midnapore

Nayachar: নয়াচর ঘিরে নয়া স্বপ্ন

নবান্নের নির্দেশে সম্প্রতি নয়াচরে এসেছিলেন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অত্রি ভট্টাচার্য।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ ডিসেম্বর ২০২১ ০৮:১২
Share:

পাখির চোখে: সমীক্ষার সময় ড্রোনে নজরবন্দি নয়াচর। নিজস্ব চিত্র

ড্রোন উড়িয়ে, ম্যাপ হাতে হেঁটে নয়াচরে ঘুরলেন সেখানে যাওয়া সরকারি প্রতিনিধি দল। দ্বীপের বেশিরভাগ জায়গাতেই হাঁটা ছাড়া অন্য উপায় নেই। যদি প্রতিনি‌ধি দলের ঘোরাফেরার জন্য বেশ কিছু জায়গায় আগে থেকেই বাইক রাখা ছিল। যদিও বাদূরের কথা, হেঁটেও যাওয়া গেল না চরের বেশ কিছু জায়গায়। সেখানে নেওয়া হল ড্রোনের সাহায্য। হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের এইও কিশোর বিশ্বাস ও জেলা প্রকল্প আধিকারিক বুদ্ধদেব বাগ, সুতাহাটার বিডিও আসিফ আনসারি সহ অন্যান্য আধিকারিকরা এদিন ঘুরলেন নয়াচরে।

Advertisement

নবান্নের নির্দেশে সম্প্রতি নয়াচরে এসেছিলেন রাজ্যের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব অত্রি ভট্টাচার্য। তিনি এখান খেকে যাওয়ার পরেই তৎপরতা শুরু হয় জেলা প্রশাসনে। এতদিন ধরে এই দ্বীপ নিয়ে কার্যত উদাসীন ছিল জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি দ্বীপে বসবাসকারীদের আইনি পরিষেবা দিতেই গিয়ে তাঁদের কষ্টের কথা শুনেছিলেন বিচারকরা। সমবায়ের সাথে যুক্ত মাছ চাষিরা বারবার জেলা প্রশাসনের সাহায্য চাইলেও তাদের শোনা হয়নি বলেও অভিযোগ ওঠে। মীনদ্বীপে নামমাত্র থানা থাকলেও নেই স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল। এমনকী গোটা দ্বীপের সঠিক মানচিত্র পর্যন্ত মেলেনি প্রশাসনের কাছে। এ দিন তাই সমীক্ষার কাজে অন্যতম ভরসা ছিল
গুগল ম্যাপ।

দ্বীপবাসীর মূলত জীবীকা মাছ চাষ। কিন্তু লাঠি যার ভেড়ি তার এমন নিয়মই দ্বীপে এতদিনধরে চলে আসছে বলে অভিযোগ। যার জেরে মাছ চাষ থেকে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব থেকেও বঞ্চিত হতে বচ্জ়ছে রাজ্য সরকাররকে। অতিরিক্ত মুখ্যসচিব ঘুরে যাওয়ার পরেই শুরু হয় নয়াচরকে ঘিরে সরকারি ভাবনা-চিন্তা। এখানে বিভিন্ন পরিকাঠানো তৈরি করে উন্নয়নের সম্ভাবনা খতিয় দেখতে তৈরি হয় ‘টিম নয়াচর’। এদিন সেই দলই দুদিনের সফরে এসে পৌঁছয় নয়াচরে।

Advertisement

এদিন হলদিয়া থেকে হোভারক্রাফটে সরকারি কর্তারা দ্বীপে পৌঁছন। দুটি সমীক্ষক দল যায় বাবলাতলা ও টুপিঘর সংলগ্ন অঞ্চলে। বাকি দুটি দল যায় জীর্ণ জেটি ঘাট ও কোস্টাল থানা এলাকায়। সেখান থেকেই পৃথক ভাবে চলে সমীক্ষার কাজ। তবে দিনের শেষে প্রশাসনিক কর্তাদের দুটি দলই হলদিয়ায়
ফিরে আসে।

