দিঘাশ্রী। নিজস্ব চিত্র
বয়স তিন পেরোতে চলল। কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি দিঘায় আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার ‘দিঘাশ্রী’র। উদ্দেশ্য ছিল সরকারি নানা অনুষ্ঠান ছাড়াও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাকে ভাড়া দিয়ে রাজ্য সরকারের আয় হবে। কিন্তু সেই আয় নেই বললেই চলে। তাই এ বার রক্ষণাবেক্ষণের খরচ সামলাতে গোটা কনভেনশন সেন্টার পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে একটি হোটেল ব্যবসায় যুক্ত সংস্থাকে। শীঘ্রই গোটা কনভেনশন সেন্টারকে চার তারা ক্যাটেগরি করে গড়ে তোলা হবে। তারপরই পরিচালনার দায়ভার সরাসরি ওই সংস্থার হাতে হস্তান্তর করা হবে বলে কেএমডিএ (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি) সূত্রে জানা গিয়েছে।
কনভেনশন সেন্টার যা সৈকত শহরের অন্যতম দর্শনীয়। দিঘায় বেড়াতে এসে পর্যটকদের অনেকে ঘেরাটোপের বাইরে থেকে দেখে যান কয়েক কোটির এই নির্মাণকে। রথ দেখা কলা বেচার মতো সৈকত শহরে সমুদ্র দেখার পাশাপাশি সরকারি কিংবা বেসরকারি উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ মিটিং, বাণিজ্যিক সম্মেলন এবং কনফারেন্সের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছায় রাজ্যের পুর ও নগর উন্নয়ন দফতর এই সুবিশাল কনভেনশন সেন্টার তৈরি করে। খরচ হয়েছিল ৭০ কোটি ২৬ লক্ষ টাকা। মুখ্যমন্ত্রী নাম রাখেন ‘দিঘাশ্রী’। উদ্দেশ্য, সরকারি অনুষ্ঠানের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থাও এখানে মিটিং, কনভেনশন করতে পারবে। অবশ্যই নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে। তবে শুরুতেই কলকাতা থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ছোট মফস্সল শহরে এমন আন্তর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার তৈরি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন অনেকে। বিপুল খরচে তৈরি কনভেনশন সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণের খরচই বা উঠবে কী ভাবে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও উদ্বোধনের পরে বলা হয়েছিল কনভেনশন সেন্টার ভাড়া দিয়ে যে আয় হবে সেখান থেকেই রক্ষণাবেক্ষণের খরচ উঠবে।
কিন্তু ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের এখনও পর্যন্ত সর্বসাকুল্যে দশটিও মিটিং কিংবা কনফারেন্স এখানে হয়নি। এমনটাই জানা গিয়েছে প্রশাসন সূত্রে। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সুবিশাল এই কনভেনশন সেন্টারের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনিক মহলের একাংশে। আর সেই প্রশ্ন জিইয়ে রেখেই মাস কয়েক আগে কনভেনশন সেন্টার পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেএমডিএ (কলকাতা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি)-কে হস্তান্তর করে দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ। তারপর তারাও সেন্টারটি হস্তান্তর করতে চলেছে একটি হোটেল কর্তৃপক্ষকে। ইতিমধ্যে টেন্ডারও হয়ে গিয়েছে বলে খবর।
দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের (ডিএসডিএ) মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক মানস কুমার মণ্ডল বলেন, ‘‘উদ্বোধনের পর থেকে হাতেগোনা কয়েকটি মিটিং হয়েছে। রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আমরা কেএমডিএ-কে জানিয়েছিলাম। তারপর থেকে তারা কনভেনশন সেন্টার সম্পূর্ণরূপে পরিচালনা করছে।’’ কেএমডিএ-র দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার সুপ্রিয় মাইতি বলেন, ‘‘কনভেনশন সেন্টার একটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে বলে স্থির হয়েছে। টেন্ডারের মাধ্যমে কাদের হাতে দায়িত্ব থাকবে তাও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। তবে তারা চারতারা হোটেলের পরিষেবা যুক্ত করে দিতে বলেছে। সেইমতো আগামী নভেম্বর থেকে সংস্কারের কাজ শুরু হবে। সংস্কারের কাজ শেষ হলেই ওই সংস্থা গোটা কনভেনশন সেন্টার পরিচালনা করবে।’’
যথারীতি বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুদাম পণ্ডিত বলেন, ‘‘যেখানে ইচ্ছে সেখানে মুখ্যমন্ত্রী একটা করে বিশাল ভবন, পরিকাঠামো তৈরি করেছেন। কিন্তু কোথায় কোন প্রকল্প কতটা প্রাসঙ্গিক তাতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হয়নি। উন্নয়নের নামে সরকারি অর্থ নয়ছয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ দিঘার কনভেনশন সেন্টার।’’ স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের কারা প্রতিমন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘‘বিষয়টি কেএমডিএ দেখছে। তারাই এ বিষয়ে বলতে পারবে।’’