নয়া উপাচার্য বুদ্ধদেব সাহু। —নিজস্ব চিত্র।
যোগ্য ব্যক্তির হাতেই গিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব। বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনিযুক্ত উপাচার্য বুদ্ধদেব সাহু সম্পর্কে এমনটাই মত তাঁর গণিতের শিক্ষক বাসুদেব পয়ড়্যার।
কাঁথি তিন ব্লকের অন্তর্গত বনমালী চট্টা হাইস্কুল থেকেই ১৯৮৮ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশকরেছেন বুদ্ধদেব। সে সময় তাঁর গণিতের শিক্ষক ছিলেন বুদ্ধদেব। ছাত্রের সম্পর্কে শিক্ষক বাসুদেব বললেন, ‘‘ ছেলেটা খুব কম কথা বলত। তবে অত্যন্ত শৃঙ্খলাপরায়ণ।’’ এরপর তিনি এ-ও জুড়েছেন,"সে সময় আমাদের স্কুলের হস্টেলে অনেক নিয়ম মানতে হত। ভোর চারটে থেকে উঠে সব ছাত্রদের প্রার্থনায় অংশ নিতে হতো। তারপর সারাদিন চলতে পড়াশোনা। ঠিক রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত। বুদ্ধদেব অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলত সব নিয়ম। ভীষণ কঠিন পরিস্থিতিতেও নিজের কর্তব্যে অবিচল ছিল। নিজেকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাতে দশটার পরও মশারির ভিতরে হ্যারিকেনের আলো খানিকটা কমিয়ে পড়াশোনা করত।"
আপাতত নানা প্রশ্নের সম্মুখীন দেশের অন্যতম উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। দীর্ঘ দিন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদ ফাঁকা ছিল। শনিবার গণিতের অধ্যাপক বুদ্ধদেবকে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ করেছে রাজভবন। তাঁর দিকে তাকিয়ে গোটা রাজ্য। এর আগে বুদ্ধদেব কোনও প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলেছেন কি না, তা মনে করতে পারছেন না তাঁর শিক্ষক ও সহপাঠীদের একাংশ। তবে প্রাক্তনীর এই পদপ্রাপ্তিতে খুশির হাওয়া স্কুলে। ছুটির দিন হলেও রবিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নতুন উপাচার্যের পুরাতন স্কুলের হস্টেলে তার বক্তব্য এবং লড়াইয়ের নানা ঘটনা পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরা হয় স্মার্ট ক্লাসের মাধ্যমে।
বনমালী চট্টা হাই স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক উত্তীর্ণ হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে স্নাতক হন বুদ্ধদেব। এরপর তিনি ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিক্যাল ইনস্টিটিউটের কলকাতা শাখায় পড়াশোনা করার পরে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেছেন কিছুদিন। কিন্তু মেধা থাকলেই কি প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সফল হওয়া যায়! শিক্ষকদের পাশাপাশি বুদ্ধদেবের উপর ভরসা রাখছেন তাঁর সহপাঠীরাও। বুদ্ধদেবের এক সহপাঠী তথা বিজ্ঞানী সত্যব্রত পাইকের কথায়,"খুব জেদি স্বভাবের ছিল। সে সময়কার অভাব তাকে আরও বেশি করে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে শিখিয়েছে।’’ বাসুদেবের মতে,"স্কুলে পড়াকালীন চরম কঠিন পরিস্থিতি আর কঠোর অনুশাসন মেনে সফল হয়েছে। ঠিক একই কায়দাতে নতুন উপাচার্য হয়েও শৃঙ্খলার মাধ্যমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গরিমা তার হাত ধরেই ফিরে আসবে বলে আশাবাদী।’’
এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গিয়েছিলেন নতুন উপাচার্য। এদিন বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বুদ্ধদেব বলেন," জীবনে সংকট সব সময় থাকবে। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সঙ্কট। বিশ্ববিদ্যালয়ে সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য আগে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে।’’
কড়া মনোভাব। সহমর্মিতা। দক্ষ প্রশাসকের দুই জরুরি গুণ। সমাজমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি, কাজকর্ম, মন্তব্য বলছে, মানুষের সঙ্কটে পাশে থাকার চেষ্টা করেন বুদ্ধদেব।