উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাস। প্রতীকী ছবি।
ক্রমেই উদ্বেগ বাড়াচ্ছে অ্যাডিনোভাইরাস। জ্বর-শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত শিশু রোগীর সংখ্যা বাড়ছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল-সহ পশ্চিম মেদিনীপুরের হাসপাতালগুলিতে। রোজই এমন উপসর্গ নিয়ে শিশুরা আসছে হাসপাতালে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা। পরিস্থিতি এমন চললে শিশু ওয়ার্ডে শয্যা সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা। এখনই মেডিক্যালের শিশু ওয়ার্ডে এক-একটি সাধারণ শয্যায় দু’জন করে শিশুকে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জেলার অন্য হাসপাতালেও শিশু ওয়ার্ডের বেশিরভাগ শয্যাই ভর্তি থাকছে।
রাজ্যের নির্দেশ, ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন’ (এআরআই) উপসর্গযুক্ত শিশুদের উপর এখন বিশেষ নজর রাখতে হবে। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুরেও ২০ ফেব্রুয়ারি থেকে নজরদারি শুরু হয়েছে। ২০ থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি— এই ৬ দিনে জেলার বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে এআরআই উপসর্গ নিয়ে ১০৫ জন শিশু ভর্তি হয়েছে। দিনে গড়ে ১৭- ১৮ জন ভর্তি হয়েছে। রবিবার এই উপসর্গের শিশু ভর্তি বেড়েছে। এ দিন সবমিলিয়ে ২৯ জন ভর্তি হয়েছে। নানা উপসর্গ নিয়ে মেদিনীপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১০৬ জন শিশু।
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের দাবি, গত কয়েকদিনে এআরআই উপসর্গ নিয়ে যারা ভর্তি হয়েছিল, তাদের মধ্যে ৮৭ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে। মেদিনীপুর মেডিক্যালের এক আধিকারিক মানছেন, এখন শিশু বিভাগের সাধারণ শয্যায় দু’জন করে শিশুকে ভর্তি রাখতে হচ্ছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী বলেন, ‘‘শয্যার সমস্যা নেই। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা তৈরি। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বেশ কিছু পদক্ষেপ করা হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।’’ মেদিনীপুর মেডিক্যালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তারাপদ ঘোষ বলছেন, ‘‘মূলত ইনফ্লুয়েঞ্জায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে শিশুরা। কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে।’’
জেলা স্বাস্থ্য দফতর হাসপাতালগুলিকে জানিয়েছে, শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে এলে ফেরানো যাবে না কোনও শিশুকে। অপ্রয়োজনে কাউকে কলকাতার হাসপাতালে রেফার করা যাবে না। হাসপাতালগুলিকে শিশুদের জন্য ভেন্টিলেটর এবং অক্সিজেনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতেও বলা হয়েছে। নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার জন্য বাড়তি ‘পেডিয়াট্রিক বেড’-এর বন্দোবস্ত রাখতে হবে। জেলার এক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘প্রতি বছর শীতের শেষে অথবা বসন্তের শুরুতে শ্বাসকষ্টজনিত এই সমস্যা দেখা যায়। এই বছর রোগের কিছুটা বাড়বাড়ন্ত হয়েছে।’’
একসঙ্গে এত শিশু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ায় অ্যাডিনোভাইরাস সংক্রমণের আবহে স্বাভাবিকভাবে উদ্বেগও বেড়েছে। জেলার পরিস্থিতি কেমন? এআরআই উপসর্গ নিয়ে শনিবার পর্যন্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে ভর্তি ছিল ৬২ জন শিশু। এরমধ্যে ১৮জন শিশু ভর্তি হয়েছে ওই দিনই। ওই ৬২জন শিশুর মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রয়েছে ৩২জন, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটিতে ১৪জন, শালবনি সুপার স্পেশালিটিতে ২জন, ডেবরা সুপার স্পেশালিটিতে ৬জন, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে রয়েছে ৮জন। আর শনিবার ভর্তি হওয়া ১৮জন শিশুর মধ্যে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৭জন, ঘাটাল সুপার স্পেশালিটিতে ৬জন, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে ৫জন।
একাধিক শিশুর অবস্থা সঙ্কটজনক। মেদিনীপুর মেডিক্যালে ভেন্টিলেশনে রয়েছে এক জন, ‘পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ বা পিকু-তে রয়েছে দু’জন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ৫জন শিশুর নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে কলকাতার স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনে। ওই ৫ জনই মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন। ওই শিশুরা অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে, এমন আশঙ্কা রয়েছে। নিশ্চিত হতে নমুনা পরীক্ষায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত। জেলার এক স্বাস্থ্যকর্তা বলেন, ‘‘জ্বরে আক্রান্ত শিশুদের কেউ অ্যাডিনোভাইরাসের সংক্রমণের কবলে পড়েছে কি না, তা জানতে ভাইরাল-প্যানেল পরীক্ষা দরকার। তাই কয়েকজনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে।’’