উৎসবের মরসুমে ভিড় পার্লারে। ঝাড়গ্রাম (বাঁ দিকে) ও মেদিনীপুর শহরে। ছবি: দেবরাজ ঘোষ ও সৌমেশ্বর মণ্ডল।
পুজোর ভিড়ে নজর কাড়তে কে না চায়। হাল ফ্যাশনের নতুন জামাকাপড়, কস্টিউম জুয়েলারির সঙ্গে জেল্লাদার ত্বক ও চুলের বাহারি স্টাইল যেন অবিচ্ছেদ্য। গত দু’বছর ছিল সংক্রমণের আতঙ্ক। প্রভাব পড়েছিল বিউটি সেলুনেও। রূপচর্চা চলেছিল বাড়িতেই। তবে করোনার ফিকে দিনগুলি কাটিয়ে এ বার বাঙালি উৎসবের উচ্ছ্বাসে ভেসেছিল। অথচ করোনা পূর্ববর্তী সময়ের চেহারায় কতটা ফিরল ব্যবসা, দুই জেলার বিউটি সেলুনে এখন চলছে সেই পর্যালোচনা!
পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলা জুড়েই বিউটি সেলুনের অভাব নেই। শহর থেকে গ্রামে রূপচর্চায় ব্যাঙের ছাতার মতোই গজিয়ে উঠেছে বিউটি পার্লার। পুরুষরা পথের ধারে থাকা ঝুপড়ি সেলুন থেকে রূপচর্চায় ভিড় জমাচ্ছেন অভিজাত ইউনিসেক্স বিউটি সেলুনে। পুজো এলে এই প্রবণতা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। দু’বছর করোনা সংক্রমণের থাবা সামলে এ বারও সেই প্রবণতা ধরা দিয়েছে। বিউটি সেলুনের মালিকদের দাবি, গত দু’বছরের তুলনায় এ বার ব্যবসা যথেষ্ট ভাল হয়েছে। তবে করোনা পূর্ববর্তী ২০১৯ সালের তুলনায় ব্যবসা কতটা ভাল জমেছে, সেই প্রশ্নে ঢোক গিলেছেন অনেকেই।
ফ্যাশনে জেলায় বরাবর এগিয়ে মিশ্র সংস্কৃতির রেলশহর খড়্গপুর। শহরের বুকে রয়েছে এক ডজনের বেশি অভিজাত ইউনিসেক্স বিউটি সেলুন। এছাড়াও শহর জুড়ে যত্রতত্র রয়েছে ছোট-বড় বিউটি পার্লার থেকে পুরুষদের সেলুন। পুজোর শহরে হেয়ার স্ট্রেটনিং, ফেসিয়াল, স্পা, কেরাটিন ট্রিটমেন্ট করে মণ্ডপে নজর কেড়েছে কমবয়সী থেকে মাঝবয়সীরা। এতে গত দু’বছরের ভরাডুবি কাটিয়ে উঠতে পারলেও পুরনো মেজাজ অধরা ছিল সব পার্লারেই। রেলশহরে অভিজাত ইউনিসেক্স বিউটি সেলুনের মালিক সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বলেন, “গত দু’বছরের তুলনায় এ বার ব্যবসা ভাল হয়েছে। আমার বিউটি সেলুনগুলিতে ভালই ভিড় হয়েছে। তবে এটা ঠিক ২০১৯ সালের মতো হয়তো ব্যবসা জমেনি। যদিও আমি সন্তুষ্ট।”
তবে মনমরা পাড়ার ক্ষৌরকর্মী সেলুন ব্যবসায়ীরা। খরিদা মিলনমন্দির এলাকার একটি সেলুন দোকানি বাপ্পা দাস বলেন, “করোনার তুলনায় ব্যবসা ভাল হলেও আগের মতো হয়নি। সত্যি বলতে আশাহত হয়েছি। টানা ভিড় পেলাম না। কম খরচের পরিষেবা নিয়ে গ্রাহকরা চলে গিয়েছে। মনে হচ্ছে মানুষের টাকার জোগান কমেছে।”
