প্রতীকী চিত্র।
তেলঙ্গানায় পশু চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনার দশ দিনের মাথায় পুলিশের এনকাউন্টারে মারা গেল ধৃত চার অভিযুক্ত। যা নিয়ে শোরগোল উঠেছে দেশজুড়ে। তেলঙ্গানা পুলিশের দাবি, বৃহস্পতিবার ভোররাতে ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় অভিযুক্তরা পুলিশের অস্ত্র ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ‘বাধ্য’ হয়ে পুলিশ গুলি চালালে মারা যায় চার অভিযুক্তই।
এনকাউন্টারে গণধর্ষণে অভিযুক্ত চারজেনর মৃত্যুর ঘটনায় অনেকেই বলতে শুরু করেছেন, এমন ঘটনায় এটাই ‘মোক্ষম’ শাস্তি। আবার কেউ বলেছেন, পুলিশের গুলি চালিয়ে মেরে ফেলা মানে পরোক্ষে বিচার ব্যবস্থার প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপন।
তেলঙ্গানার ঘটনায় যখন পুলিশের এনকাউন্টারকে অনেকেই সমর্থন করছেন, তখন উল্টোপথে হেঁটে বিচার ব্যবস্থার উপরেই আস্থা রেখেছেন কোলাঘাট গণধর্ষণ কাণ্ডে মৃত ছাত্রীর পরিবার। গত অগস্ট মাসের ২৪ তারিখ পুলশিটা এলাকায় গণধর্ষণের শিকার হয় ওই ছাত্রী। ঘটনার রাতেই কীটনাশক খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই ছাত্রী। ২৮ অগস্ট চার অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৯ অগস্ট কলকাতার হাসপাতালে মৃত্যু হয় ছাত্রীর। পরে আরও দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তেলঙ্গানার গণধর্ষণ ও খুনের ঘটনা এক আত্মীয়ের মুখে শুনেছেন মৃত ছাত্রীর বাবা-মা। শুক্রবার জানতে পারেন পুলিশের এনকাউন্টারে তেলঙ্গানার অভিযুক্তদের মৃত্যুর কথাও। যদিও এই খবর একজন ধর্ষিতার বাবা-মা হিসাবে তাঁদের খুশি করেনি। একমাত্র মেয়েকে হারানোর যন্ত্রণা এখনও বুকে বয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁরা। মেয়ের প্রতি অন্যায়ের সুবিচার পেতে নিয়ম করে ছুটতে হচ্ছে আদালতে। তবু পুলিশের গুলিতে ধর্ষণে অভিযুক্তদের মৃত্যু মানতে পারছেন না তাঁরা।
এ দিন শাড়ির আঁচলে চোখ মুছতে মুছতে মৃতা ছাত্রীর মা বলেন, ‘‘পুলিশ মেরে ফেললে তো অভিযুক্ত মুক্তিই পেয়ে গেল। আমাদের সবারই বিচার ব্যবস্থার ওপর আস্থা রাখা উচিত। বিচারের মাধ্যমে দোষীদের সাজা হলেই ভাল।’’ একই সুর বাবার গলাতেও। তাঁর কথায়, ‘‘মেয়ের উপরে অত্যাচারের বিচার পেতে আদালতে ছুটতে হচ্ছে। তবু আইনের প্রতি ভরসা আছে। চাই আইনের মধ্যে দিয়েই দোষীদের শাস্তি হোক।’’
তেলঙ্গানার ঘটনায় পুলিশের এমন ভূমিকার প্রশংসায় যখন সোস্যাল মিডিয়া তোলপাড়, তখন একই ঘটনার শিকার হওয়া এক ছাত্রীর বাবা মায়ের ‘অন্য কণ্ঠ’, বিচার ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের প্রতি আস্থার ভাবনাকে যেন আরও মজবুত করেছে।