ফাইল চিত্র।
গাড়ি চড়ে সমুদ্র দেখতে দেখতে দিঘা বেড়াতে যাওয়ার সাধ সকলেরই। তাই উপকূল জুড়ে সমুদ্র তীরবর্তী এলাকার পাশ ঘেঁষে তৈরি হচ্ছে মেরিন ড্রাইভ। কিন্তু সাত বছরেও চালু হল না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের স্বপ্নের এই প্রকল্প। বরং পর পর আমপান ও ইয়াসে বিপর্যস্ত প্রকল্পের কাজ কবে শেষ হবে তা নিয়েই সংশয়
দেখা দিয়েছে।
২০১৫ সালে মেরিন ড্রাইভ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু ইয়াসের ক্ষত সামলে কবে পুরোপুরি মাথা তুলে দাঁড়াবে মেরিন ড্রাইভ, তা জানা নেই কারও। দিঘা থেকে শঙ্করপুর হয়ে তাজপুরের মধ্যে দিয়ে মন্দারমণিকে পাশে রেখে সোজা এই রাস্তা কাঁথির শৌলা পর্যন্ত চলে গিয়েছে। যার দৈর্ঘ্য ২৯ কিলোমিটার। পরবর্তীকালে এই মেরিন ড্রাইভ আরও ঘুরে গিয়ে মিশতে পারে হলদিয়ায়। আপাতত দিঘা থেকে শৌলা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের কাজ অনেকাংশেই শুরু হয়নি। আবার যেখানে যেখানে নির্মাণকাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল, সেখানে রাস্তার হাল শোচনীয়।
শান্তিরঞ্জন দেবনাথ নামে কলকাতার এক পর্যটকদের কথায়, ‘‘মেরিন ড্রাইভ হলে পর্যটনের ক্ষেত্রে অনেকটাই গুরুত্ব বাড়বে এই এলাকার। দিঘা থেকে সোজাসুজি সমুদ্রের পাড় ধরে পৌঁছে যাওয়া যাবে অন্যান্য পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে। সে ক্ষেত্রে লাভবান হবেন পর্যটকরাই।কারণ তাঁরা এক সাথেই মেরিন ড্রাইভ ধরে সমস্ত পর্যটন কেন্দ্রগুলি দেখতে পাবেন।’’ পূজা রায় নামে আর এক পর্যটক জানান, মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ হলে একদিকে যেমন সময় বাঁচবে। তেমন একটা পর্যটন কেন্দ্রে এসে বাকিগুলো উপরি হিসেবে পাওয়া যাবে। কিন্তু এখন যা অবস্থা তাতে কবে এর কাজ শেষ হবে কে জানে।
তাজপুর থেকে শঙ্করপুর পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার মেরিন ড্রাইভের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিল বছর দুয়েক আগেই। তবে আমপান ও তারপর ইয়াস সবকিছু লন্ডভন্ড করে দিয়েছে। গোটা রাস্তাটাই এখন বেহাল।স্থানীয়রা মোটরবাইকে যাতায়াত করতে পারলেও পর্যটকদের গাড়ি যাতায়াত করে না বললেই চলে। শুধু তাই নয়, দাদনপাত্রবাড় থেকে শৌলা পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের রাস্তার কাজও শুরু হয়নি। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, ২৯ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয় দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদকে (ডিএসডিএ)। সে জন্য ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে রাজ্য সরকার। ডিএসডিএ সূত্রের খবর, দিঘা থেকে মন্দারমণি সংলগ্ন দাদনপাত্রবাড় পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভের কাজ শেষ। সেখান থেকে শৌলা পর্যন্ত কাজ বাকি। তার জন্য ৩২ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। পর্যায় ক্রমে সেই বরাদ্দ আরও বেড়েছে। কিন্তু বাস্তবে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারেনি মেরিন ড্রাইভ।
রামনগরের বিধায়ক তথা মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বার বার দিঘায় এসে প্রশাসনিক বৈঠকে মেরিন ড্রাইভের কথা বলেছেন। মেরিন ড্রাইভের মাঝে রয়েছে তিনটি সেতু আর এর জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে প্রায় একশো আশি কোটি টাকা। ইয়াসের তাণ্ডবে বেশ খানিকটা ক্ষতি হয়েছে এই সমস্ত সেতুর। তাছাড়া মেরিন ড্রাইভের রাস্তার কাজ ডিএসডিএর তত্ত্বাবধানে চলছে। আশা করছি এক বছরের মধ্যে সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলতে পারব।’’
যদিও মেরিন ড্রাইভ নিয়ে তৃণমূলকে খোঁচা দিতে ছাড়েননি বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কোনওমতেই সেখানে মেরিন ড্রাইভ তৈরি হতে পারে না জেনেও শুধুমাত্র নিজেদের লোকেদের কোটি কোটি টাকা পাইয়ে দিতে ভুয়ো স্বপ্ন দেখানো হচ্ছে। মেরিন ড্রাইভ করার আগে উপকূলের পরিবেশ বাঁচানোর চেষ্টা করুক রাজ্য সরকার।’’