‘দাদার অনুগামী’ বিধায়করা কি থাকবেন!
Suvendu Adhikari

নজর মমতার সভায়

দল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে মমতার সভায় এই জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও জেলায় শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের নেতাদের অনেকেই কর্মী-সমর্থকদের বাসে ও বিভিন্ন গাড়িতে চাপিয়ে সভায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০০:১৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

শুভেন্দু অধিকারীকে নিয়ে তৃণমূলে জট কাটার আগেই আজ মেদিনীপুরে জনসভা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মন্ত্রিসভা থেকে শুভেন্দুর পদত্যাগের পর তাঁর তৃণমূল ছাড়ার জল্পনার অবসান দূরঅস্ত। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে শুরু করেছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্ব। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় শুভেন্দুর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তৃণমূলের নন্দীগ্রাম-১ ব্লক সভাপতি মেঘনাদ পাল এবং ভগবানপুর-২ ব্লক সভাপতি মানব পড়ুয়াকে সরিয়ে নতুন ব্লক সভাপতি নিযুক্ত করা হয়েছে। শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ নন্দকুমার ও হলদিয়া ব্লক তৃণমূল সভাপতিকেও সরানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এমন অবস্থায় জেলা তৃণমূলে ‘দিদির অনুগামী’ ও ‘দাদার অনুগামী’ শিবির বিভাজনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। সেই আবহেই আজ, সোমবার মেদিনীপুরে মমতার সভায় শুভেন্দু অনুগামী তৃণমূল নেতা-কর্মীরা যোগ দেন কিনা তা নিয়ে কৌতূহল রাজনৈতিক মহলে। নজর রখছে তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বও।

Advertisement

দলীয় ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পূর্ব মেদিনীপুরে ১৬ জন বিধায়কের মধ্যে তৃণমূলের ১২ জন রয়েছেন। এগরার তৃণমূল বিধায়ক সমরেশ দাসের মৃত্যু হয়েছে কয়েক মাস আগে। ১২ জন বিধায়কের মধ্যে শুভেন্দু অধিকারী রয়েছেন। বাকি ১১ জন বিধায়কের মধ্যে খেজুরির বিধায়ক রণজিৎ মণ্ডল ও ময়নার বিধায়ক সংগ্রাম দোলই-সহ কয়েকজন শুভেন্দু ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত হলেও তাঁদের দাবি তাঁরা তৃণমূলেই রয়েছেন। দল ও স্থানীয় সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুরে মমতার সভায় এই জেলা থেকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয় নেতাদের কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তা সত্ত্বেও জেলায় শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের নেতাদের অনেকেই কর্মী-সমর্থকদের বাসে ও বিভিন্ন গাড়িতে চাপিয়ে সভায় নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। তমলুকের পুরপ্রশাসক রবীন্দ্রনাথ সেন, ‘‘প্রশাসক বোর্ডের সদস্য দীপেন্দ্রনারায়ণ রায় ও জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি দিব্যেন্দু রায়-সহ শুভেন্দু বিরোধী শিবিরের নেতা সহ প্রায় এক হাজার দলীয় কর্মী-সমর্থক জনসভা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। রবিবার পুরসভার সভাঘরে এই নিয়ে বৈঠকও হয়েছে।’’ দীপেন্দ্রনারায়ণ বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সভায় দলীয় সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য দলীয়ভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়নি। তবে দলের কর্মী-সমর্থকদের অনেকেই সভায় যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তাই আমরা বাস ও ছোট গাড়িতে করে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি।’’ শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শরৎ মেট্যা বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সভায় দলের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা ৩টি বাস ও কয়েকটি গাড়ির ব্যবস্থা করেছি।’’ রামনগরের বিধায়ক তথা তৃণমূলের জেলা কো-অর্ডিনেটর অখিল গিরি অবশ্য বলেন, ‘‘মেদিনীপুরে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে দলের জেলা সভাপতি বলেছেন কিনা জানা নেই। আমরা দলীয় কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে যেতে বলেছি।’’

যদিও পশ্চিম মেদিনীপুরে সোমবার মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। শনিবার রামনগরে দলীয় কর্মসূচি শেষ করে শঙ্করপুরে হোটেলে রাত্রিবাস করেন দিলীপ। রবিবার সকালে সৈকত শহর দিঘায় ‘চায়ে পে চর্চা’ কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। এ দিন মমতার নিয়ে তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘ওই মাঠে প্রধানমন্ত্রী সভা করতে গিয়েছিলেন। ভিড়ের চাপে সভা মঞ্চ ভেঙে যায়। কিন্তু সেখানে মুখ্যমন্ত্রীর সভা করবেন। আবার তাঁর হেলিকপ্টারও সেখানে নামবে। যদি মনে করেন মেদিনীপুরের লোকে হবে না তবে আমরাই লোক পাঠিয়ে দেব। নইলে ফাঁকা মাঠে মুখ্যমন্ত্রীকে সভা করতে দেখতে খারাপ লাগবে। আমরা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।’’

Advertisement

এ দিন সকালে কাঁথি থেকে দেশপ্রাণ ব্লকের চণ্ডীভেটি পর্যন্ত পদযাত্রা করেন দিলীপ সেখানে দেশপ্রাণ বীরেন্দ্রনাথ শাসমলের মূর্তিতে মাল্যদান এবং জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন। পরে চালতি থেকে মুকুন্দপুর পর্যন্ত ‘কিসান পদযাত্রা’ কর্মসূচিতে যোগ দেন তিনি। পরে পটাশপুরে প্রতাপদিঘিতে সভায় মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ নিয়েও কটাক্ষ করেন দিলীপ। তিনি বলেন, ‘‘আমপান, একশো দিনের কাজ, বালি খাদান, পাথর খাদানের সব টাকা কালীঘাটে যাচ্ছে। পুলিশ অনেক কষ্ট করেছে। দিদিমণিকে টাকা তুলে দেওয়া, বিজেপি কর্মীদের মিথ্যে কেস দেওয়া। ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী আসবে। খাকি উর্দি পরা ও সিভিকরা বুথের একশো মিটার দূরে গাছে নীচে বসে চা-চপ খাবে।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement