নন্দকুমারে চলছে বই বিলি। নিজস্ব চিত্র
পাঠ্যবই আনতে হবে বিদ্যালয় পরিদর্শক দফতরের অফিস থেকে। সে জন্য সরকারের তরফে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বরাদ্দ রয়েছে নির্দিষ্ট অর্থ। কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুরের শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, নতুন শিক্ষাবর্ষ আসতে চললেও পুরনো এক বছরের সংশ্লিষ্ট খাতে বরাদ্দ অর্থ তারা পায়নি। পাশাপাশি, তাঁরা স্কুলের সরাসরি পাঠ্যবই পাঠানোর আর্জিও জানিয়েছেন।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলগুলিতে নতুন শিক্ষাবর্ষের পঠনপাঠন শুরু হবে আগামী ২ জানুয়ারি থেকে। শিক্ষাবর্ষ শুরুর প্রথম দিনেই পড়ুয়াদের হাতে নতুন পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার জন্য ‘বুক ডে’ পালন করার নির্দেশিকা পাঠিয়েছে রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। পূর্ব মেদিনীপুরে ৩,২৬৫টি প্রাথমিক স্কুলের পড়ুয়াদের জন্য ৪৬টি অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস থেকে ওই পাঠ্য বই বিলি করা হচ্ছে। সে জন্য প্রধান শিক্ষকদের অফিস গিয়ে নতুন বই সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস থেকে পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত দূরত্বের মধ্যে থাকা স্কুলে বই নিয়ে যাওয়ার জন্য ৮০ টাকা, ন’কিলোমিটার পর্যন্ত ৯০ টাকা এবং ন’কিলোমিটারের বেশি দূরত্বের জন্য ১০০ টাকা শিক্ষকদের বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু জেলার প্রধান শিক্ষকদের একাংশের অভিযোগ, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষে পাঠ্য বই নিয়ে আসার বরাদ্দ টাকাই এখনও পাওয়া যায়নি। ফের নতুন শিক্ষাবর্ষের পড়ুয়াদের পাঠ্য বই আনার জন্য নিজেদের টাকা খরচ করতে হচ্ছে তাঁদের। এছাড়া, পরিদর্শক অফিস থেকে বই বিদ্যালয়ে নিয়ে যেতে বয়স্ক প্রধান শিক্ষকদের হায়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ।
প্রধান শিক্ষকেরা জানান, শিশু থেকে চতুর্থ শ্রেণি প্রযন্ত এক একজন পড়ুয়া মিলিয়ে মোট ২২টি পাঠ্য বই নিতে হয়। যে সব বিদ্যালয়ের পড়ুয়ার সংখ্যা বেশি, তাঁদের অনেক বেশি বই আনতে হয়। সে ক্ষেত্রে বই স্কুলে নিয়ে যেতে ভ্যান রিকশা বা টোটো ভরসা। এর ফলে বহন খরচ বরাদ্দ খরচের চেয়ে অনেক বেশি হয়ে। সেই অর্থ শিক্ষকদেরই দিতে হয় বলে অভিযোগ। নন্দকুমারের কল্যাণচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তপন মণ্ডল বলেন, ‘‘বিদ্যালয় পরিদর্শক অফিস থেকে আমার স্কুলের দূরত্ব প্রায় সাত কিলোমিটার। গত বছর টোটোয় বই আনতে ২০০ টাকা খরচ হয়েছিল।’’
বেশি অর্থ পকেট থেকে গোনার পাশাপাশি, বরাদ্দ অর্থও না পাওয়ায় সরাসরি বিদ্যালয়ে পাঠ্য বই পাঠানোর দাবি তুলেছেন বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতৃত্ব। পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সাধারণ সম্পাদক অরূপকুমার ভৌমিক বলেন, ‘‘পাঠ্য বই বহনের বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় কম। সেটাও আবার এক বছর ধরে বকেয়া। আমরা চাই প্রধান শিক্ষকদের হাতে বই না দিয়ে, সরাসরি বিদ্যালয়ে তা পৌঁছে দেওয়া হোক।’’
বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সম্পাদক সতীশ সাউ বলেন, ‘‘পাঠ্যবই বহনের জন্য যে টাকা বরাদ্দ করা হয়, তার থেকে অনেক বেশি টাকা খরচ হয়। তাই এই খাতে বরাদ্দ টাকা বৃদ্ধি করতে হবে ও দ্রুত তা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
এক বছর ধরে টাকা দেওয়া হয়নি কেন? জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শক সঙ্ঘমিত্র মাকুড় বলেন, ‘‘গত শিক্ষাবর্ষে পাঠ্যবই বহনের প্রয়োজনীয় টাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। টাকা এলেই দ্রুত দেওয়া হবে।’’