বন্ধ উৎপাদন। নিজস্ব চিত্র।
বেতন বৃদ্ধির দাবি করেছেন শ্রমিকরা। দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষ জুড়েছেন শর্ত। শর্ত প্রত্যাহারের দাবিতে সরব হন শ্রমিকরা। মাসকয়েক ধরে তা নিয়েই চলছিল অশান্তি। এ বার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণে শুক্রবার খড়্গপুরের বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের একটি মেটাল কেবিন প্রস্তুতকারী কারখানায় কর্মবিরতি পালন করলেন স্থায়ী শ্রমিকেরা। ঠিকা শ্রমিকেরাও কাজে যোগ দিতে পারেনি বলে অভিযোগ। ফলে বন্ধ রইল কারখানার উৎপাদন!
মাস খানেক ধরেই এই কারখানার স্থায়ী শ্রমিকদের বেতন বাড়ানোর দাবিতে অশান্তি চলছিল। বারবার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেও স্থায়ী শ্রমিকেরা সন্তুষ্ট হননি। বৃহস্পতিবার থেকে অশান্তি চরমে পৌঁছয়। কর্মবিরতিতে নামেন স্থায়ী শ্রমিকেরা। ওই দিন রাতেই স্থায়ী শ্রমিকদের আন্দোলনে কারখানা ছাড়তে শুরু করেন স্থায়ীকর্মী থেকে ঠিকা শ্রমিকেরা। এ দিন সকালে তাঁদের কেউ কাজে যোগ দিতে পারেনি। অভিযোগ, গেটের বাইরে থেকেই সমস্ত কর্মী ও ঠিকা শ্রমিকদের কার্যত তাড়িয়ে দেন স্থায়ী শ্রমিকেরা। এর জেরেই বন্ধ হয়ে যায় কারখানার উৎপাদন। এ দিন কারখানায় পুলিশ পৌঁছলেও স্থায়ী শ্রমিকেরা বাকি কর্মী ও ঠিকা শ্রমিকদের তাড়ানোর অভিযোগ অস্বীকার করেন। পরে স্থায়ী শ্রমিকদের ডেকে পাঠান উপ-শ্রম কমিশনার। দুপুরে খড়্গপুরে শ্রম দফতরের অফিসে হয় বৈঠক। এর পরে উপ-শ্রম কমিশনার প্রসেনজিৎ কুণ্ডু বলেন, “বেতন বৃদ্ধির যে দাবি রয়েছে তা নিয়ে আগামী মঙ্গলবার কারখানা কর্তৃপক্ষ, স্থায়ী শ্রমিকদের নিয়ে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডেকেছি। তবে তার আগে এভাবে উৎপাদন বন্ধ করলে আখেরে নিজেদের ক্ষতি বলে স্থায়ী শ্রমিকদের বুঝিয়েছি। ওঁরা তাতে আশ্বস্ত হয়ে আজ, শনিবার থেকে কাজে যোগ দেবে বলে জানিয়েছে।”
গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে এই বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকের একটি বহুজাতিক সংস্থার ভারী যন্ত্রশিল্পের কারখানার অনুসারী শিল্প হিসাবে রয়েছে এই কারখানা। এই মুহূর্তে কারখানার স্থায়ী শ্রমিক রয়েছেন ৩৪জন। এছাড়াও রয়েছেন প্রায় ৪০জন স্থায়ীকর্মী ও প্রায় ১০১জন ঠিকাশ্রমিক। তিন বছর পরে এ বার স্থায়ী শ্রমিকেরা দাবি সনদ পেশ করে ১৫হাজার টাকা থেকে বেতন বাড়িয়ে ২৪হাজার টাকা দাবি করে।
বহু আলোচনার পরে কর্তৃপক্ষ একটি শর্তে ১৮ হাজার ৭০০ টাকা বেতন দেওয়ার কথা জানায়। সেই শর্ত হল— প্রতি মাসে ২০০টি মেটাল কেবিন তৈরি করলে তবেই মিলছে ১৮ হাজার ৭০০ টাকা। এতে ক্ষুব্ধ কারখানার স্থায়ী শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক আফসর আলি বলেন, “আমরা যেভাবে কাজ করি তাতে মাসে ২০৮টি কেবিন তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু গত পাঁচবছরে মাত্র তিন মাস আমরা ২০০টির বেশি কেবিন তৈরি করেছি। আমাদের সংস্থা এত অর্ডার দিতেই পারে না। তাই শর্ত প্রত্যাহারের দাবিতে কর্মবিরতি পালন করছি।”
কর্মবিরতি ঘিরেই উত্তেজনা ছড়িয়েছে। শ্রমিক ঠিকাদার সংস্থার মালিক শেখ ফরিউদ্দিন বলেন, “আমাদের শ্রমিকেরা কারখানায় ঢুকতে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দিয়েছেন স্থায়ী শ্রমিকেরা। এমনকি স্থায়ীকর্মীরাও কারখানায় ঢুকতে পারেননি।” যদিও স্থায়ী শ্রমিক সংগঠনের পক্ষে আফসর আলি বলেন, “আমরা কাউকে বাধা দিইনি। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী আমরা কাজ না করলে ঠিকা শ্রমিকেরা কাজ করতে পারবেন না। তাই ঠিকা শ্রমিকেরা নিজেরাই ফিরে গিয়েছেন।” গোটা বিষয়টি নিয়ে বেজায় ক্ষুব্ধ কারখানার মালিকপক্ষ। সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর দীপক গোয়েল বলেন, “আমরা বেতন বৃদ্ধিতে যে শর্ত দিয়েছি তাতে বেতন যেমন চারশো টাকা কমতে পারে তেমন বাড়তেও পারে। কাজ না হলে বেতন বাড়াব কীভাবে? ওঁরা সেসব না বুঝে কারখানা থেকে সকলকে তাড়িয়ে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে লক-আউট ঘোষণায় বাধ্য হব।”