ঝাড়গ্রামের মতো জেলা সদরে গত দু’বছরের ব্যবসার মন্দাও কাটিয়ে উঠেছেন পার্লার ও সেলুন গুলি। ঝাড়গ্রাম শহরে মুম্বইয়ের নামি ইউনিসেক্স পার্লারের শাখার মালিক কৌশিক মহাপাত্র অবশ্য বলছেন, “প্রসাধন সামগ্রীর দাম অনেক বেড়েছে। কিন্তু পরিষেবা খরচ আমরা বাড়াইনি। কাস্টমারের সংখ্যা এ বার বেশি ছিল। তবে বেশি মূল্যের পরিষেবার তুলনায় কম দামের পরিষেবা নেওয়ার দিকেই ঝোঁক ছিল কাস্টমারদের।”
প্রায় সর্বত্র করোনা সংক্রমণের দু’বছরের তুলনা টেনেই ব্যবসা ভাল হওয়ার কথা শোনা গিয়েছে। মেদিনীপুরেও পার্লারগুলিতে এ বার পুজোর মুখে ভিড় হয়েছে। মেয়েদের মধ্যে চুল স্ট্রেট করার হিড়িক দেখা গিয়েছে। পুরুষদের পার্লারেও ভিড় হয়েছিল। শহরের এক জেনস পার্লারের কর্ণধার পাপ্পা ডোকরা বলছেন, “পুজোর আগের কয়েক দিন ভিড় হয়েছে পার্লারে।”
একই ভাবে গোপীবল্লভপুরে একটি জেন্টস পালার্রের মালিক সুকুমার বারিক বলছেন, “সকাল থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত দোকান পার্লার খোলা রাখতে হয়েছিল। গত দু’বছরের তুলনায় ভালই লক্ষ্মী লাভ হয়েছে।” প্রসাধনী ব্যবসাতেও বাড়তি মুনাফা দেখা যায়নি। ঘাটাল শহরের প্রসাধনী বিক্রেতা প্রশান্ত দাস বলছিলেন, পুজোয় আগের মত বিক্রি আর নেই। মানুষের যা চাহিদা থাকে, অনেকটাই এখন অনলাইনে মিটিয়ে নেয়। বাজারে এসে কেনাকাটা করার হিড়িক অনেকটাই কমে গিয়েছে। পুজোতে এ বার ভাল বিক্রি হয়নি।
গোয়ালতোড়, চন্দ্রকোনা রোড ও গড়বেতার মতো গ্রামীণ এলাকার রূপচর্চার কেন্দ্র গুলিতে এ বার মহিলাদের ভিড় ছিল ভাল। আলপনা মাইতি নামে এক বিউটিশিয়ান বলেন, “দু'বছর করোনার জন্য আমাদের কেন্দ্র গুলি ফাঁকাই গিয়েছে। এবার উল্টো ছিল।” রোজগারও তো বেড়েছে? আলপনা বলেন, “সে তো বেড়েইছে, গত দু'বছরের চেয়ে এ বার রোজগার বেড়েছে, পুজোর সময় এবার খরচাপাতি বাদ দিয়ে আনুমানিক ২০-২২ হাজার টাকা আয় হয়েছে।” ঝাড়গ্রামের বিশিষ্ট বিউটিশিয়ান ও স্কিন থেরাপিস্ট অঞ্জনা দে বলছেন, “পুজোর আগে টানা বারো ঘন্টা পার্লার খোলা রাখতে হয়েছিল। এ বার মহিলাদের মধ্যে ফেসিয়াল ও চুলের স্ট্রেটনিং ও কেরোটিন করানোর হার বেশি ছিল। তবে অধিকাংশ গ্রাহক দু’-তিনবছর আগের মতো খরচ করেনি।” (চলবে)
(তথ্য সহযোগিতায়: বরুণ দে, অভিজিৎ চক্রবর্তী, কিংশুক গুপ্ত, রঞ্জন পাল, রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য)