মণ্ডপের পথে। হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কে। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস
অন্য বছর পুজোর আগের দিনেই গ্যারাজ চত্বরে মণ্ডপসজ্জা থেকে আলো, মাইক সব কাজ শেষ হয়ে যেত। বিশ্বকর্মা পুজোর হুল্লোড় শুরু হয়ে যেত আগের রাত থেকেই। করোনার ছায়া এ বার সব ঢেকে দিয়েছে। বিশ্বকর্মা পুজোর ছবি অনেকটাই বদলে গিয়েছে তমলুক শহরের ইতিউতি ছড়িয়ে থাকা গাড়ির কাঠামো তৈরি ও মেরামতির গ্যারাজগুলিতে। বরাতের অভাবে সেখানে দিনরাত হাতুড়ির ঠুকঠাক, ঝালাইয়ের আলোর ঝলকানি নেই বললেই চলে।
করোনা সতর্কতায় লকডাউন ও পরবর্তী আনলক পর্বে গাড়ি চলাচল অনেকটাই কমেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাস, লরি-সহ বিভিন্ন গাড়ির কাঠামো তৈরি, সজ্জা ও মেরামতির গ্যারাজগুলিতে। তমলুক শহরের রাধাবল্লভপুর থেকে মানিকতলা, নিমতলা, গঞ্জনারায়ণপুর হয়ে নন্দকুমার পর্যন্ত হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে ছোট-বড় মিলিয়ে তিনশোরও বেশি গ্যারাজ রয়েছে। একেকটি গ্যারাজে ১০ থেকে ৪০ জন পর্যন্ত শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি বছর বেশ জাঁকজমক করেই বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজন করতেন গ্যারাজ মালিকরা। বছরভর হাড়ভাঙা খাটুনির মধ্যে এই দু’টো দিন আনন্দে, ফুরফুরে মেজাজে কাটাতেন গ্যারাজ কর্মীরা। তমলুক থেকে নন্দকুমার পর্যন্ত হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের দু’পাশে উৎসবের মেজাজ থাকত বেশ কয়েকদিন ধরে। কিন্তু এ বার সব জৌলুস উধাও।
গত মার্চ মাসে লকডাউনের শুরু থেকে অধিকাংশ গ্যারাজে কাজকর্ম বন্ধ। কাজ হারিয়েছেন কয়েক হাজার শ্রমিক। লকডাউন ওঠার পর কয়েকটি গ্যারাজ খোলা হলেও কাজের তেমন বরাত নেই বলে জানালেন গ্যারাজ মালিকরা। ফলে অধিকাংশ গ্যারাজ মালিক ও সেখানকার কর্মীরা আর্থিক সঙ্কটে পড়েছেন। যার প্রভাব এ বার বিশ্বকর্মা পুজোর আয়োজনেও পড়েছে। নিয়ম রক্ষায় বহু গ্যারাজ মালিক শুধু ঘট পুজোর আয়োজন করেছেন। তালপুকুর এলাকার গ্যারাজ মালিক নির্মল রানা ৩২ বছর ধরে ব্যবসা করছেন। ২৫ জন শ্রমিক কাজ করতেন তাঁর গ্যারাজে। আগে ধুমধাম করে পুজো হলেও এবছর কেবল ঘটপুজো করছেন।
নির্মলের কথায়, ‘‘এতদিন প্রতিমা এনে পুজো করতাম। খুব ধুমধাম হত। তিন চারদিন ধরে কর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা হত। গত বছর পুজোর বাজেট ছিল প্রায় ৬০ হাজার টাকা। করোনার জন্য ৫ মাস গ্যারাজ বন্ধ ছিল। এখন ৫-৭ জন শ্রমিক নিয়ে কোনওরকমে গ্যারাজ চালু রাখলেও আয় নেই। তাই প্রতিমা এনে পুজো করার মতো আর্থিক অবস্থা নেই।’’ নন্দকুমারের কোলসর এলাকার গ্যারাজ মালিক মঙ্গল বক্সী বলেন, ‘‘গত কয়েক মাস গ্যারাজ বন্ধ ছিল। কিছুদিন আগে খোলা হলেও কাজ নেই বললেই চলে। আর্থিক সমস্যায় কোনওমতে ছোট প্রতিমা এনে পুজোর আয়োজন করেছি।’’সত্যিই, বিশ্বকর্মা এ বার বড়ই ম্লান এখানে।