সৌমেন্দু অধিকারী। নিজস্ব চিত্র।
কলকাতায় পুরভোটের পারদ চড়ছে। অন্যত্র বকেয়া পুরভোটও কয়েক মাসের মধ্যেই হওয়ার কথা। এই আবহেই ‘অধিকারী গড়’ কাঁথির পুরসভার একাধিক উন্নয়নমূলক কাজের নথি যাচাই শুরু করল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। নবান্নর নির্দেশেই বেশ কয়েকটি প্রকল্পে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে এই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রে খবর।
জানা যাচ্ছে, এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জেলাশাসক শ্বেতা আগরওয়াল এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) মানবকুমার সিংঘলের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছে। পাশাপাশি পুরসভায় নজরদারির জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। উল্লেখ্য, যে সময়ে প্রকল্পগুলির নথিপত্র ঘেঁটে দেখা হচ্ছে, তখন কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন অধিকারী বাড়ির ছোট ছেলে সৌমেন্দু অধিকারী। তাছাড়া, শুভেন্দু অধিকারী পরিবহণমন্ত্রী থাকাকালীন কাঁথি পুরসভাকে হাই-মাস্ট পথবাতি বসানোর জন্য ওই দফতর যে অর্থ বরাদ্দ করেছিন, সেখানেও অনিয়ম রয়েছে কিনা তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। শনিবার কাঁথি শহরের বিভিন্ন এলাকায় জেলা প্রশাসন এবং পুলিশের প্রতিনিধি দল তদন্তের কাজে ঘুরে বেড়িয়েছে। বিভিন্ন ওয়ার্ডে হাই-মাস্ট পথবাতি র সংখ্যা নির্ধারণ, চিহ্নিতকরণ চলেছে। জেলাশাসক পূর্ণেন্দু মাজি বলেন, ‘‘পুরসভার কাজে অনিয়মের অভিযোগ এসেছিল। তাই তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।’’
এর আগেও কাঁথি পুরসভার গুদাম থেকে সরকারি ত্রাণের ত্রিপল সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু এবং তাঁর ছোট ভাই সৌমেন্দুর বিরুদ্ধে। হাই কোর্টের নির্দেশে সেই মামলার তদন্ত আপাতত স্থগিত রয়েছে। তা ছাড়া, নিজের প্রাক্তন দেহরক্ষী অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় নন্দীগ্রামের বিধায়কের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে যে মামলা হয়েছিল, তাতেও রক্ষাকবচ পেয়েছেন শুভেন্দু। এ বার পুরভোটের আগে দুর্নীতির তদন্তে রাজনৈতিক অভিসন্ধি দেখছে বিজেপি। সৌমেন্দু এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে না চাইলেও বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি অনুপ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘যে সময়ের দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে, তখন শুভেন্দু এবং সৌমেন্দু দুজনেই তৃণমূলের জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁরা বিজেপিতে আসার পর থেকেই রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার পরিকল্পনা করছে শাসকদল।’’ অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের কাঁথি সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণ মাইতি বলছেন, ‘‘নির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই তদন্ত হচ্ছে। এতে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কিছু নেই। আর অন্যায় না করলে ভয় পাওয়ারও কোনও কারণ নেই।’’
পুরসভা ও প্রশাসন সূত্রে খবর, শুভেন্দু মন্ত্রী থাকাকালীন পরিবহণ দফতর থেকে কাঁথি শহরে বেশ কিছু পথবাতি এবং হাই-মাস্ট আলো বসানোর জন্য অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল। টেন্ডারের তুলনায় কম সংখ্যক পথবাতি বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, ‘গ্রিন সিটি মিশন’ প্রকল্পে সৌন্দর্যায়ন না করেই টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। শুক্রবার জেলা পুলিশ এবং প্রশাসনের যে তদন্ত কমিটি পুরসভায় এসেছিল, তারা এই দুই অভিযোগ সম্পর্কিত যাবতীয় নথি দেখতে চায়। পুরসভার কয়েকজন আধিকারিক ও ইঞ্জিনিয়ারকে জিজ্ঞাসাবাদও করে। পরে নথিপত্র বাজেয়াপ্ত করা হয়। কাঁথি পুরসভার প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান হরিসাধন দাস অধিকারী মানছেন, ‘‘অতিরিক্ত জেলাশাসক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দল এসেছি। ওঁরা কিছু নথি চেয়েছিলেন। পুরসভার পক্ষ থেকে সবরকম সহযোগিতা
করা হয়েছে।’’
গত বছর জুলাইয়ে তৃণমূল পরিচালিত কাঁথি পুরসভার মেয়াদ ফুরোয়। পুর-প্রশাসক করা হয়েছিল সৌমেন্দুকেই। তবে গত ডিসেম্বরে শুভেন্দু বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পরই সৌমেন্দুকে ওই পদ থেকে সরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। এরপর সৌমেন্দুও বিজেপিতে যোগ দেন।