দেওয়ালে আঁকা ছবি দেখছে ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
এ-ও যেন এক সহজ পাঠ! এই পাঠ ‘টিনএজ’ শিক্ষার্থীদের। স্কুলের দেওয়াল জুড়ে ছবি-ছড়ার বাহারি আঁকিবুঁকি। শ্রেণিকক্ষে পাঠের অবসরে সেই পাঠ নিচ্ছে পঞ্চম থেকে দশম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা। বড় স্কুলের পড়ুয়াদের সচেতনতার এই অভিনব দেওয়াল-পাঠ দিচ্ছে গড়বেতার কেশিয়া সরোজকুমার হাইস্কুল। আমলাগোড়া অঞ্চলের কেশিয়া এলাকার এই স্কুলটি গড়বেতার স্বাধীনতা সংগ্রামী সরোজকুমার রায়ের নামে নামাঙ্কিত।
সেই হাইস্কুলের বাইরে ও ভিতরের দেওয়ালে নানা রঙে আঁকা হয়েছে অল্পবয়সী ও বয়ঃসন্ধিকালের ছেলেমেয়েদের সমস্যা নির্ভর নানা ছবি। ছবির সঙ্গে অল্প কথার ছড়া দিয়ে সমস্যা থেকে বেরোনোর উপায়ও বলা হয়েছে সেখানে। যেমন— দেওয়ালে আঁকা হয়েছে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে মোবাইলের প্রভাব কতটা প্রভাব বিস্তার করেছে তা বোঝাতে একটি হাত এঁকে তার পাঁচটি আঙুলে আঁকা হয়েছে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম, গেম, ইউটিউবের ‘লোগো’। সেই হাতের মধ্যেই স্কুলের পোশাক পরা এক ছাত্র বইপত্র ছেড়ে মোবাইলে বুঁদ হওয়ার ছবিও আঁকা হয়েছে। পাশে লেখা— ‘এই পৃথিবীর নতুন রোগ, মোবাইলের অপপ্রয়োগ’। আবার গ্রামাঞ্চলে অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ছাড়িয়ে বিয়ে দেওয়ার প্রবণতা রয়েছে। সেই বিষয়টি ছবির মাধ্যমে দেওয়ালে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে গড়বেতার এই হাইস্কুলে। ছবিতে দেখানো হয়েছে— এক বালিকার গলায় বিয়ের মালা, সঙ্গে একটা শিকল বাঁধা, এতে বোঝানো হয়েছে নাবালিকার বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এর পাশেই আঁকা হয়েছে— বইয়ের ব্যাগ হাতে ইউনিফর্ম পরা এক স্কুলছাত্রীকে বিয়ে করে নিয়ে যাচ্ছে বর। নীচে ছড়া, ‘বাল্যবিবাহ হলে পরে, মনের আশা যাবে দূরে’।
তারুণ্যের উদ্দীপনায় বিনা হেলমেটেই পথ নিরাপত্তা আইন না মেনে বেপরোয়া গতিতে বাইক চালাচ্ছে অনেকেই। এতে বাড়ছে দুর্ঘটনা। স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সে বিষয়ে সচেতন করতে হেলমেট পড়ে ট্রাফিক আইন মেনে বাইক চালানোর ছবি এঁকে লেখা হয়েছে— ‘সেভ লাইফ সেফ ড্রাইভ’। স্কুলের দেওয়াল জুড়ে এ রকম অনেক ছবি এঁকে ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করা হয়েছে। কোথাও জল সংরক্ষণের কথা, গাছ বাঁচানোর শপথ, তো কোথাও পরিবেশ বাঁচানোর বিষয়। সাপে কামড়ালে কুসংস্কারে বশবর্তী না হয়ে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার মতো বিষয়ও ছবি-ছড়ায় স্থান পেয়েছে স্কুলের দেওয়াল-পাঠে।
স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সন্তু রায় বলছেন, ‘‘স্কুলের দেওয়ালে এইসব ছবিগুলি এঁকেছেন গড়বেতার শিল্পী পীযুষ দে। স্কুলের উদ্দেশ্য হল, অল্পবয়সী ও বয়ঃসন্ধিকালের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে যে সব বদভ্যাস বা সমস্যা রয়েছে, তা সহজ ভাবে বুঝিয়ে বা সচেতনতা তৈরি করা।’’ এই প্রসঙ্গে গড়বেতা ১ ব্লকের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক ধৃতিমান রায় বলেন, ‘‘কেশিয়া হাইস্কুলের এই উদ্যোগ যথেষ্টই ইতিবাচক। বর্তমানে অল্পবয়সী ছাত্রছাত্রীদের মধ্যেও অনেক বদভ্যাস তৈরি হচ্ছে, তা কাটাতে স্কুলের এ ধরনের উদ্যোগ খুবই ভাল।’’