ফাইল চিত্র।
৯ অগস্ট, ২০২০। ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের বৈঠক। সেখানে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, জেলাস্তরে সাংগঠনিক বৈঠকে ছত্রধর মাহাতোকে ডাকতেই হবে। জেলার সাংগঠনিক বিষয়ে ছত্রধরের মতামতও নিতে হবে।
২৯ অক্টোবর,২০২০। প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার তথা ঝাড়গ্রামের বিধায়ক সুকুমার হাঁসদার মরদেহ নিয়ে ঝাড়গ্রামে এসেছিলেন পার্থ। অন্য নেতা-নেত্রীরা পার্থের সঙ্গে দেখা করলেও মহাসচিবের সঙ্গে ছত্রধরের দেখা হয়নি।
২ নভেম্বর, ২০২০। স্ত্রী নিয়তির সঙ্গে ছত্রধর গিয়েছিলেন কলকাতায় পার্থের বাড়িতে। ছত্রধরদের সঙ্গে দেখা হয়নি পার্থের।
তিনটি পৃথক ঘটনা। পার্থ-ছত্রধরের মোলাকাত না হওয়া হতেও পারে নেহাতই ঘটনাচক্র। তবু ডালাপালা মেলছে জল্পনা। তবে কি ছত্রধরকে এড়িয়ে যাচ্ছেন পার্থ? তৃণমূল মহাসচিবের ব্যাখ্যা, সোমবার ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তাই ছত্রধরেরা গেলেও দেখা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু শাসকদলের একাংশের মধ্যে শুরু হয়েছে আলোচনা। দ্বিধা কাটছে না নেতৃত্বের। ফের এনআইএ ছত্রধরদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করায় বেড়েছে সেই দ্বিধা। পার্থ-ছত্রধরের দেখা না হওয়া সঙ্গে এর যোগসূত্র থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। যদিও ছত্রধর বলছেন, ‘‘সোমবার শিশু অধিকার সুরক্ষা আয়োগের দফতরে নিয়তিকে (স্ত্রী) নিয়ে গিয়েছিলাম। আয়োগের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব বুঝে নিতে গিয়েছিল নিয়তি। যাওয়ার পথে পার্থদার বাড়িতে দেখা করতে গিয়েছিলাম। উনি বোধহয় অন্য কর্মসূচিতে ব্যস্ত ছিলেন। তাই দেখা হয়নি। এসব নিয়ে জল্পনার কোনও প্রশ্ন নেই।’’
গত ৯ অগস্টের বৈঠকের পর জেলার প্রায় সব দলীয় কর্মসূচিতেই ছত্রধরকে দেখা গিয়েছে। জেলার সাংগঠনিক রদবদলের ক্ষেত্রে ছত্রধর চেয়েছিলেন, তাঁর প্রস্তাবিত তালিকা অনুযায়ী রদবদল করা হোক। কিন্তু ছত্রধরের প্রস্তাব মানেননি মহাসচিব। সেপ্টেম্বরের গোড়ায় জেলার বিভিন্ন ব্লকের প্রস্তাবিত প্রাথমিক তালিকা ফাঁস হয়ে যায়। তাতে দেখা যায় ছত্রধরের মনোনীত কারও নাম নেই। সূত্রের খবর, এরপরে রাজ্য তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তরে নালিশ জানান ছত্রধর। শেষ পর্যন্ত ঝাড়গ্রাম ব্লক সভাপতি হন ছত্রধরের এক সময়ের পুরনো সঙ্গী নরেন মাহাতো। লালগড় ব্লক যুব সভাপতি পদ থেকে তন্ময় রায়কে সরিয়ে ছত্রধরের ঘনিষ্ঠ রাজু হাঁসদাকে নতুন ব্লক যুব সভাপতি করা হয়। তারপর থেকেই পার্থের সঙ্গে ছত্রধরের শীতল সম্পর্ক নিয়ে দলের অন্দরে কানাঘুষো চলতে থাকে।
প্রয়াত সুকুমারের বাড়িতে দেহ পৌঁছে দিয়ে পার্থ জেলাশাসককে নিয়ে দুবরাজপুর গ্রামে সুকুমারের অন্তেষ্টিস্থল (যদিও সেখানে পরদিন অন্তেষ্টি হয়নি। অন্তেষ্টি হয় জারালাটায়) পরিদর্শনে যান। পার্থের অনুপস্থিতিতে ছত্রধর এসে সুকুমারের মরদেহে শ্রদ্ধা জানিয়ে চলে যান। রাতে দুবরাজপুর থেকে ফিরে পার্থ আবার ঝাড়গ্রাম শহরে সুকুমারের বাড়িতে এসে তাঁর ছেলে ও দুই জেলার নেতা-নেত্রীদের সঙ্গে কথা বলে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দেন।
দূরত্ব বৃদ্ধি নয়। নেহাতই ঘটনাচক্র। বলছেন ছত্রধর। বলছেন পার্থও। তবে কটাক্ষা করতে ছাড়ছে না বিজেপি।