প্রতীকী ছবি।
করোনার চোখ রাঙানি এখনও থামেনি। দুর্গাপুজোতেও মণ্ডপে প্রতিমা দর্শন নিয়ে ছিল হাইকোর্টের কড়া নির্দেশ। দুর্গা পুজো পেরিয়ে আসছে কালীপুজো। কিন্তু করোনা বিধি ভাঙা যেন অভ্যাসে পরিণত হয়ে গিয়েছে আমজনতা থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বের। তমলুকে একাধিক ক্লাবের পুজোয় বলিউড এবং টলিউডের শিল্পীদের নিয়ে টানা কয়েকদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। ওই সব ক্লাবগুলির কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন শাসকদলের নেতারাও।
করোনা পর্বের আগে পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা সদর তমলুকে দুর্গাপুজোর চেয়ে কালীপুজোয় জাঁকজমক বেশি দেখা যেত। শহরে বড়-ছোট মিলিয়ে প্রায় শতাধিক কালীপুজো হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে কয়েকটি বিগ বাজেটের পুজো। থিমের মণ্ডপসজ্জা, প্রতিমা, আলোকসজ্জা ছাড়াও বলিউড এবং টলিউটের শিল্পীদের এনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন বেশ কয়েকটি পুজোর উদ্যোক্তারা। তা দেখতে শহরের বাসিন্দারা ছাড়াও জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রচুর দর্শকের ভিড়ও জমে।
তমলুকের হাসপাতাল মোড়ে ফাইভ স্টার ক্লাব, বিদ্রোহী সঙ্ঘ, স্টেডিয়াম গেটে কিশোর সঙ্ঘ, বাদামতলায় উত্তরায়ণ, শালগেছিয়ায় অমর সঙ্ঘ, রাজদূত ক্লাব, দক্ষিণচড়া শঙ্করআড়ায় রিভার প্লেট ক্লাব, নিমতলায় সপ্তরথী, পুরসভা অফিসের কাছে নবীন সঙ্ঘের পুজো হয় বড় বাজেটের। এবারও নানা থিমের মণ্ডপসজ্জা হচ্ছে। ফাইভ স্টার ক্লাবের পুজোর মণ্ডপসজ্জা করছেন রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। ওই ক্লাবের সম্পাদক হলেন তমলুক শহর তৃণমূল সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া।
ক্লাব সূত্রের খবর, পুজোয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য বলিউডের শিল্পীদের বুক করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানও কয়েকদিন ধরে চলার পরিকল্পনা রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেখানে প্রচুর জনসমাগমের আশঙ্কা করা হচ্ছে। বলিউড়ের শিল্পীদের বুকিংয়ের কথা স্বীকার করে চঞ্চলের অবশ্য দাবি, ‘‘থিমের মণ্ডপ করে পুজো হচ্ছে। শিল্পীদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তবে প্রশাসনের তরফে ওই
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার অনুমতি মিললে, তবেই তা হবে।’’
শালগেছিয়ায় অমর সঙ্ঘের কালীপুজোর এবার ৬৫ বর্ষে পড়েছে। তারাপীঠ মন্দিরের আদলে মণ্ডপ এবং প্রতিমা তৈরি করা হচ্ছে। পুজোর পাশাপাশি কলকাতার এবং স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে পুজোর বাজেট প্রায় ছ’লক্ষ টাকা। ক্লাবের সম্পাদক তথা তৃণমূল নেতা মনোজ হালদার বলেন, ‘‘এবার পুজোর বাজেট বেশি। পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন দিনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতার শিল্পীদের বুকিং করা হয়েছে। তবে প্রশাসন অনুমতি দিলেই অনুষ্ঠান করা হবে। অনুমতি না দিলে তা বাতিল
করা হবে।’’
ভিড় যাতে না হয়, সে জন্য বারবার সতর্ক করতে চিকিৎসকেরা। দুর্গাপুজোয় হাইকোর্ট মণ্ডপে ‘নো এন্ট্রি’ জ়োন করেছিল। কিন্তু কালী পুজোয় তমলুকের কয়েকটি ক্লাব যেন স্বেচ্ছায় ভিড় এবং জমায়েতের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অভিযোগ, তাতে কার্যত মদত দিচ্ছেন রাজনৈতিক নেতৃত্ব। আমজনতার প্রশ্ন, পুলিশ বা প্রশাসনের অনুমতি না নিয়েই কীভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য শিল্পীদের বুক করা হচ্ছে! তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস অবশ্য বলছেন, ‘‘করোনা সতর্কতা বিধি মেনে কালীপুজোতেও ভিড় এড়াতে খোলামেলা মণ্ডপ করতে হবে। মণ্ডপ প্রাঙ্গণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা যাবে না। তাই অনুষ্ঠান করার জন্য অনুমতিও দেওয়া হবে না। কালীপুজো উদ্যোক্তাদের নিয়ে বৈঠক করে এ বিষয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।’’
অবশ্য সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান ছাড়াও অনেক ক্লাবের পুজোর বাজেট এবার বেশি। শহরের উত্তরায়ণ ক্লাবের কালীপুজোর থিম ‘বেপাত্তা বিবেক’। যাত্রা শিল্পকে তুলে ধরে মণ্ডপসজ্জা করছেন শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যা। মণ্ডপসজ্জার কাজ সবে শুরু হয়েছে। পুজোর বাজেট প্রায় ১৪ লক্ষ টাকা। ক্লাব সম্পাদক প্রহ্লাদ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এক প্রখ্যাত যাত্রা শিল্পীকে দিয়ে পুজোর উদ্বোধনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হচ্ছে না।’’