প্রতীকী ছবি।
ঝাড়গ্রাম: জঙ্গলমহলের প্রাক্তন মাওবাদীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে ঝাড়খণ্ডের মাওবাদীরা। সম্প্রতি লালগড়ে দু’টি মাইন উদ্ধারের ঘটনার তদন্তের সূত্রে এমনই আশঙ্কা করছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। মাইন-মামলায় যুব তৃণমূল কর্মীর নাম জড়ানোয় মাওবাদী-তৃণমূল আঁতাতের অভিযোগে সরব গেরুয়া শিবির।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রের খবর, ওই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শম্ভু হাঁসদা যুব তৃণমূলের সক্রিয় কর্মী। লালগড়ের রামগড় অঞ্চলের শালুকা (পশ্চিম) বুথের যুব তৃণমূল সভাপতি শম্ভু-সহ পাঁচ অভিযুক্ত আগেই একটি মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়ে পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। আজ, সোমবার তাদের ফের ঝাড়গ্রাম আদালতে হাজির করানোর দিন। পুলিশ সূত্রের খবর, মাইন উদ্ধারের মামলায় ওই পাঁচ জনকে যুক্ত করে (শোন অ্যারেস্ট) ফের হেফাজতে নিতে আদালতে আবেদন করা হবে।
৬ নভেম্বর সন্ধ্যায় লালগড় থানার কাঁটাপাহাড়ি অঞ্চলের ধরমপুর চক থেকে ওই পাঁচ যুবককে ধরা হয়। তাদের কাছ থেকে আফিম জাতীয় ১৫ কেজি তরল মাদক বাজেয়াপ্ত করেছিল পুলিশ। ধৃতদের বিরুদ্ধে ‘নারকোটিক ড্রাগস অ্যান্ড সাইকোট্রপিক সাবস্ট্যান্সেস অ্যাক্টে’র ধারায় মামলা রুজু হয়। ধৃতদের মধ্যে শম্ভু হাঁসদা, ধানিরাম সরেন ও মঙ্গল মুর্মুর বাড়ি লালগড়ে। বাকি দুই অভিযুক্ত অমর সরেন ও রাবণ মান্ডি পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনির বাসিন্দা। ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করার সময় শম্ভুর বাড়ির গোয়ালঘর লাগোয়া এলাকায় দু’টি ল্যান্ডমাইন পাওয়া যায়। বুধবার লালগড়ের রামগড় অঞ্চলের বুড়িশোল গ্রাম থেকে মাইন দু’টি পাওয়ার পরে সেখানেই ‘বম্ব ডিসপজ়্যাল স্কোয়াড’ সেগুলি নিষ্ক্রিয় করে। ওই দিনই লালগড় থানায় আসেন রাজ্য পুলিশের আইজি (বাঁকুড়া রেঞ্জ) রাজা রাজশেখরন। শম্ভুকে জেরা করে জানা যায়, মাইন দু’টি কিছুদিন আগে তার কাছে এসেছিল। ঘটনায় বিস্ফোরক মজুত রাখার মামলা রুজু করেছে পুলিশ। ওই মামলায় শম্ভু-সহ পাঁচ জনকেই অভিযুক্ত করা হচ্ছে। জেলা পুলিশ সুপার বিশ্বজিৎ ঘোষ বলছেন, ‘‘কী ভাবে কোথা থেকে ওই মাইন মজুত করা হয়েছিল সেটা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মাইন উদ্ধারের মামলায় তাদের যুক্ত করে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’
তবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শম্ভু-সহ পাঁচ অভিযুক্ত ২০০৯-১০ পর্বে মাওবাদীদের গণ মিলিশিয়া কমিটিতে ছিলেন। তখন তাঁরা বয়সে নেহাতই তরুণ। পরে শম্ভু যুব তৃণমূলের রামগড় অঞ্চলের শালুকা (পশ্চিম) বুথের সভাপতির দায়িত্ব পান। মাইন উদ্ধারের মামলায় যুব তৃণমূল নেতার যোগসাজশের অভিযোগ সম্পর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র দফতরে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সূত্রের খবর, শম্ভু জেরায় পুলিশকে জানিয়েছে, সপ্তাহ দু’য়েক আগে অমর সরেনের মাধ্যমে দু’টি মাইন পেয়েছিল সে। মাইন পোঁতারও পরিকল্পনা ছিল তাদের। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঝাড়খণ্ড থেকে ওই মাইন এসেছিল লালগড়ে। প্রাথমিক জেরায়, শম্ভু অবশ্য জানিয়েছে, মাওবাদী প্যাকেজ পাওয়ার জন্য নিজেকে প্রাক্তন মাওবাদী প্রমাণ করতে সে মাইন রেখেছিল। কিন্তু এই যুক্তি মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। তাঁদের আশঙ্কা, জঙ্গলমহলের প্রাক্তন মাওবাদীদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ করছে ঝাড়খণ্ডে ঘাঁটি গেড়ে থাকা মাওবাদীরা। শম্ভু সহ অভিযুক্তদের মোবাইল ফোনের কল লিস্ট থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে বলে খবর।
ঘটনায় বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অবনী ঘোষের কটাক্ষ, ‘‘মাওবাদীদের হাত ধরে ক্ষমতায় এসেছিল তৃণমূল। সাধারণ মানুষকে সন্ত্রস্ত করে ক্ষমতা ধরে রাখতে ফের মাওবাদীদের হাত ধরে জঙ্গলমহলে অশান্তি পাকানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’ লালগড় ব্লক যুব তৃণমূলের সভাপতি রাজু হাঁসদার অবশ্য দাবি, ‘‘শম্ভু সংগঠনের কেউ নন।’’ তবে লালগড় ব্লক তৃণমূলের সভাপতি শ্যামল মাহাতো বলছেন, ‘‘শম্ভু এক সময়ে বুথ স্তরে কাজ করতেন। পরে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। এখন আর সংগঠনে ছিলেন না।’’