সঙ্কটে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি। —প্রতীকী চিত্র।
দিন কয়েক আগে খোদ শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে তাঁর নামে নালিশ জানিয়েছিলেন তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব। সংগঠনের বক্তব্য ছিল, রাজ্যের নির্দেশ ছাড়াই জেলায় বেশ কিছু প্রাথমিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সেই সব স্কুলের শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হচ্ছে। বদলির ক্ষেত্রে ‘মানবিক’ হচ্ছে না সংসদ। সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরা তাঁদের সঙ্গেও চূড়ান্ত অসহযোগিতা করছেন। ফলে, সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
ঘটনাচক্রে, এরপরই সরিয়ে দেওয়া হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান নারায়ণ সাঁতরাকে। সংসদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেবেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তরুণ সরকার। জেলায় এই নির্দেশ এসেছে। তরুণ বলেন, ‘‘নির্দেশ পেয়েছি। সেই মতো পদক্ষেপ করব।’’ আর নারায়ণের দাবি, ‘‘আমার মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই সরে যাচ্ছি।’’
তবে বন্ধ স্কুলগুলির শিক্ষকদের অন্যত্র বদলির নির্দেশও বাতিলের নির্দেশ দিয়েছেন জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (প্রাথমিক) তরুণ সরকার। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষক বদলির যে নির্দেশ হয়েছিল, এ দিন তা বাতিল করা হয়েছে।’’
পাঁচ বছরেরও বেশি সংসদ চেয়ারম্যান ছিলেন নারায়ণ। জানা গিয়েছে, নারায়ণের সঙ্গে তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা শাখার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধ আগে থেকেই ছিল। সম্প্রতি মেদিনীপুর শহরের কয়েকটি প্রাথমিক স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। স্কুলগুলির শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হচ্ছিল। জানা যাচ্ছে, দিন কয়েক আগেই শিক্ষামন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি অর্ঘ্য চক্রবর্তী। সঙ্গে ছিলেন সমিতির রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্র। শিক্ষামন্ত্রীর কাছে জেলা সংসদের কাজকর্ম এবং নারায়ণের নামে একগুচ্ছ নালিশ জানান অর্ঘ্য। অর্ঘ্য মানছেন, ‘‘সংগঠনের এক বৈঠকে কলকাতায় গিয়েছিলাম। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা করেছিলাম। সংসদ চেয়ারম্যানের কিছু অনৈতিক কাজকর্মের কথা তাঁকে জানিয়েছিলাম। মেদিনীপুরের কিছু স্কুল বন্ধ করা হল। শিক্ষকদের অন্যত্র বদলি করা হল। এ নিয়েও আমাদের অসন্তোষ ছিল। তা-ও শিক্ষামন্ত্রীকে জানাই।’’ সিপিএম প্রভাবিত নিখিলবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডলও বলেন, ‘‘স্কুল বন্ধ ও শিক্ষকদের বদলি করা নিয়ে আমাদেরও অসন্তোষ ছিল। দিন কয়েক আগে চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করে অসন্তোষের কথা জানিয়েছিলাম।’’ দিনে অফিস না করে সংসদের চেয়ারম্যান রাতে অফিস করতেন বলেও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে নালিশ জানানো হয়।
জানা যাচ্ছে, এক শিক্ষিকার বদলি নিয়েও সংসদ চেয়ারম্যানের সঙ্গে তৃণমূলের প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনের জেলা শাখার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠীর বিরোধ বেধেছিল। ওই শিক্ষিকা মেদিনীপুর শহরে এক স্কুলে কর্মরত ছিলেন। তিনি অসুস্থ। তাঁর টিউমারের চিকিৎসা চলছে। ওই স্কুলটি বন্ধ হয়েছে সংসদের নির্দেশ। শিক্ষিকার বদলি হয়েছে মেদিনীপুর গ্রামীণের এক স্কুলে। সমিতির দাবি ছিল, অসুস্থতার দিকটির কথা ভেবে ওই শিক্ষিকার ব্যাপারে ‘মানবিক’ হোক সংসদ। তাঁকে শহরের অন্য কোনও স্কুলে বদলি করা হোক। তবে সংসদ আমল দেয়নি।
নারায়ণ মেদিনীপুর গ্রামীণের নয়াগ্রাম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। সেখান থেকে ‘ছুটি’ নিয়েই জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান হয়েছিলেন। তিনি ফের তাঁর পুরনো পদে ফিরে যাবেন। শাসক দলের এক সূত্রের দাবি, সামনে পুরভোট রয়েছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের এই পদক্ষেপে শিক্ষকদের ক্ষোভে কিছুটা হলেও মলম পড়বে।