাঁকে প্রতীক দেয় সিপিএম। শেষ বেলায় কাঞ্চনের মনোনয়ন বাতিল করানো সম্ভব হয়নি। ফলে তিনি 'নির্দল' হয়েই রয়ে গিয়েছেন।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদলের পর বেনাচাপড়া কঙ্কাল কাণ্ডে নাম জড়িয়েই জেলে যেতে হয়েছিল সুশান্তকে। তিনি এখন জামিনে আছেন। তবে সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। এবার তাঁর বুথে গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী না থাকা নিয়ে নতুন করে অস্বস্তি শুরু হয়েছে বামেদের অন্দরে। সিপিএমের বহরাশোল এরিয়া কমিটির সম্পাদক স্বপন বারিক বলছেন, "ওই আসনের মহিলা প্রার্থী শেষ মুহুর্তে সরে যাওয়ায় সমস্যা হল। জাতিগত শংসাপত্র না পাওয়ায় ওই আসনে প্রার্থী দেওয়া যায়নি। তবে বেনাচাপড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের দু’টি আসনে ও পঞ্চায়েত সমিতির একটি আসনে দলের প্রার্থী আছেন। প্রচারও শুরু হয়েছে।" সুশান্তের কথায়, "বেনাচাপড়ায় গ্রাম পঞ্চায়েতের ৩টি আসনের মধ্যে দু’টি আসনে প্রার্থী আছে আমাদের। একটিতে জাতিগত শংসাপত্র না পাওয়ায় দেওয়া যায়নি। তবে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদে আমাদের প্রার্থী আছেন ওই আসনে।"
শুধু বেনাচাপড়াই নয়, সুশান্ত ঘোষের এলাকা বলে পরিচিত গড়বেতা ও চন্দ্রকোনা রোডের অনেক আসনেও এবার সিপিএমের প্রার্থী নেই। গড়বেতা ১ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে ২১৩ টি আসনের মধ্যে ১৩১টি আসনে, পঞ্চায়েত সমিতির ৩৬ টির মধ্যে ২৪ টিতে, ৩ টি জেলা পরিষদ আসনে প্রার্থী আছে সিপিএমের। সুশান্তের বাড়ি যে ব্লকে সেই গড়বেতা ৩ অর্থাৎ চন্দ্রকোনা রোডে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১৫১ টি আসনের মধ্যে ৯০টিতে, পঞ্চায়েত সমিতির ২৪টি আসনের মধ্যে ২১ টিতে আছে সিপিএমের প্রার্থী। জেলা পরিষদের ৩ আসনে অবশ্য এখানেও প্রার্থী আছে তাদের। ৬ বারের বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত বলছেন, "গতবারের তুলনায় অনেক বেশি আসনে এবার প্রার্থী দেওয়া হয়েছে। দলের প্রতি মানুষের সমর্থন বাড়ছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে।" জেলা তৃণমূলের কো অর্ডিনেটর অজিত মাইতি বলেন, "উনি (সুশান্ত ঘোষ) তো মানুষের নেতা নন, কঙ্কালের নেতা। তাই মানুষ ভয়ে প্রার্থী হতে চাইছে না ওঁদের দলে। অথচ মুখে বলবে তৃণমূল প্রার্থী দিতে দেয়নি।"