nayachar

Nayachar: দ্বীপে বইছে ম্যাডাম বুড়ি, থ প্রশাসন 

হলদিয়ার মীনদ্বীপের প্রত্যন্ত বাবলাতলা পেরিয়ে একটা জায়গায় এসেছিল সমীক্ষক দল। জায়গার নাম ১৪১ নম্বর বাঁধের মাথা।

Advertisement

আরিফ ইকবাল খান

নয়াচর শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৭:১৭
Share:

ভগবতী নায়েক (বাঁদিকে) এবং সুকুমার হাজরা। নিজস্ব চিত্র 

এক হাতে নোটবুক। ফিতে অন্য হাতে। সরকারিবাবু জমির মাপ নিলেন। জানতে চাইলেন, ‘‘এ খালের নাম কী?’’

Advertisement

ভিড় জবাব দিল, ‘‘সাহেব এ খালের নাম ম্যাডাম বুড়ির খাল।’’ ভুরু কুঁচকে সাহেব বললেন, ‘‘অন্য নাম নেই?’’ ভিড় বলল, ‘‘না।’’ আরেক খালের ধারে গিয়েও একই অভিজ্ঞতা। সে খালের নাম, ‘‘পাগলা ভোলার খাল।’’ এরা কারা? সাহেব অর্থাৎ বুধবার নয়াচরে জমি সমীক্ষায় আসা প্রশাসনের আধিকারিকেরা খুঁটিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের পর যা জানলেন তাতে কপালে উঠল চোখ। যে দু’টি খালের মাধ্যমে নয়াচরের বাকি অংশ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত, সেগুলি নামকরণ হয়েছে জীবিত ব্যক্তিদের নামে। কুড়ি-বাইশ বছর ধরে লোকমুখে পরিচিতি পেয়েছে এই নাম।

ডাক পড়ল দু’জনেরই। ১৬ সদস্যের সমীক্ষক দলের সামনে হাজির হলেন ভগবতী নায়েক। বয়স বছর ৭০। তাঁকে দেখিয়েই ভিড় থেকে একজন বলে উঠলেন, ‘‘স্যার, ইনি ম্যাডাম বুড়ি।’’ লাজুক হেসে ভগবতী জানালেন, তিনিই ম্যাডাম বুড়ি। এবং ভালবেসে দেওয়া এই নাম ভালবাসেন তিনিও। ম্যাডাম বুড়ির দুই ছেলে। রাজু এবং রাজেশ। সকলেই মাছ চাষের সঙ্গে যুক্ত। তাঁদের আসল বাড়ি দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপে। বিঘা দশেক জমিতে বাগদা, পারশে চাষ করেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা মনা আড়ি জানালেন, ম্যাডাম বহু আগে থেকেই দ্বীপে আছেন। ভয়ডরহীন মহিলা। ঝড়, ঝঞ্ঝা, বুনো মোষ, কটালের জলে প্লাবন এমনকি, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের সময়েও ম্যাডাম ছিলেন এই দ্বীপে। মনার কথায়, ‘‘ওঁর (ম্যাডামের) বিশাল অভিজ্ঞতা। তাই আমাদের এখানের সব চেয়ে দরকারি খালের নাম ওঁর নামেই রয়েছে।’’

Advertisement

এ বার পালা পাগলা ভোলার। আসল নাম সুকুমার হাজরা। এ নাম হল কী ভাবে? সুকমার বললেন, ‘‘বহু যুগ আগে এখানে এসেছি। এই খালেই প্রথম প্রথম মাছ ধরতাম। তাই আমার নামেই এই খালের নাম দিয়েছেন গ্রামবাসীরা।’’ আসল রহস্য ফাঁস করলেন স্থানীয় বাসিন্দা রাজেশ নায়েক। তিনি জানালেন, সুকুমার কাকা খালেই সব সময় পড়ে থাকতেন। তাই ওঁর ডাক নামেই সকলে ওই খালের নাম দিয়েছে।

শুধু কী নয়াচর, দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার কাকদ্বীপ ও নিশ্চিন্দিপুরের মানুষও এ দু’টি খালের সঙ্গে পরিচিত। বছরের পর বছর লোকমুখে ‘ম্যাডাম বুড়ি’ ও ‘পাগলা ভোলা’ খাল নামে পরিচিতি পেয়েছে দু’টি খাল। এখন দু’টি খালের মধ্যে রাস্তা হবে। এক মৎস্য দফতরের আধিকারিক বলেন, ‘‘প্রস্তাবে রেখেছি ম্যাডাম বুড়ি থেকে পাগলা ভোলা খাল পর্যন্ত রাস্তার কথা।’’

হলদিয়ার মীনদ্বীপের প্রত্যন্ত বাবলাতলা পেরিয়ে একটা জায়গায় এসেছিল সমীক্ষক দল। জায়গার নাম ১৪১ নম্বর বাঁধের মাথা। মৎস্য, ভূমি-সহ বিভিন্ন দফতরের প্রতিনিধিকে নিয়ে গঠিত সমীক্ষক দল কথা বলতে শুরু করেছিলেন স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে। রাস্তার জন্য খালের নাম জানতে গিয়ে যেন সমুদ্রে পড়লেন তাঁরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement