BJP

দ্বিতীয় ইনিংসেও মেদিনীপুর আবেগ

শনিবারের সভায় ১ সাংসদ, ৯ বিধায়ক, ১ প্রাক্তন মন্ত্রী, ১ প্রাক্তন সাংসদ সহ আরও অনেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন।

Advertisement

বরুণ দে

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪০
Share:

নত: দলবদলের মুর্হূতে শাহকে প্রণাম শুভেন্দুর। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

তাঁকে ফের দেখা গেল রাজনীতির মঞ্চে।

Advertisement

জল্পনা-কল্পনা শেষ। মেদিনীপুরের মাটিতেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন মেদিনীপুরের ‘ভূমিপুত্র’ শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার মেদিনীপুরের কলেজ-কলেজিয়েট স্কুল মাঠের সভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাত থেকে বিজেপির পতাকা নিলেন তিনি।

মেদিনীপুর-আবেগ উস্কে দিয়েছেন শুভেন্দু। তাঁকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘এটা অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার স্বাধীনতা আন্দোলনের পূণ্যভূমি। তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের পূণভূমি। ক্ষুদিরাম বসু, মাতঙ্গিনী হাজরা, বিদ্যাসাগরের মাটি। একদিকে অরণ্যসুন্দরী ঝাড়গ্রাম। অন্যদিকে বঙ্গোপসাগর, বালুমাটি। একদিকে খড়্গপুর রেলনগরী, অন্যদিকে হলদিয়া শিল্পনগরী। এটা ঐতিহাসিক কলেজ- কলেজিয়েট স্কুল মাঠ। অনেক ঘটনার সাক্ষী, অনেক বিপ্লবের সাক্ষী এই মেদিনীপুর।’’ শুভেন্দু-অনুগামীরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, শনিবারের দিনটাও বাংলার রাজনীতির ইতিহাসের পাতায় থেকে গেল। শুরুতে ঠিক ছিল, শনিবার মেদিনীপুরে এসে এক দলের এক সাংগঠনিক বৈঠকে বক্তৃতা দেবেন শাহ। পরে সূচি পাল্টায়। ঠিক হয়, মেদিনীপুরে জনসভা হবে। বিজেপি সূত্রে খবর, শুভেন্দুদের যোগদানকে সামনে রেখেই এই সভার আয়োজন করা হয়েছে। মেদিনীপুরের মাটিতেই বিজেপিতে যোগদানে আগ্রহী ছিলেন নন্দীগ্রামের সদ্য প্রাক্তন বিধায়ক। সেই মতো বন্দোবস্ত সারা হয়।

Advertisement

শনিবারের সভায় ১ সাংসদ, ৯ বিধায়ক, ১ প্রাক্তন মন্ত্রী, ১ প্রাক্তন সাংসদ সহ আরও অনেকে বিজেপিতে যোগদান করেছেন। শাহকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘শুভেন্দু ভাইয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস, তৃণমূল, সিপিএম- সব দলের ভাল লোকেরা বিজেপিতে যোগদান করেছেন।’’ অবশ্য অবিভক্ত মেদিনীপুরে তৃণমূলে তেমন ভাঙন ধরেনি। পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রামের কোনও বিধায়ক দলবদল করেননি। পূর্ব মেদিনীপুরের তিন বিধায়ক যথাক্রমে বনশ্রী মাইতি (কাঁথি উত্তর), তাপসী মণ্ডল (হলদিয়া), অশোক দিন্দা (তমলুক) বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তাপসী তৃণমূলে ছিলেন। তাপসীরা বামে। পশ্চিম মেদিনীপুরের যাঁরা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন প্রণব বসু, অমূল্য মাইতি, রমাপ্রসাদ গিরি, তপন দত্ত, দুলাল মণ্ডল, কাবেরী চট্টোপাধ্যায়, আকাশদীপ সিংহ, স্নেহাশিস ভৌমিক। সকলেই শুভেন্দু- অনুগামী। ঝাড়গ্রামের লালগড়ের তন্ময় রায় দলবদল করেছেন। তন্ময়ও শুভেন্দু-অনুগামী। তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি অজিত মাইতির দাবি, ‘‘কিছু নেতা দলবদল করেছেন। কর্মী-সমর্থকদের সকলে তৃণমূলেই রয়েছেন। ওই দলবদলে তৃণমূলের কোনও ক্ষতি হবে না।’’

কেন অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরের কোনও বিধায়ককে বিজেপিতে আনা গেল না? শুভেন্দু-অনুগামী এক নেতার দাবি, ‘‘আনা গেল না তা নয়, আনা হয়নি! তিনজন আসতে চেয়েছিলেন। ওঁদের বিজেপিতে নিতে হলে ফের টিকিট পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিতে হত। কিন্তু ওঁরা কেউই ভোটে জেতার মতো পরিস্থিতিতে নেই। ওঁরা এলে বিজেপির ক্ষতিই হত।’’

অবিভক্ত মেদিনীপুর যে তাঁর হাতের তালুর মতো চেনা তা বুঝিয়েছেন শুভেন্দু। তাৎপর্যপূর্ণভাবে শমিত দাশ, সুখময় শতপথী, অন্তরা ভট্টাচার্য, নবারুণ নায়ক, অনুপ চক্রবর্তীর নাম তাঁর মুখে শোনা গিয়েছে। সকলেই অবিভক্ত মেদিনীপুরে থাকা বিজেপির এক-এক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি। সভায় শুভেন্দুকে বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আমি তো সবে শুরু করলাম। ২৪ ঘন্টায় ১৬ ঘন্টা সময় দিই। বুথে বুথে, পাড়ায় পাড়ায় পাবেন। আশ্বস্ত করছি আপনাদের। শুভেন্দু মাতব্বরি করতে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসেনি।’’

শুভেন্দুকে এ দিন বলতে শোনা গিয়েছে, ‘‘আস্থা, বিশ্বাস, সম্মান যেখানে নেই, সেখানে থাকব না। এটাই আমাদের মেদিনীপুরের গৌরব।’’ মেদিনীপুর-আবেগ ছুঁয়ে গিয়েছেন শাহও। তাঁর মুখে অজয় মুখোপাধ্যায়, সতীশ সামন্ত, দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়দের নাম শোনা গিয়েছে। শাহ বলেছেন, ‘‘এই ভূমি বিদ্যাসাগর, ক্ষুদিরাম বসুর জন্মভূমি। এই ভূমিকে আমি বারবার প্রণাম করি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement