শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামের শহিদ বেদীতে মালা দিতে গেলে বাধার মুখে পড়তে পারেন তিনি। নিজস্ব চিত্র
উত্তেজনার মধ্যেই নন্দীগ্রামে পালিত হল শহিদ দিবস। প্রথা ভেঙে ভোরের পরিবর্তে এ বার রাত ১২টায় নন্দীগ্রামের সোনাচূড়ায় শহিদ বেদীর সাননে হাজির হয়ে যান নন্দীগ্রামের প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক, তথা বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রায় ৩০টি শহিদ পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে তিনি মোমবাতি হাতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মৃতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ভোরে ভাঙাবেড়া সেতুর কাছে পৃথক মঞ্চে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি-সহ তৃণমূল ও ভুমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির নেতাকর্মীরা।
শুভেন্দু তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর থেকেই জল্পনা শুরু হয়েছিল, ৭ জানুয়ারি নন্দীগ্রামের শহিদ বেদীতে মালা দিতে গেলে বাধার মুখে পড়তে পারেন তিনি। এই নিয়ে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয় নন্দীগ্রামে। তবে সব বাধা উপেক্ষা করে আগাম কর্মসূচি না জানিয়েই তিনি রাত্রি ১২টায় হাজির হয়ে যান সোনাচূড়ায়।
শহিদ বেদীতে মালা দেওয়ার পর শুভেন্দু বলেন, ‘‘প্রত্যেক বছর আমি আসি। এ বছরও এসেছি। সকালে নেতাই যাব। বিশেষ করে ৩০টি শহিদ পরিবার এখানে এসেছেন। দল-মত নির্বিশেষে ১৪ই মার্চ, ১০ নভেম্বর পালন করি। এই ধারা অব্যাহত থাকবে। আজকের দিনে ভরত, সেলিম, বিশ্বজিৎরা শহিদ হয়েছিলেন। তাই রাত্রি ১২টায়, ৭ জানুয়ারি হয়ে যাওয়ায় পর এখানে এসে ফুল দিলাম।’’
শহিদ পরিবারদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শুভেন্দুর বক্তব্য, ‘‘আপনারা যাঁরা এত রাতে আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন, বিশেষ করে শহিদ পরিবারদের মানুষদের মন থেকে কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিগত দিন পর্যন্ত অনেকে আসেননি। আগামী দিনেও আসবেন না। এ বছর বিধানসভা নির্বাচন। অনেকের নানা উদ্দেশ্য থাকতে পারে। কিন্তু আমি রাজনীতির কর্মী হিসেবে আসিনি। আপনাদের একজন হিসেবে এসেছি।’’
শহিদ মিনারে দাঁড়িয়ে তৃণমূলের উদ্দেশ্যে শুভেন্দুর জবাব, ‘‘এখানে প্রচার করা হয়েছিল, শহিদ মিনারে শুভেন্দু আসতে পারবে না। ফুল দিতে পারবে না। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী এ সব কিছুকে ভয় পায় না। আমি রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করেই লড়াই করেছি। আগামী দিনেও লড়াই করব। আমি প্রাক্তন সাংসদ, প্রাক্তন বিধায়ক। তার থেকেও বড় পরিচয় আমি নন্দীগ্রামের আপনজন। এ ভাবেই আমি সবসময় আপনাদের পাশে থাকব।’’
তবে অন্য বারের মতো এ বার সোনাচূড়ায় আর শহিদ বেদীর দিকে যাননি তৃণমূলের নেতানেত্রীরা। বৃহস্পতিবার ভাঙ্গাভেড়া ব্রিজের কাছে শহিদ মঞ্চ তৈরি করেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব। ৭ জানুয়ারী ২০০৭ সালে এই ভাঙ্গাবেড়া ব্রিজের কাছেই গুলিতে নিহত হয়েছিল ভরত মণ্ডল, শেখ সেলিম ও বিশ্বজিৎ মাইতি। ভোরে বেদীতে মালা দেন সুব্রত বক্সি। এই কর্মসূচিতে যোগ দেওয়ার জন্য তিনি বুধবার থেকেই নন্দীগ্রামে চলে আসেন। রাতে শেখ সুফিয়ানের বাড়িতে কাটিয়ে বৃহস্পতিবার খুব ভোরে ভাঙ্গাভেড়ায় হাজির হন। বিপুল জনসমাগমের মাঝে মোমবাতি জ্বেলে শহিদদের শ্রদ্ধা জানান তিনি।
কী কারণে এবার শুভেন্দুর উদ্যোগে তৈরি শহিদ বেদীতে মালা দিতে গেলেন না তৃণমূল নেতারা, তা বলেন শেখ সুফিয়ান। তাঁর কথায়, ‘‘শহিদ বেদীতে মালা দিতে গেলে, তা শহিদদের সঙ্গে বেইমানি হত। যিনি শহিদ বেদী তৈরি করেছেন, তিনিই এখন সে দিনের হামলায় যুক্ত সিপিএম নেতা শংকর সামন্তের পরিবারের প্রতি সহানুভুতিশীল।’’ তাই তাঁরা এখন থেকে আর শহিদ বেদীর পথে পা বাড়াবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার নন্দীগ্রাম কলেজ মাঠে জনসভা করেন সুব্রত বক্সী। উপস্থিত ছিলেন সৌমেন মহাপাত্র, ফিরোজা বিবি-সহ তৃণমূলের নেতানেত্রী। মঞ্চে বক্তব্য রাখেন তাঁরা। সুব্রত বক্সী তাঁর বক্তব্যে তৃণমূলের জন্মলগ্ন থেকে তৃণৃমূল নেত্রীর আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে মমতার ভূমিকা নিয়েও তথ্য তুলে ধরেন।
আরও পড়ুন: আজ আছে কাল নেই, শীতের লুকোচুরি চলছেই
আরও পড়ুন: কাউকে কোনও জেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি, টুইট তৃণমূলের