Baro Pahar Jhargram

‘উপেক্ষিত’ বড় পাহাড়কে পর্যটনে জোড়ার উদ্যোগ

এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও চান, প্রচারে আসুক নব্য প্রস্তর যুগের বড় পাহাড়। বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর ঢোকার আগেই সাতবাঁকি গ্রাম থেকে উঁচু পাহাড়টি দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বেলপাহাড়ি শেষ আপডেট: ১৯ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৪০
Share:

বেলপাহাড়ির বড় পাহাড়। নিজস্ব চিত্র।

অবিভক্ত মেদিনীপুরের সর্বোচ্চ পাহাড় কোনটি? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে থমকাবেন অনেকেই! পাহাড়টি রয়েছে ঝাড়গ্রাম জেলায়। ঝাড়খণ্ড রাজ্যের সীমানাবর্তী ৩৭০ মিটার উঁচু ওই পাহাড়ের নাম ‘বড় পাহাড়’। কাঁকড়াঝোরের পাহাড় শ্রেণির ওই সর্বোচ্চ পাহাড়ের উল্লেখ রয়েছে কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের লেখাতেও। ঝাড়গ্রামে পর্যটনের প্রসার বাড়লেও আজও উপেক্ষিত এই বড় পাহাড়— এমনই দাবি স্থানীয়দের! এমন পরিস্থিতিতে অজস্র টিয়াপাখি, পদ্ম-শালুকে ভরা টলটলে ঝিল, সবুজ উপত্যকা, প্রাচীন আদিম মানবের গুহা সমৃদ্ধ বড় পাহাড়কে পর্যটন মানচিত্রে শামিল করতে উদ্যোগী হওয়ার আশ্বাস দিয়েছে বেলপাহাড়ি ব্লক প্রশাসন।

Advertisement

এলাকার পর্যটন ব্যবসায়ীরাও চান, প্রচারে আসুক নব্য প্রস্তর যুগের বড় পাহাড়। বেলপাহাড়ির কাঁকড়াঝোর ঢোকার আগেই সাতবাঁকি গ্রাম থেকে উঁচু পাহাড়টি দেখা যায়। আমলাশোল যাওয়ার রাস্তায় আরও স্পষ্ট ভাবে দেখা মিলবে এই পাহাড়ের। পাহাড়টির বিস্তার আমলাশোল থেকে আমঝর্না গ্রাম পর্যন্ত। দুই গ্রামের দক্ষিণে রয়েছে পাহাড়টি। পায়ে হেঁটে প্রাকৃতিক ‘ট্রেকিং রুট’ রয়েছে। কিছু পাহাড়-প্রেমী সেখানে শীতের সময় ট্রেক করতে আসেন। পাহাড়ের খাঁজপথে চড়াই পেরিয়ে অপরপ্রান্তে উতরাইয়ে রয়েছে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মাকুলি জঙ্গল ও লকাইসিনি পাহাড়। তবে বাংলার বড় পাহাড়ের আকর্ষণ হল পাহাড়ি ঢালু সবুজ ভূমি। যেটিকে স্থানীয়রা সবুজ উপত্যকা নাম দিয়েছেন।

জানা গেল, প্রাকৃতিক জংলি ঘাসের চাদরে ঢাকা ঢেউ খেলানো সবুজ ওই উপত্যকাটি ১২ মাসই সবুজ থাকে। বিকেল-সন্ধ্যায় বড় পাহাড়ের উপত্যকায় বহু টিয়াপাখি দেখা হয়। আমঝর্না-আমলাশলের মাঝে ওই পাহাড়ের কোলে প্রাকৃতিক জলাশয়ে ফুটে থাকে পদ্ম-শালুক। বেলপাহাড়ি টুরিজ়ম অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র বিধান দেবনাথ বলছেন, ‘‘ঝাড়গ্রাম জেলার সবচেয়ে সুন্দরতম নিসর্গ রয়েছে বড় পাহাড়ে। জেলার সর্বোচ্চ ৩৭০ মিটার উঁচু পাহাড়টি প্রচারের আড়ালে। এখন কিছু কিছু আগ্রহী পর্যটককে আমরা সেখানে নিয়ে যাচ্ছি। তবে বড় পাহাড়ের সম্পর্কে এখনও অনেকেই জানেন না। বড় পাহাড়কে প্রচারে নিয়ে আসা প্রয়োজন।’’

Advertisement

কাঁকড়াঝোর, আমলাশোল ও আমঝর্না গ্রামে মোট ১৪টি হোম-স্টে হয়েছে। সেখানে যে সব পর্যটক থাকেন, তাঁরাও প্রচারের অভাবে বড় পাহাড়ের দিকে যান না। প্রত্নতত্ত্ববিদ্‌ অশোক ঘোষ, পরেশচন্দ্র দাশগুপ্ত, রাজ্যের প্রাক্তন প্রত্নবস্তু সহায়ক বিশ্বনাথ সামন্ত, গবেষক তারাপদ সাঁতরার লেখা থেকে জানা যায়, ১৯৭৮ সালে এই পাহাড়ের পাদদেশে মিলেছিল নব্যপ্রস্তর যুগের তীরের ফলা, হাত কুঠার ও তুরপুন। যা বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুরাতাত্ত্বিক সংগ্রহশালায় রয়েছে। আমলাশোলের বন্দিরাম মুড়া, লক্ষ্মীকান্ত মুড়া হোম-স্টে ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। দু’জনেই জানাচ্ছেন, এলাকায় পর্যটকরা আসেন। তাদের বড় পাহাড়ের সম্পর্কে জানানো হয়। কিন্তু পাহাড়টির প্রচার না থাকায় পর্যটকরা আগ্রহী নন। যাঁরা যান, তাঁরা অবশ্য মুগ্ধ হন। এই প্রসঙ্গে বেলপাহাড়ির বিডিও সুমন ঘোষ বলছেন, ‘‘পর্যটন মানচিত্রে বড় পাহাড়কে শামিল করানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement