কাঁথির সভায় বক্তা শুভেন্দু। নিজস্ব চিত্র
তিনি নিজে বিজেপিতে নবীন। নতুন দলে বয়স সবে দু’বছর। তবে তিনি যে বিজেপির পুরনোদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধাশীল, সে কথাই নিজের শহরের দলীয় সভায় বিশেষ ভাবে মনে করালেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘ওল্ড ইজ় অলওয়েজ গোল্ড। অতীত ভুললে ভবিষ্যৎ ভাল হয় না।’’
২০২০ সালের ২০ ডিসেম্বর মন্ত্রিত্ব, বিধায়ক পদ ছেড়ে বিজেপিতে যান শুভেন্দু। তারপর থেকে তাঁর জেলা পূর্ব মেদিনীপুরে বিজেপির দু’টি সাংগঠনিক জেলা কাঁথি এবং তমলুকে ‘আদি-নব্য’ দ্বন্দ্বে জেরবার গেরুয়া শিবির। সেই ছায়া মুছতেই বুঝি বুধবার কাঁথি স্টেশন সংলগ্ন বিজেপির জনসভায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ৯জন পুরনো নেতাকে। শুভেন্দু মঞ্চে ওঠার পরে সম্মানও জানানো হয় খেজুরির হিল্লোল মাল, কল্যাণময় জানা, এগরার নারায়ণ দে, সুভাষ দাস, শীর্ষেন্দু দাসের মতো সেই নেতাদের। তাঁদের শাল পরিয়ে দেন শুভেন্দু নিজে। পুষ্পস্তবক দিয়ে এবং উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয় সবাইকে।
এরপর বলতে উঠে গোড়াতেই শুভেন্দুর মন্তব্য, ‘‘আমরা শুরুতে প্রণাম করেছি ৯জনকে। এঁরা হলেন বিজেপির আদি কার্যকর্তা।’’ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু-ঘনিষ্ঠদের এ দিন মঞ্চে দেখা যায়নি। মূল মঞ্চের দু’পাশে পৃথক দু’টি মঞ্চ করা হয়েছিল। মূল মঞ্চে শুভেন্দু ছাড়াও সাংসদ জ্যোতির্ময় সিংহ মাহাতো, জেলায় দলের বাকি ৬ বিধায়ক এবং কাঁথি সাংগঠনিক জেলার নেতারা বসেছিলেন। বাঁ দিকের মঞ্চে ছিলেন মণ্ডল সভাপতিরা আর ডান দিকের মঞ্চে সাংস্কৃতিক সেলের নেতারা। মঞ্চের সামনে নীচে চেয়ারে বসেন শুভেন্দুর নির্বাচনী কেন্দ্র নন্দীগ্রাম বিধানসভার নেতা তথা তমলুক সাংগঠনিক জেলা বিজেপির সহ-সভাপতি প্রলয় পাল। একই ভাবে মঞ্চের নীচে চেয়ারে ছিলেন জেলা পরিষদ সদস্য তথা হলদিয়া উন্নয়ন ব্লকের বিজেপি নেতা সোমনাথ ভুঁইয়া, মহিষাদলের ইটামগরা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান রামকৃষ্ণ দাস, কাঁথির ধীরেন্দ্রনাথ পাত্র-সহ একঝাঁক নেতা।
তৃণমূল শুভেন্দুর বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ করে। কিন্তু তা ঘিরে নতুন দলে আদি-নব্য বিরোধ মাথাচাড়া যাতে না দেয়, সে জন্যই কাছের লোককে দূরে বসানোর এমন কৌশল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সহ-সভাপতি অসীম মিশ্র বলেন, ‘‘আমাদের দল সনাতনি সংস্কৃতি মেনে চলে। সেই সংস্কৃতি মেনেই এক সময় মেদিনীপুরে বিজেপির সংগঠন যখন ছিল না বললেই চলে, সেই সময় যাঁদের হাত ধরে জনসঙ্ঘের পরে রাষ্ট্রবাদী চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছিল, তাঁদের সংবর্ধনা জানিয়েছেন শুভেন্দুবাবু।’’
যদিও গোটা বিষয়টিকে ‘লোক দেখানো’ বলেই কটাক্ষ করছে তৃণমূল। বিধায়ক তথা কাঁথি সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি তরুণ মাইতির মন্তব্য, ‘‘সবদিক থেকে এ দিন বিরোধী দলনেতার সভা ফ্লপ হয়েছে। তাই দলে যাতে তাঁর ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা না হয়, তাই লোক দেখানো অনেক কিছু করা হয়েছে। তবে এ ভাবে বিজেপির আদি-নব্য গোষ্ঠীর বিবাদ মেটানো সম্ভব নয়।’’