প্রতীকী ছবি।
পানীয় জলের সমস্যা কাঁথি শহরে বহু দিনের পুরনো ‘অসুখ’। কিন্তু সেই ‘অসুখ’ কোনও রাজনৈতিক দলই পুরোপুরি সারাতে পারেনি বলে অভিযোগ পুরবাসীর। একটু গরম পড়লেই পুর এলাকার প্রায় সব ওয়ার্ডেই পানীয় জলের কলের সামনে পড়ে লম্বা লাইন।
জল সমস্যা অজানা নয় রাজনৈতিক দলগুলির কাছে। ২০০৯ সালে কাঁথির জওহরলাল নেহেরু জাতীয় শহর পুনর্নবীকরণ মিশন প্রকল্পের জন্যে যে জলপ্রকল্প করা হয়েছিল, তা ছিল ১৯টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য। প্রকল্পটির কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। ওই সময় ওয়ার্ডগুলিতে জনসংখ্যা ছিল ৮০ হাজারের মতো। পরে আরও কাঁথি পুরসভায় আরও দু’টি ওয়ার্ড বেড়েছে। জনসংখ্যা বেড়ে হয়েছে দু’লক্ষের কাছাকাছি। স্বাভাবিক ভাবেই পুরনো প্রকল্পে এত বিপুল সংখ্যার বাসিন্দার জলের চাহিদা পূরণ সম্ভব নয়।
বর্তমানে কাঁথি পুর এলাকায় প্রতিদিন গড়ে ২০ মিলিয়ন লিটার পানীয় জলের প্রয়োজন হয়। আগে কাঁথি-১ ব্লকের ডাউকি এবং ফরিদপুরের দু’টি জলাধার থেকে ওই পানীয় জল সরবরাহ হত। তবে সে দুটি প্রকল্প এখন চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এখন মূলত, দেশপ্রাণ ব্লকের বসন্তিয়া এবং কাঁথি-৩ ব্লকের দেবেন্দ্র পঞ্চায়েত এলাকা থেকে পাইপ লাইনের মাধ্যমে শহরের এসে পৌঁছায় পানীয় জল। এছাড়া শহর এলাকায় অন্য বড় কোনও প্রকল্প গড়ে ওঠেনি।
স্থানীয় সূত্রের খবর, শহরের বেনামুড়ি, আঠিলাগড়ি, পদ্মপুখুরিয়া, শেরপুরের এমন বিভিন্ন পানীয় জলের সমস্যা বাড়ছে। নলবাহিত পানীয় জল পরিষেবা শীতকালে স্বাভাবিক থাকলেও, ফেব্রুয়ারির শুরুতে সামান্য গরম পড়লেই উঁচু এলাকাগুলিতে বাড়িতে জল সমস্যা শুরু হয়। ওই সমস্যা সমাধানে অমরুদ প্রকল্পের অনুমোদন চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন পুরসভা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। আপাতত জন স্বাস্থ্য দফতরের উদ্যোগে কয়েকটি এলাকায় ট্যাপ বসানো হয়েছে। তবে সেই জলের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে স্থানীয়দের মধ্যে।
কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তথা বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার অন্যতম সাধারণ সম্পাদক সৌমেন্দু অধিকারীর দাবি, তাঁর চেয়ারম্যান থাকার সময়ে বাড়ি বাড়ি পানীয় জল প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছিল ইউপিএ পরিচালিত কেন্দ্রীয় সরকার। তারপর পর্যায়ক্রমে পাঁচ হাজার বাসিন্দার বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তবে ভূগর্ভস্থ জল ক্রমশ কমতে থাকায় খানিকটা সমস্যা থেকে গিয়েছে।
বাড়ি বাড়ি পানীয় জল প্রকল্পের অন্তর্ভুক্ত হতে শহরের বাসিন্দাদের কাছে ১৩ হাজার ৭০০ টাকা করে নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছিল এক সময়। সে সময় পুরসভা অধিকারী পরিবারের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে অভিযোগ তৃণমূলের। এ প্রসঙ্গে কাঁথি পুরসভা আরেক প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মাইতি বলেন, ‘‘প্রশাসক বোর্ড পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার জন্য আগের তুলনায় দু’হাজার টাকা করে পুরকর কমিয়েছে। তাছাড়া আমরাও চেয়েছিলাম হলদিয়ার মত কাঁথিতে আমরুদ প্রকল্প চালু করতে। তবে অনুমোদন মেলেনি।’’