প্রতীকী চিত্র
শালবনির কোভিড হাসপাতালের সুপারের পদ থেকে সরানো হল অভিষেক মিদ্যাকে। হাসপাতালের নতুন সুপার হলেন নবকুমার দাস। নির্দেশ পেয়ে মঙ্গলবারই নবকুমার তাঁর দায়িত্ব বুঝে নিয়েছেন। এই হাসপাতালে পরপর রোগী মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। সামনে এসেছিল চিকিৎসায় গাফিলতির বিষয়টি। এই পরিস্থিতিতে ওই অপসারণ ঘিরে একাধিক মহলে শোরগোল পড়েছে।
পশ্চিম মেদিনীপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক নিমাইচন্দ্র মণ্ডল মানছেন, ‘‘ওখানে একজন সুপারের দায়িত্বে ছিলেন। তাঁর বদলে অন্য একজনকে সুপারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এটি বিভাগীয় ব্যাপার।’’ অভিষেক শালবনির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক। পাশাপাশি, শুরু থেকে ওই হাসপাতালের সুপারের দায়িত্বও দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। নবকুমার ওই হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ছিলেন।
পশ্চিম মেদিনীপুরে ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃত্যুও। ইতিমধ্যে জেলায় করোনা আক্রান্ত ৮০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে গত দেড় মাসে শালবনির কোভিড হাসপাতালেই ৩০ জনেরও বেশি মৃত্যু হয়েছে। শুধু অগস্টেই এখানে ১৯ জন মারা গিয়েছেন। ওই ১৯ জনের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সী ছিলেন ৭ জন এবং ৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সী ১২ জন। ১৯ জনের মধ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে দিনে, ১০ জনের রাতে। একাংশ রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগও উঠেছে। মাস দুয়েক আগে শালবনির কোভিড হাসপাতাল চালু হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত সিসিইউ শয্যা নেই। অভিযোগ, এই হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো নেই। চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের সকলে নিয়মিত আসেন না। আশঙ্কাজনক রোগীদেরও সাধারণ শয্যায় ফেলে রাখা হয়। ফলে, পরিস্থিতি ক্রমে জটিল হচ্ছে।
বেলদার এক স্বাস্থ্যকর্মী এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন শৌচাগারের মধ্যে পড়েই মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই হাসপাতালেই মৃত্যু হয়েছে মেদিনীপুর শহরের এক আইনজীবীর, এক শিক্ষকের, এক ব্যবসায়ীর। হাসপাতালের মধ্যে করোনা আক্রান্ত এক রোগী আত্মহত্যাও করেছেন। এক রোগী হাসপাতাল থেকে নিখোঁজও হয়েছিলেন। পরে তাঁর খোঁজ মেলে। ঘটনায় হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
শালবনির এই হাসপাতালে পরিকাঠামোয় ঘাটতি নিয়ে সরব হয়েছেন বিরোধীরাও। জেলায় বিক্ষোভ-ডেপুটেশন হয়েছে। সূত্রের খবর, এই হাসপাতালের অব্যবস্থা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরেও অভিযোগ পৌঁছেছিল। অভিযোগে সুপারের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছিল। ঘটনাচক্রে, এরপরই হাসপাতালের সুপারের পদ থেকে সরানো হল অভিষেককে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য দাবি, পশ্চিম মেদিনীপুরে করোনা আক্রান্ত যাঁরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের বেশিরভাগই কো-মর্বিডিটির শিকার হয়েছেন।