মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র।
আবার বাড়ল পুজোর অনুদান। এক ধাক্কায় ১৫ হাজার। সঙ্গে যোগ হয়েছে বিদ্যুতের ছাড়। পুজোর কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুদানে স্বাভাবিক ভাবেই খুশি জেলার পুজো কমিটিগুলো। কিন্তু কেন্দ্রীয় বাজেটের দিনই মমতার ওই ঘোষণা শুনে মূল্যবৃদ্ধির আগুনে দিশাহারা মধ্যবিত্তের প্রশ্ন, এই ছাড় বা অনুদানের কোটি কোটি টাকা তাঁদের করের টাকা নষ্ট করা নয় কি? আবার বিরোধীদের দাবি, নির্বাচনের সময় তৃণমূল সমর্থিত ক্লাবগুলির একটা অংশ কার্যত শাসকদলের হয়ে কাজ করে, তাই ভোটে ভাল ফলের জন্য অনুদানের মূল্য বাড়িয়ে ক্লাবগুলিকে খুশি রাখা হচ্ছে।
মঙ্গলবার বিকেলে কলকাতার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে দুর্গাপুজো কমিটির উদ্যোক্তা এবং প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে একটি বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি ব্লকেও চলে ভার্চুয়াল কনফারেন্স। সেখানে মমতা জানিয়েছেন, এবার দুর্গা পুজোর জন্য ক্লাবগুলিকে ৮৫ হাজার করে দেওযা হবে। আগামী বছর তা ১ লক্ষ পর্যন্ত করা হবে। পাশাপাশি, তিনি এও ঘোষণা করেন, ফায়ার লাইসেন্স মুকুব করে দেওয়া হবে। বিদ্যুতের মাসুলেও ৭৫ শতাংশ ছাড় দেওয়ার জন্য সিইএসই এবং রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন পর্ষদকে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
গত বছর এই অনুদান ছিল ৭০ হাজার টাকা। এই নয়া অনুদানে পূর্ব মেদিনীপুর এবার অতিরিক্ত এক কোটি ৮০ লক্ষ টাকা পাবে। রাজ্য সরকারের এই সিদ্ধান্ত খুশি দুর্গা পুজো কমিটি। কাঁথির পুর প্রতিনিধি তথা একটি পুজো ক্লাবের কর্মকর্তা অতনু গিরি বলেন, ‘‘দুর্গা পুজো এবার আরও সুন্দরভাবে পুজো পরিচালনা করতে যাবে।’’ জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তম বারিক বলছেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী চাইছেন রাজ্যে নতুন সংস্কৃতির প্রসার ঘটুক। ধর্ম যার যার, উৎসব সকলের।’’
এই অনুদানের পিছনে আলাদা অঙ্ক দেখছে বিরোধীরা। এবার লোকসভা ভোটে রাজ্যে বিপুল সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। রাজনৈতিক মহলের মতে, সেই জয়ের পিছনে ক্লাবগুলির কিছু হলেও অবদান রয়েছে। ওই প্রসঙ্গ টেনে দক্ষিণ কাঁথির বিজেপি বিধায়ক অরূপ কুমার দাস বলছেন, ‘‘ক্লাবগুলি তো কার্যত শাসকদলের ভোট মেশিন। এখন পুজোর অনুদানের মাধ্যমে তাদের খুশি করছেন তৃণমূল নেত্রী।’’ আগামী বছর অনুদান ১ লক্ষ করার ঘোষণায় তাঁর কটাক্ষ, ‘‘২০২৬ সালে বিধানসভা ভোট রয়েছে। তাই আরও খুশি করা হবে ক্লাবগুলিকে।’’
এ দিনই বাজেট পেশ হয়েছে। সেখানে মূল্যবৃদ্ধি রোখা নিয়ে তেমন দিশা নেই। কর ছাড় নিয়েও তেমন খুশি নন করাদাতা। এখন পুজোয় বিদ্যুতের ছাড় দেওয়ায় তাঁদের প্রশ্ন, বিদ্যুৎ সরবরাহ সংস্থা কি নিজেদের ক্ষতি করে ছাড় দেবে? সে ক্ষেত্রে সরকারকেই জনতার করের টাকায় তা মেটাতে হবে। সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, ‘‘এই সব দান-খয়রাতি চলছে। অথচ মূল্যবৃদ্ধিতে নীরব কেন্দ্র, রাজ্য। মানুষের কপালে শুধুই দুর্ভোগ।’’