শুভেন্দু অধিকারী

ঘাসফুলের গড়ে দলেই দ্বৈরথ

 রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের নেতারা ওই কর্মসূচি পালন করলেও ব্যতিক্রম ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক হিসাবে শুভেন্দু এই কর্মসূচি পালন না করায় দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠলেও তা প্রকাশ্যে আসেনি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০২০ ০৫:১০
Share:

শুভেন্দু অধিকারী

লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে ধাক্কা খাওয়ার পরে বিধানসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক শক্তি পুনরুদ্ধারে উদ্যোগী হয়েছিল শাসক দল তৃণমূল। প্রধান বিরোধী বিজেপির মোকবিলায় টিম পিকে’র (প্রশান্ত কিশোরের) পরামর্শ মেনে সাধারণ মানুষের অভিযোগ ও সমস্যার কথা শুনতে এবং জনসংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে শুরু হয় ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি। সংঘাতের ইঙ্গিত মিলেছিল সেই সময় থেকেই।

Advertisement

রাজ্যজুড়ে তৃণমূলের নেতারা ওই কর্মসূচি পালন করলেও ব্যতিক্রম ছিলেন রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী। নন্দীগ্রামের বিধায়ক হিসাবে শুভেন্দু এই কর্মসূচি পালন না করায় দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠলেও তা প্রকাশ্যে আসেনি। কিন্তু দ্বিতীয় দফায় ‘বাংলার গর্ব মমতা’ কর্মসূচিতেও এখনও পরিবহণ মন্ত্রীর কোনও উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এনিয়ে অধিকারী পরিবারের বিপরীত অবস্থানে থাকা রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরির দ্বৈরথ সামনে এসেছে।

অধিকারীদের খাসতালুক কাঁথিতে এই কর্মসূচি পালন করেছেন অখিল-পুত্র সুপ্রকাশ গিরি। সুপ্রকাশ জেলা তৃণমূল যুব কংগ্রসের কার্যকরী সভাপতি। গত রবিবার কাঁথিতে সুপ্রকাশের নেতৃত্বে ওই কর্মসূচি পালনে হাজির ছিলেন অখিল। যদিও কর্মসূচিতে ছিলেন না কাঁথির পুরপ্রধান সৌম্যেন্দু অধিকারী-সহ পুরসভার ২০ জন কাউন্সিলর। কাঁথির ওই কর্মসূচিতে নাম না করেই রামনগরের বিধায়ক অধিকারীদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে তোপ দাগেন। যা নিয়ে জেলার রাজনীতি সরগরম। তবে নন্দীগ্রামের জেলায় অধিকারীদের বিরুদ্ধে অখিলদের এভাবে সরব হওয়ার পিছনে রাজ্য নেতৃত্বের একাংশের মদত আছে বলে বলে মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশের মতে, আগেও অধিকারীদের বিরুদ্ধে নিজের শক্তি প্রদর্শনে অখিলের প্রকাশ্যে সভা হয়েছে। কিন্তু শেষপর্যন্ত তা দানা বাঁধেনি।

Advertisement

দলের কিছু নেতার মতে, অখিল যেমন অধিকারীদের বিরুদ্ধে ঔদ্ধত্য ও দুর্নীতির অভিযোগের সরব হয়েছেন, তেমনই তাঁর বিরুদ্ধেও আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে মৎস্য দফতরের অধীন সংস্থা ‘বেনফিসে’র চেয়ারম্যান হয়েছিলেন অখিল। কিন্তু আর্থিক দুর্নীতির কারণে তাঁকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এছাড়াও দিঘার একজন তৃণমূল নেতাকে (সুশান্ত পাত্র) পুলিশ গ্রেফতারের পরে প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনার অভিযোগও রয়েছে অখিলের বিরুদ্ধে। এ সব অভিযোগ নিয়ে সরব অধিকারী অনুগামীরাও।

তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে অখিল গিরি বলেন, ‘‘আমরা কারও নাম ধরে বলিনি। বলেছি কিছু মানুষ, কিছু নেতৃত্ব আছে যারা দুর্নীতিগ্রস্ত। যাকে নিয়ে মানুষ দলের প্রতি অনীহা প্রকাশ করছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘বেনফিস থেকে আমাকে সরানো হয়নি। বেনফিসের মতো রাজ্যে ৪৩০টি সোসাইটি রয়েছে। আগে সোসাইটির কমিটির মেয়াদ তিন বছর ছিল। এখন তা ৫ বছর করা হয়েছে। সে সময় রাজ্য সরকার বেনফিসের কমিটি ভেঙে দিয়েছিল। তারপর বেনফিসের বোর্ড গড়া হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যারা দুর্নীতির গল্প বাজারে ছেড়েছে তা তাদের নিজেদের দুর্নীতি ঢাকার জন্য। আর সুশান্তকে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে আসা.হয়নি। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়ার পরে জানতে চেয়েছিলাম তার বিরুদ্ধে কেউ লিখিত অভিযোগ করেছে কি না। লিখিত অভিযোগ না হওয়ায় ছেড়ে দিতে বলেছিলাম।’’

শুভেন্দু অনুগামীদের অভিযোগ, দলের কর্মসূচি ‘বাংলার গর্ব মমতা’ পালন করতে গিয়ে অখিলবাবু যেভাবে দলের কিছু নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন তাতে বিরোধীদেরই হাত শক্ত হচ্ছে। এতে তৃণমূলেরই ক্ষতি হচ্ছে। রাজ্য নেতৃত্বের বিষয়টি ভেবে দেখা উচিত। নন্দীগ্রাম-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি মেঘনাদ পাল বলেন, ‘‘দলীয় কর্মসূচিতে অখিলবাবু যে ভাবে দলেরই নেতৃত্বের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলছেন তাতে দলীয় কর্মী-সমর্থকদের কাছে আমাদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এটা মোটেও বাঞ্ছনীয় নয়।’’

যদিও অখিল-পুত্র সুপ্রকাশের দাবি, ‘‘কাঁথির কর্মসূচিতে কারও নাম করে দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়নি। দলের জেলা কার্যকরী সভাপতি হিসেবে অখিলবাবুর বক্তব্যের মাধ্যমে দলের নিচুতলার কর্মীদের বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’ বাবার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘অভিযোগ করলেই হবে না। মানুষ তা বিচার করবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement