গরমের ছুটির পরে মঙ্গলবার খুলল মেদিনীপুরের ইংরেজি মাধ্যম বেসরকারি স্কুল বিদ্যাসাগর শিশু নিকেতন। প্রথম দিনে শুধু পরীক্ষা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে নির্ধারিত সময়ের সপ্তাহ দু’য়েক আগে স্কুলগুলিতে গ্রীষ্মের ছুটি পড়েছিল। এবার সেই ছুটি আরও ১১ দিন বাড়িয়ে ২৬ জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। এই ভাবে টানা স্কুল বন্ধ থাকলে পড়ুয়াদেরই ভীষণ ক্ষতি বলে মানছেন শিক্ষক ও অভিভাবকদের একাংশ। ছাত্র-ছাত্রীদেরও প্রশ্ন, সিলেবাস শেষ না হলে কীভাবে পরীক্ষায় বসবে তারা! দীর্ঘায়িত ছুটির পরে স্কুল খুললে কম সময়ের মধ্যে সিলেবাস কীভাবে শেষ হবে তার দিশা স্কুল ও শিক্ষা দফতর— কারও কাছেই সেভাবে নেই।
এই পরিস্থিতিতে শিক্ষকদের অনেকে চাইছেন, সপ্তাহে অন্তত তিন-চার দিন স্কুল খোলা হোক। দরকারে সকালের দিকে স্কুল হতে পারে। চাইলে ছুটির সময় এগিয়ে আনা হোক। মেদিনীপুরের এক স্কুলের প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘এতদিন স্কুল বন্ধ রাখা অনুচিত।’’ শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী, শিক্ষানুরাগী ঐক্যমঞ্চের রাজ্য সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারীর দাবি, ‘‘এক বছরের নির্ধারিত সিলেবাস শেষ করাটাই তো এ বার মুশকিল হবে।’’ তাঁর মতে, ‘‘শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদেরও যতটা সম্ভব তাদের অভাবগুলি পূরণ করার চেষ্টা করতে হবে। স্কুলগুলিতে দীর্ঘদিন শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী নিয়োগ নেই। সার্বিক পরিকাঠামোর বিরাট অভাব। এই অবস্থায় প্রয়োজন ছিল আলাদা ভাবে পড়ুয়াদের যত্ন নেওয়ার। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাব কোনও কিছুই বাস্তবায়িত করতে দেবে বলে মনে হয় না।’’ মেদিনীপুরের এক প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কথায়, ‘‘করোনার জন্য এমনিতেই স্কুল বন্ধ ছিল দীর্ঘদিন। আর বেশি দিন স্কুল বন্ধ রাখলে আগামী দিনে অনেক বেশি মূল্য চোকাতে হবে।’’
পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির জয়পুর হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত মণ্ডল বলেন, ‘‘সিলেবাস শেষ কী ভাবে হবে, সে নিয়ে একটা চিন্তা থাকছেই। এ নিয়ে ভাবনাচিন্তা চলছে।’’ মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির তরফে অক্ষয় খানের ক্ষোভ, রাজ্য সরকার সরকারি ও সরকার পোষিত বিদ্যালয়গুলির পঠনপাঠন বন্ধ রেখে অনলাইন শিক্ষার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শিক্ষাক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে বেসরকারিকরণের পথ প্রশস্ত করছে। তাঁর দাবি, ‘‘রাজ্য সরকার মুখে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করলেও কেন্দ্রীয় সরকার প্রণীত জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০২০ এই রাজ্যে কার্যকর করার সমস্ত রকম পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।’’ শিক্ষক, অভিভাবকদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে নামা দরকার বলে মনে করছেন ওই সমিতির নেতা তপন দাস।
ঝাড়গ্রাম কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ সেনগুপ্ত বলছেন, ‘‘এমনিতেই করোনা পর্বের পরে পড়ুয়াদের স্কুলে আসার প্রবণতা কমেছে। এবার গ্রীষ্মের দীর্ঘ ছুটির ফলে একাদশ শ্রেণির বার্ষিক প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। একাদশের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে। ছুটি বেড়ে যাওয়ায় দ্বাদশের পাশাপাশি, অন্য শ্রেণিগুলিরও সিলেবাস সময়মতো শেষ করা যাবে কি না তা নিয়ে আমরা চিন্তায় রয়েছি।’’ তিনি জানান, স্কুল খুললে সব শ্রেণির জন্য অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা হবে। প্রয়োজনে শনিবারও পূর্ণদিবস ক্লাস নেওয়া হবে। ঝাড়গ্রাম লায়ন্স মডেল প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সুশান্ত বসু বলছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার থেকে সব পড়ুয়াদের জন্য ভার্চুয়াল ক্লাস শুরু হচ্ছে। স্কুল খুললে পুরোদমে ক্লাস নেওয়া হবে।’’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির ঝাড়গ্রাম জেলা সম্পাদক সমীর বেরা বলছেন, ‘‘আবহবিদ ও শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা ছাড়াই চূড়ান্ত অগণতান্ত্রিক ভাবে রাজ্য সরকার গ্রীষ্মের ছুটি বাড়িয়েছে। এর ফলে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনার অভ্যাস হারিয়ে ফেলছে।’’ ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে এদিনই জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শকের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে স্কুল খোলার দাবিতে স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্কুল খুললে সিলেবাস শেষে বাড়তি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে? দুই জেলার শিক্ষা দফতর থেকেই স্পষ্ট কোনও উত্তর মেলেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিকের দাবি, পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই সরকার ছুটি বাড়িয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা শিক্ষা দফতরের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘গ্রীষ্মের দাবদাহের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ছুটি বাড়ানো হয়েছে। স্কুলগুলি নিজের প্রয়োজন মত অতিরিক্ত ক্লাস নিতে পারে।’’