দ্বীপ ঘুরে প্রথমদিন কী পাওয়া গেল? সমীক্ষক দলের বক্তব্য, দ্বীপের একটি সামান্য অংশই তাঁরা দেখে এসেছেন। বিরাট এই দ্বীপে নদীর ভাঙাগড়া চলছেই। স্থানীয়দের সাথে কথা বলে নদী স্রোতের গতিপথ ও ভাঙনের ইতিহাস তাঁরা লিপিবদ্ধ করেছেন। প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, দ্বীপের বেশ কিছু জায়গায় পাকা ঘর, এমনকি প্রাচীর দেওয়া বাগান বাড়িও নজরে এসেছে তাঁদের। তবে সবচেয়ে বেশি নজরে এসেছে প্রচুর মাছের ভেড়ি। জেলা সহ মৎস্য সহ অধিকর্তা (প্রশাসন) সৌরেন্দ্র নাথ জানা বলেন, ‘‘প্রতি দলে ছয়জন করে আমরা ঘুরেছি। দ্বীপে বর্তমানে কী আছে আর ভবিষ্যতে কী করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাছের ক্ষেত্রে দেখলাম, জলপথেই তার বাণিজ্য করা হয়। এখান থেকে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নিশ্চিন্দিপুর ও পাগলাভোলা খাল থেকে মাছ যায় হলদিয়া ও কলকাতায়। এখানে ফ্লাড সেন্টার, হেলথ সেন্টার করা যায় কিনা দেখা হচ্ছে।’’

মৎস্য দফতর সূত্রে খবর, এখানে ফিশ ট্যুরিজিমের ভাল সুযোগ রয়েছে। স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও মাছ গবেষণাগার করার সাথে ব্যাপক সবুজায়ন করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। বন দফতরের পক্ষে এডিএফও বলরাম পাঁজা জানান, দ্বীপের একটি মাত্র অংশে ম্যানগ্রোভ টিকে আছে। বেশ কিছু জায়গায় ম্যানগ্রোভ কেটে ভেড়ি করা হয়েছে। তাঁর পরামর্শ, দ্বীপকে বাঁচাতে গেলে ব্যাপক ম্যানগ্রোভ লাগাতে হবে। দ্বীপ পরিদর্শনের আগে নয়াচরের সমবায়ের প্রতিনিধিরা মৎস্য দফতরের আধিকারিকদের কাছে তাঁদের একাধিক দাবি জানিয়ে‌ছেন। হলদিয়া মৎস্য সমবায়ের সাথে যুক্ত সঞ্জয় কলা জানান, নয়াচরের ১৩টি সমবায়কে টিকিয়ে রাখতে হবে । এছাড়া কেন্দ্রীয় সমবায়ের জন্য কিছু জায়্গা দেওয়া ও ৬টি নির্দিষ্ট জায়গা সনাক্ত করে মৎস্যজীবীদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে।

এদিন সরকারি সমীক্ষার দলের দ্বীপ সফরের মধ্যেই নয়াচরের ওসিকে বদলি করা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। সোমবার রাতেই নয়াচর কোস্টাল থানার ওসির অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঁশকুড়া থানায় বদলি করা হয়। স্থানীয় সূত্রে খবর, কিছুদিন আগেই নয়াচরে একটি ভেড়িতে কে মাছ ধরবে তা নিয়ে দুই পক্ষের বচসা বাধে। নয়াচর কোস্টাল থানার পুলিশ গিয়ে এলাকা নিয়ন্ত্রণে আনে। জোর করে মাছ ধরার অভিযোগে ৪ জনকে আটক করা হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ওসি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। চরবাসীর একাংশের দাবি, দুই পক্ষের পিছনে আছেন দুই তৃণমূল নেতা। ৪ জনকে আটক করার জন্যই বদলি করা হয়েছে ওসি কে।যদিও জেলা পুলিশের দাবি এটি রুটিন বদলি। নয়াচর কোস্টাল থানার নতুন ওসি হলেন অভিজিৎ পাত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement