প্রস্তুতি: বাউল ও লোকগান সংরক্ষণের বার্তা দিতে সাজানো হচ্ছে মডেল। ছবি: দেবরাজ ঘোষ
কোথাও পাহাড়-বণ্য প্রাণীর দেশ, কোথাও বরফের ঘর, সঙ্গে কোথাও বাউল গানে মেতেছে যুবকের দল।
এমনই রকমারি পরিবেশে আজ, সোমবার বাগ্দেবীর আরাধনা হবে স্কুল-কলেজ থেকে অফিস-ক্লাবে। রবিবার দিনভর খড়্গপুর শহরে চলেছে তারই প্রস্তুতি। রবিবার ছুটির দিনেও স্কুলে এসে পুজোর জোগাড়ে মেতেছে পড়ুয়ার দল।
এ বার শহরের ইন্দা বালিকা বিদ্যালয়ের সরস্বতী পুজোর থিমে উঠে এসেছে ‘চাঁদের পাহাড়’ থেকে ‘আমাজন অভিযান’। কাগজ, মাটি, থার্মোকল ব্যবহার করে সাজানো হয়েছে মণ্ডপ। স্কুলের সাইকেল স্ট্যান্ডে তৈরি সেই মণ্ডপের চারদিকে রয়েছে, আগ্নেয়গিরি, চাঁদের পাহাড়, শঙ্করের মডেল, কঙ্কাল, অ্যানাকোন্ডা, কুমির-সহ নানা বন্য প্রাণীর রোমাঞ্চকর মডেল। আর বিভূতিভূষণের কাহিনি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিতে। তবে প্রতিমা সাবেক। পুজো আয়োজনের এই ভাবনা মূলত কম্পিউটার সায়েন্সের শিক্ষিকা সোমা সেন ও ইংরাজির শিক্ষিকা অদিতি বর্মন রায় পাঠকের। সোমাদেবী বলেন, “আমরা দুই শিক্ষিকা মিলে এই থিম সাজাতে উদ্যোগী হলেও দশম শ্রেণির ছাত্রীরা উৎসাহ নিয়ে কাজটা করেছে। পড়ুয়াদের আনন্দ দিতেই এই আয়োজন।”
ইন্দার কৃষ্ণলাল শিক্ষা নিকেতনের পুজোর থিম এ বার ইগলু। স্কুলের হলঘরে পুজোর আয়োজন হলেও বাইরের গেট তৈরি হয়েছে অ্যান্টার্টিকার আদলে। আর হলঘরের ভিতরে বরফের ঘর গড়ে তোলা হয়েছে কাপড়, থার্মোকল ও তুলো দিয়ে। পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা স্কুলের শিক্ষিকা সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গত বছর ফেসবুক, তার আগে ছুটির মজার মতো থিম করেছিলাম। এ বার তিন দিনের মধ্যে ইগলুর আদলে এই মণ্ডপ সাজাচ্ছি। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীরা খুব পরিশ্রম করছে। আশা করছি পরিশ্রম সার্থক হবে।” আর্য বিদ্যাপীঠের সরস্বতী পুজোর মণ্ডপ আবার সেজেছে যামিনী রায়ের একাধিক ছবিতে।
পিছিয়ে নেই পাড়ার ক্লাবগুলিও। সুভাষপল্লি গোল্ডেন ক্লাবের ১৯তম বর্ষের পুজোর থিমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গ্রাম্য পরিবেশ। বাঁশ, চট, খড় দিয়ে কুড়েঘরের আদলে মণ্ডপ তৈরি হয়েছে। সেই মণ্ডপেই ‘বর্ণ পরিচয়’ থেকে দেবীর আবির্ভাবের আদলে রয়েছে প্রতিমা। পুজো কমিটির সভাপতি সোহম ঘোষ বলেন, “ক্লাব সদস্যদের উদ্যোগেই পুজো হয়। বাইরে থেকে চাঁদা তোলা হয় না।’’ প্রতি বছরের মতো এই পুজোয় সামাজিক কর্মসূচি, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনও থাকছে।
মালঞ্চর উটপুকুরের নিউ বাম্পার বয়েজ ক্লাবের পুজো এ বার ১৯ বছরে পড়ল। এখানে বাংলায় লোক গান সংরক্ষণের থিমে মণ্ডপ সাজানো হয়েছে। খরিদার শিল্পী নয়ন পালের ভাবনায় গড়া হয়েছে থিমের প্রতিমা। সেই সঙ্গে রয়েছে কার্তিক দাস বাউল, পূর্ণচন্দ্র বাউল ও অদিতি মুন্সীর মডেল। দেখানো হয়েছে, বীণাবাদনরত দেবী এই তিনজনকে গান শেখাচ্ছেন। পুজোর কর্মকর্তা শান্তনু দাস বলেন, “আমরা প্রতি বছর থিমের পুজো করি। আগে ঘুড়ি, নৌকোর আদলে মণ্ডপ করে সাড়া পেয়েছি। এ বার বাউল ও লোক গানের চর্চাকে বাঁচিয়ে রাখার বার্তা দিতেই এই থিম বেছেছি।”