দিঘার সমুদ্র সৈকত।
সৈকতে শহর দিঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির কাজ চলছে। সেই মন্দিরের অতিরিক্ত নির্মাণের জন্য হোটেল নির্মাণকারী একটি সংস্থাকে পূর্বের লিজ় দেওয়া জমি ফেরত চেয়েছিল প্রশাসন। ওই সংস্থাকেই এবার বিকল্প জমি দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। যদিও সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে, তারা এ ব্যাপারে এখনও কিছু জানে না।
পুরীর সম উচ্চতা বিশিষ্ট জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে দিঘার সৈকতে। এ বছর এপ্রিলে মন্দির উদ্বোধন করার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। রাজ্য সরকারের এই ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বানানো নিয়ে বিস্তর সমালোচনা হয়েছে বিরোধীদের তরফে। তবে রাজ্য সরকারের তরফে দাবি করা হয়েছে, নিউ দিঘায় রেল স্টেশনের পাশে মন্দিরের পাশাপাশি, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে জগন্নাথ সেবাধাম ও সংস্কৃতিচর্চা কেন্দ্রও বানানো হচ্ছে। এর জন্য ২২ একর জমি দরকার ছিল। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ ২০ একর জমি দিয়েছে। বাকি জায়গা রেল কর্তৃপক্ষের হওয়ায়, তা মেলেনি। ২০২২ সালের মার্চে জগন্নাথ মন্দির নির্মাণ কাজের সূচনা করেছিলেন স্থানীয় বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী অখিল গিরি। আপাতত মন্দিরের প্রাচীর দেওয়ার দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। হিডকোর তরফে মন্দিরের নকশাও প্রকাশ করা হয়েছে।
জগন্নাথ মন্দির ছাড়াও আরও কিছু ভবন নির্মাণের কাজ বাকি। সে জন্য একটি বেসরকারি সংস্থার কাছে জমি চাওয়া হয়েছে। দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ সূত্রের খবর, ভগীব্রহ্মপুর মৌজায় ওই সংস্থাকে লিজ়ে তিন একর জমি দিয়েছিল তারা। সে জন্য তিন কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা তারা নিয়েছিল। এখন রাজ্য সরকারের নিজস্ব প্রকল্প জগন্নাথ ধাম সংস্কৃতি কেন্দ্রের জন্য ওই বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে সেই জমি ফের নেওয়া হয়েছে। এর বদলে বিকল্প হিসাবে নিউ দিঘায় ‘বি ওয়ান সেক্টরে’ সংস্থাকে জমি দেওয়ার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিসভায়। সেখানে পর্ষদের নিজস্ব ৪৩.৮৭ কাঠা জমি রয়েছে। একই চুক্তিতে ওই সংস্থাকে সেখানে ৩২ কাঠা জমি দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
পর্ষদ সূত্রের খবর, গত ২৭ ডিসেম্বর রাজ্য মন্ত্রিসভার ৫১তম বৈঠক ছিল। সেখানে দিঘায় নির্মীয়মান জগন্নাথ মন্দিরের অতিরিক্ত কাজের জন্য এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে লিজ় বাবদ জমি ফিরিয়ে নেওয়া এবং তার পরিবর্তে বিকল্প জমি দেওয়ারটি প্রস্তাব ওঠে। তাতে রাজ্য মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে বলে খবর। এর ভিত্তিতে গত ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রিসভার সচিবালয় থেকে রাজ্যের অতিরিক্ত সচিবকে (চিঠির মেমো নম্বর: সিএবি (ডি) ৮৬৪) জানানো হয়। এরপর গত ৫ জানুয়ারি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তনবীর আফজল, দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদ এবং নগরোন্নয়ন দফতরকে এ নিয়ে জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য প্রশাসনের এক আধিকারিক বলছেন, ‘‘একটি সংস্থার কাছ থেকে নির্মীয়মান জগন্নাথ মন্দিরের পাশে তিন একর জায়গা নেওয়া হচ্ছে। সেখানে সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের অতিরিক্ত নির্মাণ কাজ করা হবে। বিনিময়ে তাকে সমবাজার মূল্যের জমি দেওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে।’’ যদিও ওই সংস্থার কর্ণধার নিত্যহরি কুণ্ডু বলছেন, ‘‘এ ধরনের কোনও কিছুই জানি না।’’ এ ব্যাপারে জানতে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক তানবীর আফজলের সঙ্গে মেসেজে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি।