বার্তা: ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বিধায়ক জুন মালিয়া। মেদিনীপুরের ফেডারেশন হলে। শুক্রবার। নিজস্ব চিত্র
দলের একাংশ কাউন্সিলরের ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণা। পুরপ্রধান সৌমেন খানের উপর ‘অনাস্থা’ প্রকাশ করে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি। এই আবহে মেদিনীপুরে এসে বিধায়ক জুন মালিয়া দাবি করলেন, ‘‘এখানে কোনও অনাস্থা আসছে না।’’ সঙ্গে জুড়েছেন, ‘‘যাঁরা এই ধরনের কথা ছড়াচ্ছেন, তাঁদের আমি সতর্ক করে দিতে চাই। এ সব ছড়াতে থাকলে দলও কড়া ব্যবস্থা নেবে।’’ এমন দাবি কীসের ভিত্তিতে? জুনের জবাব, ‘‘আমি কলকাতা থেকে (রাজ্য নেতৃত্বের থেকে) অনুমতি পেয়েছি বলেই তো বলছি।’’
শহর মেদিনীপুরে তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল রয়েছে। পুরপ্রধান সৌমেন খানের সঙ্গে ‘বিরোধ’ রয়েছে কাউন্সিলর তথা তৃণমূলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পাণ্ডবের। সৌমেন বিধায়ক জুনের অনুগামী হিসেবে পরিচিত। বিশ্বনাথ দলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরার অনুগামী হিসেবে পরিচিত। যুযুধান পক্ষ সচরাচর একে অপরের কর্মসূচি এড়িয়েই চলে। মেদিনীপুরে তৃণমূলের কাউন্সিলর রয়েছেন ২০ জন। এরমধ্যে সৌমেন- শিবিরে ৯ জন, বিশ্বনাথ- শিবিরে ১১ জন। বিভিন্ন কর্মসূচিতে এই বিভাজনই দেখা যায়। অভিষেকের কাছে যে ‘অনাস্থা’ চিঠি গিয়েছে, সেখানে বিশ্বনাথ সহ ১১ জন কাউন্সিলরের সই রয়েছে। ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলরদের বক্তব্য, তাঁরা সমস্যার কথা আগেই জেলা সভাপতিকে জানিয়েছেন। সুরাহা হয়নি। তাই অভিষেককে চিঠি।
‘অনাস্থা- সূচক’ ওই চিঠির প্রেক্ষিতে কী অবস্থান নেবেন দলের রাজ্য নেতৃত্ব, সে নিয়ে জল্পনা মেদিনীপুরে। ঠিক সেই সময়ে শহরে এসে জুনের ওই দাবি। সামনে পঞ্চায়েত ভোট। তার আগে বিশেষ কর্মসূচির ঘোষণা করেছে তৃণমূল। নাম ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’। আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে মেদিনীপুরেও শুরু হবে এই কর্মসূচি। প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। শুক্রবার এই কর্মসূচি নিয়েই মেদিনীপুরে সাংবাদিক বৈঠক করেন জুন। তাঁর পাশে দেখা গিয়েছে দলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতিকে। দেখা যায়নি সুজয়, বিশ্বনাথকে। এখানে দলের জেলা সভাপতি, শহর সভাপতি নেই কেন? শুরুতে জুনের জবাব, ‘‘এটা আমাদের দলের হেড কোয়ার্টার বুঝে নেবে!’’ পরক্ষণে তিনি জুড়েন, ‘‘এখানে আমাদের কো-অর্ডিনেটর (অজিত) আছেন। তিনি সবই দেখছেন। আশা করি, তিনি এগুলি হেড কোয়ার্টার অবধি পৌঁছে দেবেন। ইটস্ ওকে। থ্যাঙ্ক ইউ।’’
মেদিনীপুরে অনাস্থা আসবে না, এ কথা যে দলের রাজ্য নেতৃত্বই তাঁকে জানিয়েছেন, এদিন বারবার তা বোঝানোর চেষ্টা করেছেন বিধায়ক। জুনকে কখনও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি তো বলেই দিলাম যে, কলকাতা থেকে বলে দেওয়া হয়েছে অনাস্থা আসবে না।’’ আবার কখনও বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি আগ বাড়িয়ে কোনও কথা বলি না। বলতে ভালবাসি না। তাই আগে বলিনি। এটা আমি কলকাতা থেকেই জেনে এসেছি।’’ জুনের কথায় সম্মতি দিতে দেখা গিয়েছে অজিতকেও। জুন শুনিয়েছেন, ‘‘আমাকে ঘিরেও যদি কোনও মিথ্যা কথা ছড়ানো হয়, প্রমাণ ছাড়া, তাহলে আমিও কিন্তু আইনি ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হব।’’ বিধায়কের দাবিকে গুরুত্বই দিতে নারাজ তৃণমূলের ‘বিদ্রোহী’ কাউন্সিলররা। রাজ্য নেতৃত্বের না কি অনাস্থায় সায় নেই? দলের শহর সভাপতি বিশ্বনাথ বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। তাই এ নিয়ে কোনও মন্তব্যও করব না।’’ বিশ্বনাথ- অনুগামী এক কাউন্সিলর শোনাচ্ছেন, ‘‘অপেক্ষা করুন। আর দেখতে থাকুন সামনে কী কী হয়!’’