প্রতীকী ছবি।
বেশ কিছু দিন আগে থেকেই তাঁর কাছে প্রস্তাব ছিল তৃণমূলের সর্বভারতীয় এক নেতার সঙ্গে আলোচনায় বসার। আলোচনায় বসতে না কি রাজিই ছিলেন তিনি। তাঁর কাছে প্রস্তাব ছিল কলকাতায় ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে ওই আলোচনা করার। তবে ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে গিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে না কি গোড়ায় গররাজিই ছিলেন তিনি। তিনি বিজেপির তারকা জনপ্রতিনিধি। তাঁর নির্বাচনী কেন্দ্র পশ্চিম মেদিনীপুরেই। ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে যেতে কেন গররাজি ছিলেন তিনি? সূত্রের খবর, তাঁর আশঙ্কা ছিল, তিনি ওখানে গেলেই সে খবর মুহূর্তে চাউর হয়ে যাবে। সকলে জেনে গেলে সে ক্ষেত্রে তাঁর নিজের দলের কাছে তাঁকে অস্বস্তিতে পড়তে হবে। তাঁকে না কি আশ্বস্ত করা হয়েছিল এই বলে যে, যাতে কেউ কিছু জানতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করা হবে!
ওই আলোচনা মঙ্গলবারই হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। ঘটনাচক্রে, বিজেপির দুই বিধায়ক দলবদল করতে পারেন বলে জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছে ওই দিন সন্ধ্যা থেকেই। ওই দিন দুপুরে না কি ক্যামাক স্ট্রিটে গিয়েছিলেন ওই দুই বিধায়ক। তৃণমূলের সর্বভারতীয় এক নেতার সঙ্গে তাঁদের বৈঠকও হয়েছে। যদিও শাসক দলের তরফে ওই দুই বিধায়কের নাম জানানো হয়নি। ওই বৈঠকের ব্যাপারেও কিছু জানানো হয়নি। সপ্তাহ তিনেক হল খড়্গপুরে পুরপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তৃণমূলের প্রদীপ সরকার। রেলশহরের নতুন পুরপ্রধান কে হবেন, সে নাম এখনও ঘোষণা করেনি তৃণমূল। দলের এক সূত্রে খবর, শীঘ্রই ফুলবদলের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই না কি তাড়াহুড়ো করা হচ্ছে না ওই নাম ঘোষণায়। পদ্মফুল থেকে জোড়াফুল শিবিরে আসতে পারেন এক জনপ্রতিনিধি। মঙ্গলবারের পরে এ সম্ভাবনা না কি আরও উজ্জ্বল হয়েছে। জানা যাচ্ছে, পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে বিজেপির যে জনপ্রতিনিধি ওই দিন ক্যামাক স্ট্রিটে গিয়েছিলেন, তিনি এক সময়ে তৃণমূলেরই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। পরে বিজেপিতে এসেছিলেন।
গত মাসে পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথিতে এসে জনসভা করেছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সভায় অভিষেককে বলতে শোনা গিয়েছিল, ‘‘আমি একটু ছোট্ট করে দরজাটা খুলতে চাই। ছোট্ট করে! ছোট্ট করে দরজাটা একবার খোলা যাক (এ বার)।’’ খড়্গপুরের বিজেপি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায় কাউন্সিলরও। তাঁর দলবদল নিয়েও যে জল্পনা চালু রয়েছে, সেটা অজানা নয় হিরণেরও। তাঁকে একাধিকবার বলতেও শোনা গিয়েছে, ‘তৃণমূলে ফিরে যেতে চাইলে, তৃণমূল থেকে এসেছিলাম কেন? চোরেদের প্রভাব প্রচণ্ড বেড়ে গিয়েছে। সেই জন্যই তো তৃণমূল থেকে সরে এসেছিলাম।’’
বিজেপির এক তারকা জনপ্রতিনিধি না কি তৃণমূলে আসবেন? তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুরের কো- অর্ডিনেটর অজিত মাইতির দাবি, ‘‘আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না।’’ দলের মেদিনীপুর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, ‘‘আমার কাছে এমন কোনও খবরই নেই।’’ সম্প্রতি মেদিনীপুরে এসে এক প্রশ্নের জবাবে বিধায়ক জুন মালিয়া শুনিয়েছেন, ‘‘হিরণ আমার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পুরনো কলিগ।’’ হিরণ কি তৃণমূলে আসতে পারেন? জুনের জবাব ছিল, ‘‘পুরোটাই দলীয় ব্যাপার। দল থেকে যদি কাউকে দলে নেওয়া হয়, সব সময়ে তাঁকে স্বাগত জানাব।’’
বিজেপির এক সূত্রে খবর, হিরণ এখন পশ্চিমবঙ্গেই নেই। তিনি চলে গিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরে। এক গ্লোবাল সামিটে অংশ নিতে। আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই সামিটে তাঁর বক্তৃতা করার কথা। ওই সূত্রের দাবি, মঙ্গলবার থেকেই ওই বিধায়ক মধ্যপ্রদেশে রয়েছেন। একাধিক মহল মনে করাচ্ছে, কলকাতা থেকে আকাশপথে ইন্দোর পৌঁছতে ঘন্টা তিনেক সময় লাগে। কলকাতা থেকে বিকেলে বেরিয়ে রাতে সেখানে পৌঁছনো অসম্ভব নয়। জেলা বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাসেরও দাবি, ‘‘হিরণ কোনওভাবেই দলবদল করছেন না। ও সব জল্পনাই। তৃণমূলের লোকেরা অপপ্রচার চালাচ্ছে।’’