দিনটা ১৯৪২ সালের ২২ সেপ্টেম্বর। সবংয়ের দশগ্রাম সতীশচন্দ্র সর্বার্থসাধক শিক্ষাসদন স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ঈশ্বরচন্দ্র প্রামাণিকের নেতৃত্বে সবং থানা ঘেরাও হয়েছিল। ঘেরাও কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন স্কুলের ২৫ জন ছাত্রও! সেই ঘেরাও কর্মসূচির ৭৫তম বর্ষ পূর্তি উপলক্ষে আজ, বৃহস্পতিবার ফের স্কুল থেকে সবং থানা পর্যন্ত হবে পদযাত্রা।
এ দিন খদ্দরের পোশাক ও মাথায় টুপি পরে স্কুলের ২৫ জন ছাত্র যাবে সবং থানায়। তবে ১৯৪২ এর মতো পায়ে হেঁটে নয়। স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক যুগল প্রধানের কথায়, ‘‘স্কুল থেকে থানার দূরত্ব ২৩ কিলোমিটার। এতদূর পায়ে হেঁটে যাওয়া ছাত্রদের পক্ষে কঠিন। যদিও সেই সময় ছাত্রেরা শিক্ষক মহাশয়দের সঙ্গে পায়ে হেঁটেই থানা ঘেরাও করতে গিয়েছিলেন। তবে এ বার সকলে যাবে সাইকেলে করে। পরনে থাকবে স্বদেশী পোশাক।”
সবং থানায় গিয়ে একটি স্মারক তুলে দেবে ছাত্রেরা। যাত্রাপথেও রয়েছে নানা অনুষ্ঠান।প্রধান শিক্ষকের কথায়, “আমাদের কাছে এই দিনটি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, শহিদ মাতঙ্গিনী হাজরার নেতৃত্বে তমলুক থানা ঘেরাও হয়েছিল ২৯ সেপ্টেম্বর। আর আমাদের স্কুলের ছাত্রেরা থানা ঘেরাও করেছিল তারও আগে, ২২ সেপ্টেম্বর।”
থানা থেকে বিয়াল্লিশের ঘেরাওয়ের নথিও উদ্ধার করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। যেখানে লেখা রয়েছে (ভিসিএনবি, পত্রাঙ্ক এফ (এন) পার্ট-৩, তারিখ ২২.৯.১৯৪২), ৩৫ জন সবং থানা ঘেরাও করেছিলেন। যাঁদের মধ্যে দশগ্রাম হাইস্কুলের ২৫ জন ছাত্র ছিল। কৃত্তিবাস ভক্ত, ভূবনচন্দ্র সাউ, ক্ষিতিশচন্দ্র পাল, আনন্দপ্রকাশ পাল, চিত্তরঞ্জন জানা-সহ ২৫ জন ছাত্রের নামও সংগ্রহ করেছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। যদিও বর্তমানে তাঁদের কেউই জীবিত নেই বলেই প্রধান শিক্ষক জানিয়েছেন।
তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই স্কুলের এই উদ্যোগ। দেশ গঠনে ছাত্রদের ভূমিকা কতটা জরুরি সেই সম্পর্কে ছাত্র সমাজকে অবহিত করাও অন্যতম উদ্দেশ্য। প্রধান শিক্ষকের কথায়, “ছাত্র সমাজ জাতির মেরুদণ্ড। বহু বছর আগে স্কুলের ছাত্রেরা যদি দেশকে স্বাধীন করতে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে, তাহলে বর্তমান প্রজন্ম কেন দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে না। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শুধু আমাদের স্কুল নয়, সমস্ত স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের কাছেও এই বার্তা দিতে পারব বলেই আমাদের আশা।”